পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমানতকারীদের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা মেরে পি কে হালদার অধরা। দেশে থাকতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বা তাকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেই। এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের ব্যাংক সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা। আর ভুক্তভোগীরা তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
ব্যাংকের বিপুল পরিমান টাকা লুটকারী পিকে হালদার দেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় যাওয়ার পরও টনক নড়েনি বাংলাদেশ ব্যাংকের। অথচ পিকে হালদারসহ ঘটনায় জড়িত ২০ জন যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে হাইকোর্ট আগেই সতর্ক করেছিলেন, দিয়েছিলেন পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশও। এরপরও পিকে হালদার কিভাবে কানাডা পালালেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন আদালতসহ আমানতকারীরা।
আলোচিত পিকে হালদার দেশ থেকে পালাবার পর দুর্নীতি নিয়ে এখন বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে তলব করেই যাচ্ছে। অথচ একসময় সবার চোখের সামনেই সব ধরনের অনিয়ম করেছে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা এ কাজে তাকে সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে গেছেন। তার দখল করা পিপলস লিজিং দেউলিয়া পর্যায়ে যাওয়ার পরেই সবার টনক নড়ে। এর আগে প্রশান্ত কুমার হালদার ব্যাংকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করেছে, সে প্রশ্নও তুলেছেন সর্বোচ্চ আদালত। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স থাকতে কিভাবে পিকে হালদার বিদেশে পালিয়ে গেল সে প্রশ্ন রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এমনকি হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত আনা কঠিন হলেও অসম্ভব নয় বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
আলোচিত পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার এবং আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়ার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী এবং এই খাত সংশ্লিষ্টরা। যদিও পি কে হালদারকে এখনই ফেরত আনা না গেলেও এবার ফেঁসে যাচ্ছেন তার অপকর্মের সহযোগীরা। অনেকেই পথ খুঁজছেন কিভাবে দেশ থেকে পালাবেন। ইতোমধ্যে ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিএফআইইউ থেকে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। দুদক ও বিএফআইইউ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিএফআইইউ’র বিশেষ এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পি কে হালদার যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা বিদেশ পাচার করেছিলেন, তার মধ্যে ২৮ কোটি টাকা পেয়েছেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম সাহিদ রেজা। আর মেঘনা ব্যাংকের দুই পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন ও অলোক কুমার দাশ এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা পেয়েছেন ৩৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বিএফআইইউ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠিয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।
তবে সরকার উদ্যোগ নিলে পি কে হালদার এবং পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌসুলি ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। তিনি বলেছেন, পি কে হালদারের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের। তার সকল কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে দুদকসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। আমরা যতদূর জানতে পেরেছি পিকে হালদার টাকা সম্ভবত কানাডায় নিয়ে গেছেন। আমাদের দেশের সরকারের সঙ্গে কানাডা সরকারের মিউচুয়াল লিগ্যাল এসিসটেন্স রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় আমাদের সরকার প্রস্তাব দিলে কানাডা সরকার সহযোগিতা করবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আইএলএফএসএলের লুটের মধ্যে ৪৪৬ কোটি টাকা জমা হয় রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে, ২২২ কোটি টাকা যায় পি কে হালাদার ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক এশিয়ার ধানমন্ডি শাখার হিসাবে, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় যায় ১২০ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় ১৮৪ কোটি টাকা এবং ওয়ান ব্যাংকের স্টেশন রোড শাখার গ্রাহক জেকে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে যায় ৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া এ কে এম সাহিদ রেজার প্রতিষ্ঠানে গেছে ১০৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, মালিকানা ও ঋণের বেশির ভাগ শেয়ার অন্যদের নামে হলেও ঘুরেফিরে আসল মালিক পি কে হালদারই। নিজেকে আড়ালে রাখতে এমন কৌশল নেন তিনি। নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে পি কে হালদার গড়ে তুলেছেন একাধিক প্রতিষ্ঠান, যার বেশির ভাগই কাগুজে। তার দখল করা অন্য তিন প্রতিষ্ঠান হলো পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এই তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানও গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
সূত্র মতে, পি কে হালদার অর্থ লোপাট করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছেন। নিয়েছেন অনেকের সহযোগীতা। অনেকেই আবার লোভের বশবর্তী হয়ে তার এই অনিয়মে সহায়তা করেছেন। তবে সবাই ফেসে যাচ্ছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক অলোক কুমার দাশ এসটিএল নামের ওয়্যারহাউস বিক্রি করেছেন। নথিপত্রে ক্রেতা সোহেল মুরাদ, কিন্তু টাকা এসেছে বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী আরেকজনের পক্ষেই পি কে হালদার এই অর্থ দিয়েছেন। এভাবেই একের পর এক অপকর্ম করেছেন পি কে হালদার।
সূত্র মতে, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর অস্তিত্বহীন ও নামমাত্র গড়ে ওঠা চারটি প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর কাগুজে কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বের করা হয়। মালিকানা দখল ও টাকা লুণ্ঠনে প্রধান ভ‚মিকায় ছিলেন এই পি কে হালদার। এই অর্থের বড় অংশই নিজে আত্মসাৎ করেছেন, কিছু অংশ ভাগ-বাঁটোয়ারা করেছেন। তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন। এখন পি কে হালদার পলাতক, আর আইএলএফএসএলের আমানতকারীরা টাকা ফেরত পেতে দরজায় দরজায় ঘুরছেন।
সূত্র মতে, শাখাওয়াত হোসেন ও অলোক কুমার দাশ দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক বন্ধু। দুজনে মিলে গড়ে তুলেছেন প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, স্পিনিং, ইনস্যুরেন্সসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে চতুর্থ প্রজন্মের মেঘনা ব্যাংকের পরিচালকও হয়েছেন। পি কে হালদারের লুটের ৩৪ কোটি টাকার সুবিধাভোগীও এই দুই ব্যবসায়িক বন্ধু ও তাঁদের পরিবার।
পি কে হালদার দখল করার পর এমটিবি মেরিন লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। কাগুজে এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পূর্ণিমা রানী হালদার, তিনি আইএলএফএসএলের পরিচালক স্বপন কুমার মিস্ত্রীর স্ত্রী।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ঋণের ১৪ কোটি টাকা জমা হয় অলোক কুমার দাশ ও তার স্ত্রী অনিতা দাশের প্যারামাউন্ট অ্যাগ্রো এবং তাঁদের পুত্র রঙ্গন দাশের হিসাবে। ওই টাকা দিয়ে মেঘনা ব্যাংকের স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রাখা হয় শাখাওয়াত হোসেনের পুত্র সাদাব হোসেনের নামে।
আবার কোলোসিন লিমিটেডের ৮০ কোটি টাকা ঋণের ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা জমা হয় প্যারামাউন্ট স্পিনিংয়ের হিসাবে। এর পরিচালক অলোক কুমার দাশ, অনিতা দাশ ও শাখাওয়াত হোসেন। মুন এন্টারপ্রাইজের ৮৩ কোটি টাকা ঋণের ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা জমা হয় প্যারামাউন্ট স্পিনিং এবং তাঁদের পুত্র রঞ্জন দাশের মার্কেন্টাইল, মেঘনা ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের হিসাবে। আর কনিকা এন্টারপ্রাইজের ঋণের ১ কোটি টাকা জমা হয় সাদাব হোসেনের হিসাবে।
এমটিবি মেরিন লিমিটেডের ৬০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন হয় ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি। এই ঋণ হিসাব থেকে এ কে এম সাহিদ রেজার মালিকানাধীন পদ্মা ওয়েভিং, পদ্মা বিøচিং, ফ্যাশন প্লাসের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে থাকা হিসাবে সাড়ে ৫ কোটি টাকা জমা হয়।
উইন্টেল ইন্টারন্যাশনালের ৬৮ কোটি টাকা ঋণের ১৪ কোটি টাকাও যায় সাহিদ রেজার ৪ প্রতিষ্ঠানে। গ্রিনলাইন ডেভেলপমেন্টের ৬৪ কোটি টাকা ঋণের ৭ কোটি টাকা জমা হয় পদ্মা ওয়েভিং ও ফ্যাশন প্লাসের হিসাবে। এভাবে পি কে হালদারের কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ঋণের ২৮ কোটি টাকা জমা হয় সাহিদ রেজার বিভিন্ন হিসাবে।
সূত্র মতে, সাহিদ রেজা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ৯৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ১০টি লিজিং কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড, বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফাস্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড এবং এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এর বিপরীতে সুবিধা হিসেবে তিনি হয় ক্যাশ টাকা অন্যথায় নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে নেয়া এই ঋণের পরিমানও ৮৮৩ কোটি টাকার বেশি। ওই সময়ে সাহিদ রেজা কয়েকটি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানি থেকে ৮৮৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। যে সব প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি ঋণ নিয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- অ্যালুর এ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যাশন প্লাস লিমিটেড, পদ্মা বিøচিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড, পদ্মা ওয়েভিং লিমিটেড, রেজা ফেব্রিকস লিমিটেড এবং রেজা ফ্যাশন লিমিটেড।
এ বিষয়ে এ কে এম সাহিদ রেজা ইনকিলাবকে বলেন, আমি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ঋণ নিয়েছি। যা শোধ দিয়ে যাচ্ছি। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি বিন্দুমাত্র কোন অন্যায় আমি করিনি। আমার ব্যাংক হিসাবে শুধু প্রতিষ্ঠানটির ঋণের টাকা জমা হয়েছে। অন্য কোনো চেক জমা হয়নি। এর সব প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।