Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্ন : দাম্পত্য জীবন কী আল্লাহর বড় নিদর্শন?

মুফতি জাওয়াদ তাহের | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২০, ১২:১০ এএম

উত্তর : ইসলামী রীতি-নীতি অনুযায়ী যুবক-যুবতির মাঝে ইজাব-কবুলের মাধ্যমে যে চিরস্থায়ী সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি হয় তাহলো বিয়ে। পৃথিবীতে সর্ব প্রথম যে আত্মীয়তার বন্ধন সূচনা হয় তা হলো স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন। বাবা আদম আর মা হাওয়ার মাঝে। অন্য কোন আত্মীয় তখন ছিলো না। দুনিয়ায়ও শেষ সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী কেন্দ্রিক থাকে। ছেলে-মেয়ে সবাই যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। জান্নাতের মাঝেও এই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেই অটুট থাকবে।

কোরআনে আল্লাহ তাআলা তার বিভিন্ন সৃষ্টিকে অল্লাহর বড় নিদর্শন বলে আখ্যায়িত করেছেন। স্বভাবত সবার নিকট এগুলো আল্লাহর বড় নিদর্শন মনে হয়। যেমন অল্লাহ তাআলা তার আসমান-জমিন সৃষ্টিকে আল্লাহর বড় নিদর্শন বলেছেন। এমনিভাবে রাতে নিদ্রা যাওয়া,বিশালাকারের পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি এ সব আল্লাহর বড় নিদর্শন। সূরা আস-সূরার ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:‘সমুদ্রে ভাসমান পর্বতসম জাহাজসমূহ তাঁর অন্যতম নিদর্শন’। এগুলো আল্লাহর নিদর্শন যা দেখলে মানুষের ঈমানে তরঙ্গ উঠে। এই নিদর্শনাবলীর মাঝে আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আল্লাহর বড় নিদর্শন বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন এত বড় নিদর্শন কিভাবে হলো যাকে আল্লাহ তাআলা পাহাড় পর্বত,আসমান-জমিন সৃষ্টির সাথে উল্লেখ করেছেন? অন্য কোন আত্মীয়তার বন্ধনকে আল্লাহ বড় নিদর্শনাবলীর মাঝে অন্তর্ভুক্ত করেন নি। চাই সেটা মা-বাবা কিংবা অন্য কোন রক্তের বাঁধন হোক। মহান আল্লাহ স্বামী-স্ত্রী নিয়ে যত আয়াত অবতীর্ণ করেছেন অন্য কোন স্বজন নিয়ে নাযিল করেন নি। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে পরিবারের মূল স্তম্ভ। এদের সম্পর্ক যত মধুর হবে ততই সংসারে সুখ আর শান্তির বাতাস বইবে। এই বৃক্ষের ছায়াতলে থেকে সন্তান সন্ততি আদর্শবান হবে। আর যদি এর ব্যতিক্রম হয় অর্থাৎ তাদের সম্পর্কে চির ধরে তাহলে এর ক্ষতি ও অশান্তির আগুন পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিব। পৃথিবীতে কোন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হয় না, একমাত্র স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন যা একটি কথার মাধ্যমেই ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। একদিকে এই সম্পর্কটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি স্পর্শকাতরও বটে। তাই আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনকে তার বড় নিদর্শনাবলী বলেছেন। সূরা রোমের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন: ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে’।

আয়াতে আল্লাহ তাআলা কয়েকটি শব্দ বলেছেন: এক. “লিতাসকুনু” অর্থ: প্রশান্তি; অর্থাৎ তোমাদের কাছে পৌঁছে পুরুষ শান্তি লাভ করবে। এ কারণেই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের স্বজাতি থেকে আমাদের জন্য স্ত্রীর ব্যবস্থা করেছেন। যাতে আমাদের মধ্যে প্রশান্তি ও সুখ বিরাজ করে। কারণ, প্রত্যেক জীব কেবল স্বজাতির কাছেই নৈকট্য লাভ করে ও শান্তি খুঁজে পায়। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন,“তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। (সূরা আল-আরাফ; ১৮৯)

দুই. “মাওয়াদ্দাহ”এর অর্থ হল স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সুমধুর ভালবাসা। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যেরূপ ভালবাসা সৃষ্টি হয় অনুরূপ ভালবাসা পৃথিবীর অন্য কোন দুই ব্যক্তির মাঝে হয় না। যা আল্লাহর রাসূল তার এক হাদীসে বর্ণনা করেন: হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, দু›জনের পারস্পরিক ভালবাসা স্থাপনের জন্য বিবাহের বিকল্প নেই।(ইবনে মাযাহ: ১৮৪৬)

তিন. “রহমাহ” (মায়া-মমতা) হল এই যে, স্বামী নিজ স্ত্রীকে সর্বপ্রকার সুখ-সুবিধা ও আরাম-আয়েশ দান করে থাকে। অনুরূপ স্ত্রীও নিজের সাধ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী স্বামীর সেবা করে থাকে। মহান আল্লাহ উভয়ের উপরেই সে দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন। বলা বাহুল্য, মানুষ এই শান্তি ও অগাধ প্রেম-ভালোবাসা সেই দাম্পত্যের মাধ্যমেই লাভ করতে পারে যার সম্পর্কের ভিত্তি শরীয়তসম্মত বিবাহের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।

অন্যথায় শরীয়ত-বিরোধী দাম্পত্যের (লিভ টুগেদারের) সম্পর্ককে ইসলাম জোড়া বলে স্বীকার করে না। বরং তাদেরকে ব্যভিচারী আখ্যায়িত করে এবং তাদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান প্রয়োগ করে। আজকাল পাশ্চাত্য সভ্যতার পতাকাবাহী ভোগবিলাসিরা এই নোংরা প্রচেষ্টায় লিপ্ত যে, পাশ্চাত্য সমাজের মত ইসলামী দেশেও বিবাহকে অপ্রয়োজনীয় স্বীকার করে অনুরূপ নারী-পুরুষকে জোড়া, যুগল বা দম্পতি হিসেবে মেনে নেওয়া হোক এবং তাদেরকে ঐ সকল অধিকার দেওয়া ও মেনে নেওয়া হোক, যে অধিকার একজন শরীয়তসম্মত দম্পতি পেয়ে থাকে! (আল্লাহ তাদেরকে সর্বত্রই ধ্বংস করেন।) (মাআরেফুল কোরআন, কুরতুবী)
একটি ভালোবাসাময় সুখী বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সবার মধ্যে যে গুণটি থাকা প্রয়োজন, তা হলো আন্তরিকতা। আন্তরিক বলতে যিনি হবেন বিনীত, নমনীয়, বিশ্বাসযোগ্য, ভালো স্বভাব, সহযোগী মনোভাবাপন্ন, ক্ষমাশীল, উদার ও ধৈর্যশীল।

একজন সুন্দর মনের ও সুন্দর গুণের স্ত্রী সংসারকে তাঁর নিজের আলোয় আলোকিত করে তুলতে পারেন। সাজিয়ে তুলতে পারেন সংসার জীবনকে সুখের স্বর্গীয় বাগানের মতো করে। তবে এই কাজের জন্য দরকার প্রেমিক স্বামীর স্ত্রীর প্রতি ঐকান্তিক মায়া-মমতা ও সুগভীর ভালোবাসা। এই ভালোবাসা থাকলে দেখবেন, বিবাহিত জীবনে সুখ কাকে বলে।
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি জাওয়াদ তাহের



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আল্লাহর-নিদর্শন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ