Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে

অচেনা এ ভাইরাস নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে কনফিডেন্স চলে এসেছে, মৃত্যুর ভয় কমছে। ভ্যাকসিন যত দ্রুত পাওয়া যায় সে চেষ্টা চলছে, যে কোন সময়ে সিদ্ধান্ত। প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতালে র‌্যাব-পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

ইনকিলাবের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক চলমান মহামারি করোনায় দেশের স্বাস্থ্যখাতের নানা বিষয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। আলোচনায় করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি, উদ্যোগ ও নানা বিষয় দৈনিক ইনকিলাবের পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন সিনিয়র রিপোর্টার হাসান সোহেল

সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া ও চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো বলেই আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হার অনেক কম। একই সঙ্গে করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় এখন হাসপাতালে করোনা রোগী কমছে। বাসায় টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েই ভালো হয়ে যাচ্ছে। এটাও স্বাস্থ্যখাতের একটি অন্যতম সাফল্য। বলা হচ্ছে- করোনার সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। যে দেশে হাটতে গেলে গায়ে গায়ে ঘেষা লাগে সেখানে একটি মৃত্যুর তথ্য লুকানোর উপায় নেই।

তাই এই ধরণের কথা আসলে সত্য নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ‘অনেকে বলছে, আক্রান্তদের বয়স কম, রোদ থেকে ভিটামিন-ডি পাচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, এ জন্য আমাদের মৃত্যু কম’ এ বিষয়ে জাহিদ মালেক বলেন, যদি এটাই কারণ হতো তাহলে ভারতে অর্ধ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হতো না। এমনকি অনেক উন্নত দেশ থেকেও করোনার চিকিৎসায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা ও টেলিমেডিসিন সেবায় অনেক সাফল্য এসেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু ভিটামিন ও প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো বলেই সাফল্য নয়। সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে করোনার চিকিৎসায় আমাদের সাফল্য এসেছে। আর তাই মৃত্যুও কম। সুস্থ হওয়ার পরিসংখ্যানও অনেক ভালো। বর্তমানে সুস্থতার হার ৫৮ থেকে ৬০ শতাংশ। যদিও সব হিসাব আসছে না, দ্রæত হিসাব ঠিক করা হচ্ছে। সব হিসাব আসলে সুস্থতার হার আরও বাড়বে।

জাহিদ মালেক দেশের করোনা পরিস্থিতির সামগ্রিক বিষয়ে আলোকপাত করে বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে শুধু কুয়েত-মৈত্রী নিয়েই চিকিৎসা সেবা শুরু হয়। এরপর একে একে কুর্মিটোলা, মুগদা, ঢাকা মেডিকেল এবং শেখ রাসেল গ্রাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল। করোনার প্রকোপ আরও বাড়লে সব হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য বলা হয়। প্রত্যেক জেলায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ২শ’ শয্যা, উপজেলায় ২৫-৫০ শয্যার ব্যবস্থা রাখা হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথম দিকে বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চালু হয়নি। পরে মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্যের কথা বলা হলে আনোয়ার খান, ইস্ট ওয়েস্ট, হলি ফ্যামিলিসহ অনেকেই সেবা দিতে রাজি হয়। পর্যায়ক্রমে ইউনাইটেড, এভারকেয়ার, স্কয়ারসহ এক পর্যায়ে প্রায় সবাই এগিয়ে আসতে শুরু করে। এখন হাসপাতালে করোনা রোগী কমছে এটাও স্বাস্থ্যখাতের একটি অন্যতম সাফল্য। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী পদক্ষেপে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে। যানবাহন (বাস, ট্রেন ও বিমান) চালু হয়েছে। স্কুল-কলেজ খোলার চিন্তা চলছে। নানামুখী পদক্ষেপে গতি ফিরছে অর্থনীতিতে।

রোগী কমার কারণ হিসেবে জাহিদ মালেক বলেন, এখন অনেকইে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। এমনকি লক্ষণ প্রকাশের আগে থেকেই থেকে সবাই সচেতন হচ্ছেন। তারা টেলিমেডিসিন সেবা নিচ্ছেন। করোনার সময়ে এ সেবা অনেক শক্তিশালী হয়েছে। বলা যায়, টেলিমেডিসিন সেবায় দেশ বিপ্লব করেছে। প্রতিদিন জেলা-উপজেলাসহ সারাদেশ থেকে হাজারো রোগী ‘কথা চিকিৎসকের’ পরামর্শ নিচ্ছেন। করোনা বিষয়ে দেশের মানুষের কনফিডেন্স চলে এসেছে, মৃত্যুর ভয় কমছে। সচেতনতার কারণে দ্রুত ভালো হয়ে যাচ্ছে রোগীরা। সে জন্য অনেক ক্ষেত্রে রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। আর এ জন্য হাসপাতালে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ করোনা শয্যা ফাঁকা। ৮৭টি ল্যাবে প্রতিদিন ১২-১৪ হাজার পরীক্ষা হচ্ছে। মানুষ মনে করছে পরীক্ষার কি দরকার। সচেতনতার সাথে টেলিমেডিসিন সেবা নিয়ে বাসায়ই ভালো হয়ে যাওয়া সম্ভব বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাহিদ মালেক বলেন, আগে প্রয়োজন ছাড়াই অনেকে পরীক্ষা করতো। এখন সে ধারা কমেছে। একজন করলে পরিবারের অন্য ৫ জনকে করাচ্ছে না। সচেতনতার সাথে আলাদা থাকছে। তাই পরীক্ষার প্রয়োজনবোধ করছে না। শুধু শুধু পয়সা খরচ করছে না। পাশাপাশি বন্যার কারণেও পরীক্ষা কিছুটা কম হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় দেশে ল্যাব, কিট ও অর্থের কোনো সঙ্কট নেই।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, করোনার প্রকোপ কমে আসায় করোনা ডেডিকেটেড কয়েকটি হাসপাতালকে নন কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হবে। এ মাসের পরেই এ সিদ্ধান্ত আসছে। কারণ অনেক সাধারণ রোগী চিকিৎসা নিতে ভয় পাচ্ছেন। তাই কিছু হাসপাতাল পুরোপুরি সাধারণ রোগীদে জন্য ছেড়ে দেয়া হবে। আর কিছু হাসপাতালে করোনা ও সাধারণ রোগীর দুই চিকিৎসাই রাখা হবে।

বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নের জন্য ১ মাস সময় দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান জনবল দিয়ে সব হাসপাতাল হয়তো এ সময়ে সম্ভব হবে না। জনবল বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে কোনভাবেই নবায়ন কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ না হয়।

বিভিন্ন হাসপাতালে সরেজমিনে পরিদর্শনে যাওয়া, মান উন্নয়ন, মান বজায় রাখার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আগে কোন কিছু ঘটলেই র‌্যাব-পুলিশ নিয়ে যাওয়া হতো। এখন থেকে এটার প্রয়োজন আর হবে না। মানুষ হাসপাতালে সেবার জন্য যায়। দেশে আশাকরি এ পরিস্থিতি আর তৈরি হবে না। প্রয়োজন হলেই কেবল তাদের ডাকা হবে।

ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চীন, রাশিয়া, অক্সফোর্ড, মর্র্ডানাসহ প্রায় ৬টি ভ্যাকসিন বাজারে আসার পর্যায়ে রয়েছে। রাশিয়াতো ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন বাজারজাত শুরু করছে। ভ্যাকসিন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে করা হবে। প্রথম পর্যায়ে যাতে বাংলাদেশ পায় সে জন্য অনুমোদনও নেয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। এরপর বুকিং দেয়া হবে। ভ্যাকসিন যত দ্রæত পাওয়া যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেই র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

করোনার চিকিৎসা পদ্ধতিও বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞরা পরিবর্তন করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও পরিবর্তন করেছে। তারাও একবার বলেছে- বাতাসে করোনা ছড়াচ্ছে, আবার বলছে ছড়ায় না। এই মহামারী সম্পর্কে কেউ জানতো না। পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২শ’ ৬৫ লোকের বসবাস। ঘনবসতিপূর্ণ দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। তারপরও সীমিত জনবল দিয়ে সার্বক্ষণিক প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, অনুপ্রেরণায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে বলেই করোনা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছি। এমনকি কখন কোন হাসাপতালকে করোনার চিকিৎসার জন্য নেয়া হচ্ছে তাও প্রধানমন্ত্রী অবহিত। এছাড়া ডাক্তার-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই এই মহামারীর চিকিৎসায় বাংলাদেশ সাফল্য পেয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক



 

Show all comments
  • AhmEd Sohel ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৭ এএম says : 0
    অনেক দুর এগিয়ে
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Rayhan ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
    আই কিছু কইতান নো আই শুধু ঘুরবার লাই আইসি
    Total Reply(0) Reply
  • Sarkar Azad ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
    হরেক রকম পাগল নিয়া মিলাইছে মেলা........ বাবা তোমার দেশেতে সব পাগলের খেলা....
    Total Reply(0) Reply
  • Aktaruzzaman Aktar Maya ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
    কোর্টে যেমন প্রাইমারির রির্টাট শিক্ষকদের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য নয় ঠিক তেমনি বাংলাদেশ না হয়ে আপনি যদি উন্নত কোন দেশে এই সমস্ত কথা বার্তা বলতেন, তাহলে কখনো আপনার এ সমস্ত অসংলগ্ন কথাবার্তা গ্রহণযোগ্য পেত না।
    Total Reply(0) Reply
  • RK Daloir Khan Arian ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
    আপনাকে কি করে লজ্জা দিলে আপনি লজ্জিত হবেন আমি বুঝিনা।
    Total Reply(0) Reply
  • সেদিন দেখা হয়েছিলো ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
    মূর্খ্য লোকের জন্য সমাজ নষ্ট হয়না, শিক্ষিত লোকের মূর্খ্য অাচরনের জন্যই শুধু সমাজ নয় গোটা দেশ নষ্ট হয়ে যায়.
    Total Reply(0) Reply
  • MH Søyâêêb ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
    এই মধ্য রাতে বিকট শব্দে হাসবো কেমন করে
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Ahmed ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 0
    স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্বাস্থ্যকর কথা শুনতে শুনতে কান পচে গেলো
    Total Reply(0) Reply
  • Nadim ahmed ১৮ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩০ এএম says : 0
    .......... akhono resign korche na kano?
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল্লাহ ১৮ আগস্ট, ২০২০, ৬:৪৩ এএম says : 0
    ওর কোভিড- ১৯ হলে বুঝা যেতো চিকিৎসা ক্ষেত্রে কতদূর এগিয়েছে,আফ্রিকার কোনো জঙ্গলে ওকে রেখে আসলে ভালো হতো,আর ওর মন্ত্রণালয় হতো পশু চিকিৎসা মন্ত্রণালয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rejaul Karim ১৮ আগস্ট, ২০২০, ৯:২০ পিএম says : 0
    স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্য যে ভাবে হওয়ার দরকার সেভাবে হচ্ছে না বরং দেশের মানুষের হাসির খোরাক জোগাচ্ছে।।। উনার মন্ত্রনালয় সম্পর্কে তেমন কোন অভিজ্ঞতা নেই উনার মন্তব্য করা নিয়ে অনেক সমালোচনা ঝড় বইছিল কিন্তুু তার পরও উনার মন্তব্যটি অব্যাহত।।।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ