পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন বৃহত্তর রংপুর জেলার (৫ জেলা) বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ঘাঘট, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্রের আশপাশের কৃষকরা মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে বীজ সংগ্রহ করে জমিনে আবার ফসল ফলানোর চেষ্টা করছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বন্যার পানি দীর্ঘদিন থাকায় বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জমির লাগানো বীজ পচে গেছে। এখন বীজ সঙ্কটে তারা বিপাকে পড়ে গেছেন। বীজ সংগ্রহের জন্য কেউ কেউ ছুটছেন বগুড়ার জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এ অবস্থায় সরকারের কাছে বীজ সহায়তা চাচ্ছেন।
তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ঘাঘট, করতোয়া ও ব্রহ্মপুত্রসহ রংপুর অঞ্চলে বিভিন্ন নদ-নদীর ৫১৪ কিলোমিটার অববাহিকার বিস্তৃর্ণ জমিতে বন্যার প্রভাব পড়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসেবে রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আমন, আউশ, পাট, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৭৩ কোটি টাকার। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দুই লাখ কৃষক। তবে এই পরিসংখ্যান আরও বেশি হবে বলে মনে করছেন বানভাসি ও ক্ষতিগ্রস্তরা।
চলতি মৌসুমের গেল দুই দফার বন্যায় রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন পানি কমতে শুরু হওয়ায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে জেগে উঠেছে বন্যার ক্ষত। কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো এখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনলেও বীজ সঙ্কটে দিশেহারা। আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তাই রয়েছেন বেশির ভাগ কৃষক।
এদিকে বন্যাকবলিত রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকরা চড়া সুদে ঋণ নিয়েও এখন বীজ কিনছেন। কিন্তু প্রান্তিক কৃষকরা আমনসহ অন্যান্য ফসলের বীজ পাচ্ছেন না। কোথাও বীজ মিললেও দামে মিলছে না। লাগামহীন দাম আর বীজ সঙ্কট দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বন্যায় ক্ষত-বিক্ষত কৃষকরা সরকারিভাবে দ্রæত কৃষি সহায়তাসহ অন্যান্য প্রণোদনা প্রদানের দাবি করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলা হয়। রংপুরে সিটি কর্পোরেশনের আশপাশের গ্রামীণ জনপদ ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তা নদী বিস্তৃত গঙ্গাচড়ার বিনবিনা, চিলাখাল, বাগেরহাট, চরইচলি, জয়রামওঝা, মটুকপুর, চরবাগডোহরা এলাকায় আমনের বীজতলাসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় অনেক কৃষকের আমন চারা বালুতে ঢেকে গেছে। আবার কোথাও চারা ক্ষেত ভেঙে গেছে। বন্যার পানি কমায় কিছু কৃষক বগুড়া থেকে চারা কিনে রোপণ করলেও বেশিরভাগ কৃষক এখনও চারা লাগাতে পারেনি। রংপুরের পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলার বেশিরভাগ কৃষকের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। মাঠজুড়ে বন্যার ক্ষত। আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তাই সবচেয়ে বেশি। চড়া সুদে ঋণ নিয়েও মিলছে না বীজ। আবার হাতে বীজ মিললেও দাম হয়ে পড়েছে লাগামহীন। অনেকেই বীজের জন্য পাশের জেলা গাইবান্ধা, বগুড়া যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানেও বীজের সঙ্কট প্রকট।
গঙ্গাচড়ার চরবাগডোহরা গ্রামের কৃষক শাহিনুর, আব্দুল লতিফ ও দুলাল মিয়া জানান, বন্যার পানিতে তাদের সব চারা নষ্ট হয়ে গেছে। চারার অভাবে এখনো তারা জমিতে চারা লাগাতে পারেনি। জমি পতিত পরে আছে। পাশের গ্রামের রজব আলী বলেন, ‘রোয়া গারছি, পানিতো খ্যায়া গেইছে। এখন যে গারমো তার কোনো বুদ্দি নাই। এই সময় তো আর বেচনও নাই। এখন জমি পরি থাকপে। দাম দিয়্যাও এ্যলা বীজ মেলে না’।
টেপামধুপুর চরে কথা হয় কৃষক মো. আনারুল ইসলামের সাথে। চলতি মৌসুমের বন্যায় ফসল হারিয়েছেন। চেষ্টা করছেন ধার-দেনা করে আবারো চারা লাগানোর। চোখে মুখে হতাশা নিয়ে এই কৃষক বলেন, ‘লাভের (দাদন) উপর টাকা নিয়্যা আমাক বেচন (বীজ) কিনা লাগবে। কিন্তু বেচন তো পাওয়া যাইতাছে না। যদিও বেচন মেলে দাম অনেক বেশি’।
সরকারি হিসেব মতে, এবারের বন্যায় রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৬৪৪২ দশমিক ৭৭ হেক্টর জমির পাট, ৩৭৮ দশমিক ৫ হেক্টর জমির তিল, ২০৫ হেক্টর জমির মরিচ, ৩০ দশমিক ৬ হেক্টর জমির চিনা বাদাম, ২০.০০ হেক্টর জমির কাউন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার অনুমানিক মূল্য ১৭২ কোটি ৫৪ লাখ ১১ হাজার ৩৮৪ টাকা। দীর্ঘস্থায়ী এই বন্যায় পাঁচ জেলায় এক লাখ ৭২ হাজার ৭৯ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, ফসলের ফলন ও বাজার মূল্য বিবেচনায় এবারের বন্যার প্রথম ধাপে ১০৩ কোটি এবং পরের ধাপে ৬৯ কোটি টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রণোদনার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণে চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য বীজতলার বিশাল কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. সরওয়ারুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের ৩৭ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে শাক ও সবজি বীজ বিতরণের জন্য ১০ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৬৮৫ টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে রংপুর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এই প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ সহায়তা পাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।