Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়ছে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ বেড়িবাঁধের সিসি ব্লক

দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষের মাঝে আতঙ্ক

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২০, ৬:২৩ পিএম

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে ১৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন দ্বীপরক্ষা বেড়িবাঁধের অন্তত ১০টি স্থানে উদ্ধোধনের আগেই সিসি ব্লক ধসে পড়েছে। এতে করে ওই এলাকার ৪০হাজার মানুষের মাঝে আবারো আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দাবিমতে নকঁশার কিছুটা ত্রুটি থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

নকঁশা পরিবতনের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে বেড়িবাঁধ নির্মান কাজ অব্যাহত রয়েছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণকাজে তড়িৎগড়ি করায় জোয়ারের পানিতে সিসিব্লক গুলো সরে সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি মতো অধিক স্থানে সিসি ব্লকগুলো ধসে পড়ছে।

অভিজ্ঞ জনদের মতে দ্বীপের ১৪৬কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বাঁধের দক্ষিণ পাশের মাঝের পাড়া, দক্ষিণ পাড়ার আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অংশে ডাম্পিং ব্লক কম দেওয়ায় জোয়ারের পানির আঘাতে সিসি ব্লক উদ্ধোধনের আগেই ধসে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে নির্মাণাধীন এ বেড়িবাঁধের টেকসই ও স্থায়ীত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

পাউবো সূত্র জানায়,২০১২ সালের ২২জুলাই শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বেড়িবাঁধের ৬৮নং ফোল্ডারের একাংশ সাগরের জোয়ারের পানির তোড়ে বিলীন হয়ে যায়।

সংস্কারের অভাবে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়িবাঁধ অরক্ষিত হয়ে শত শত পরিবার বসতঘর-দোকানপাট-মসজিদ- মাদ্রাসা ও রাস্তা-ঘাট সাগরে বিলীন হয়ে পড়ে।

দীর্ঘ ভোগান্তির পর অবশেষে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ২ দশমিক ৬৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারে ১০৬ কোটির টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।পরবর্তীতে এ প্রকল্পে আরও ৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়।

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেন নারায়ণগঞ্জের সেনাকান্দায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঠিকাদারী প্রতিষ্টান ডকইয়াড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকস লিমিটেড।এরপর তারা কাজটি সহযোগি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটিএ গ্রুপকে দেন।চলতি ২০২০অথবছরের জুন মাসে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও অদ্যবধি শেষ করা সম্ভব হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ রক্ষার বেড়িবাঁধটি বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষা।

জোয়ারের সময় ঢেউয়ের পানি নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের আছড়ে পড়ছে।পশ্চিমপাড়া, মাঝেরপাড়া থেকে দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারবেড়িবাঁধের সাগরের অংশে দুই রকমের সিসি ব্লক স্থাপিত করা হয়।মাঝের পাড়া থেকে দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত আধা কিলোমিটার এলাকায় গত কয়েকদিনের জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে অন্তত ১০টি স্থানে ব্লক ধসে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ঘর ভিটা হারানো ফজল আহমদ বলেন, গত বছর বেড়িবাধ নিমাণ কাজ শুরু হলে এলাকার শত শত লোকজন আশার আলো দেখতে পেলেও বাঁধে ধসের খবরে আবারো স্থানীয়রা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।

শিক্ষক কলিম উল্লাহ বলেন, এলাকার শত শত পরিবার বসতঘর-দোকানপাট-জমি-জমা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।গত কয়েক বছরের সাতশতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে অন্যত্রে চলে গেছে।

সাবরাং ইউপির ৭নং ওয়াডের সদস্য নুরুল আমিন বলেন, সাত বছর অরক্ষিত থাকার পর বাঁধ নির্মাণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আনন্দ দেখা দিয়েছিল।কিন্তু বাঁধের কাজ শেষ না হতেই জোয়ারের পানিতে যেভাবে সিসি ব্লকগুলো ধসে যাচ্ছে তাতে পুরো দ্বীপের মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এই ভাঙন থেকে রক্ষা করতে হলে এখননি জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক জাহেদ হোসেন বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রথম দিকে কাজগুলো খুব টেকসই ভাবে করতে দেখেছি।কিন্তু দক্ষিণপাড়া অংশে যেখানে সাগরের আগ্রাসন বেশি সেখানে এসে কাজে তাড়াহুড়া করতে দেখা গেছে। তাই জোয়ারের আঘাতে ব্লকগুলো ধসে পড়ছে।


সহযোগী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটিএ গ্রুপের প্রতিনিধি উত্তম কুমার শাখারী বলেন, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এবং পাউবোর নিয়মিত তদারকিতে বাঁধ নির্মাণ কাজ করছে। সেখানে কোনো ধরনের অনিয়মের সুযোগ নেই। তবে জোয়ারের পানিতে সিসি ব্লকগুলো সরে যাচ্ছে- এটা ঠিক। তিন বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেই কাজ শেষ করব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ