পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনায় আক্রান্ত ডাক বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) শুধাংশু শেখর ভদ্রের (এসএস ভদ্র) থাকার কথা ছিলো কোয়ারেন্টাইনে। একদিন আগেই শরীরে ধরা পড়েছে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ পজেটিভ। সেই তথ্য গোপন করে তিনি চলে গেছেন গণভবনে।
সাধারণ একটি সার্জিক্যাল মাস্কে মুখ ঢেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সামাজিক দূরত্ব বজায় ছিলো। কিন্তু স্মারকে স্বাক্ষর এবং কথা বলার সুবিধার্থে প্রধানমন্ত্রী ওই মাস্কটি নামিয়ে রাখেন; তখন তার সামনে দন্ডায়মান ছিলেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত এ রোগী। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে করোনা আক্রান্ত এ কর্মকর্তা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেননি বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ১৪ আগস্টের। জাতির জনকের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে উদ্বোধনী খাম, স্মারক ডাক টিকিট এবং ডেটা কার্ড উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে ১৮টি স্ট্যাম্প (প্রতিটি পাঁচ টাকা) সম্বলিত একটি ৯০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প শিটলেট, ১০ টাকা ও ১০০ টাকা মূল্যের ২টি উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকা মূল্যের একটি ডেটা কার্ড অবমুক্ত করেন তিনি। এ উপলক্ষে একটি বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব পুনর্বহাল স্মরণে একটি ১০ টাকার ডাকটিকিট, ১০ টাকা মূল্যের একটি উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকা মূল্যের একটি ডেটা কার্ডও অবমুক্ত করা হয়। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ৬১ বছর পর কর্তৃপক্ষ এক সিদ্ধান্তে ২০১০ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রাবস্থা পুনর্বহাল করে। ছাত্রত্ব পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৪৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে বহিষ্কার করার বিষয়টিকে ‘অগণতান্ত্রিক ও অন্যায্য’ বলে অভিহিত করে। এছাড়া গণহত্যা দিবস ২০২০ (২৫ মার্চ) এবং জাতীয় স্বাধীনতা দিবস ২০২০ (২৬ মার্চ) উপলক্ষে যথাক্রমে দু’টি পৃথক ১০ টাকা মূল্যের ডাক টিকিট, ১০ টাকা মূল্যের দুটি উদ্বোধনী খাম উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও পারিবারিক ছবি সম্বলিত ১০০ স্মারক ডাকটিকিটের একটি বিশেষ অ্যালবাম প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
এর আগে গত ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অবমুক্ত করা ২০ টাকার স্মরণিকা শিট, ১০ টাকার উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকার ডেটা কার্ড প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও বাংলাদেশ ডাকঘরের মহাপরিচালক শুধাংশু শেখর ভদ্র উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে ডাক মহাপরিচালক এসএস ভদ্র করোনা পজেটিভ ছিলেন বলে জানা গেছে। ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্স (আইইডিসিআর)র ল্যাবরেটরি টেস্ট রিপোর্ট (ল্যাব আইডি: ৯৮২০) অনুযায়ী এস.এস.ভদ্র (৫৮) করোনা পজেটিভ। ১৩/০৮/২০২০ তারিখ দেয়া রিপোর্টে ফলাফলে লেখা হয়- চড়ংরঃরাব ভড়ৎ ঝঅজঝ-ঈড়া-২(ঈঙঠওউ-১৯). রাজধানীর ২৭, বেইলি রোডের বাসা থেকে গত ১২ আগস্ট তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রিপোর্টের কমেন্টে লেখা হয়: চষবধংব পড়ৎৎবষধঃব ঈষরহরপধষষু. আইইডিসিআর’ এর পরিচালক এবং ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান রিপোর্টটিতে স্বাক্ষর করেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ইতিমধ্যেই একটি গোয়েন্দা সংস্থা এসএস ভদ্রের করোনা পজেটিভ হওয়ার রিপোর্টর সঠিকতা যাচাই করেছে। রিপোর্টটি যথার্থ বলে প্রতিবেদন দিয়েছে সংস্থাটি।
একজন করোনা রোগী কী করে গণভবনে প্রবেশ করলেন? কী করেই বা প্রধানমন্ত্রীর এতোটা কাছাকাছি পৌঁছে গেলেন- এ প্রশ্নগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার তো কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার ইনকিলাব’কে টেলিফোনে বলেন, কোনো করোনা রোগী গণভবনে প্রবেশ করতে পারেন না। করোনা আছে কি না- সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই গণভবনে ঢুকতে দেয়া হয়। যার কথা বলছেন, তার বিষয়টি আমি আজকেই জানতে পেরেছি। মূলতঃ তিনি তিন জায়গায় করোনা টেস্ট করতে দিয়েছিলেন। দু’জায়গা থেকে নেগেটিভ এসেছে- এক জায়গায় পজেটিভ এসেছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে তাই তাকে চতুর্থবারের মতো টেস্ট করতে বলেছি। মন্ত্রী বলেন, ওই দিন আমি তার পাশেই ছিলাম। কিন্তু কোনো লক্ষণ দেখতে পাইনি। যেহেতু দু’জায়গার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তাই তিনি সেটিই ধরে নিয়েছেন। করোনা পজেটিভের রিপোর্টটি হয়তো তখনও তিনি হাতে পাননি।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে শুধাংশু শেখর ভদ্রর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট নিয়েই তিনি রবি ও সোমবার যথারীতি অফিস করেছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন। গতকাল টেলিফোনে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, ওই কর্মকর্তা নিশ্চয়ই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই সেখানে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি যে করোনা পজেটিভ এ কারণে সেখানে যাওয়া-না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি তার। এ কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য গোপন করে গণভবনে গেছেন। জানি না সেখানে প্রবেশে কী ধরনের প্রটোকল কিংবা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তার প্রবেশ প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন। ঝুঁকিতে ফেলেছেন ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্য কর্মকর্তাদেরও। এটি গণভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এটি কোনো মামুলি বিষয় নয়। দায়-দায়িত্ব নিরূপণে সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আশা করছি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করে বিষয়টির তদন্ত হবে। অবসরপ্রাপ্ত এ সামরিক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো এটাই জানেন যে, তার আশপাশে কোনো করোনা রোগী নেই। অথচ একজন করোনা রোগী আছে। তাছাড়া সব সময় সবার মুখে মাস্ক থাকে না। এদিক থেকে এটি তো ভয়াবহ ব্যাপার!
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম ইনকিলাবকে টেলিফোনে বলেন, যদি তিনটি প্রতিষ্ঠানে কোভিড টেস্ট করানো হয়ে থাকে তাহলে আইইডিসিআর’র রিপোর্টটিই ক্রেডিবল। কারণ তারা ওয়েল ট্রেইনড। অন্যগুলো অতো ট্রেনড নয়। আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করে খুব সতর্কভাবে। তাদের রিপোর্ট এদিক-সেদিক হওয়ার শঙ্কা কম। তিনি বলেন, শরীরে করোনা পজেটিভ ভাইরাস থাকলেও অনেক সময় নেগেটিভ আসতে পারে, যদি সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করা না হয়। অনুষ্ঠানে যারা মাস্ক পরিহিত ছিলেন তারা যে সংক্রমিত হবেনই এমন কথা নয়। তবে এক্সিডেন্ট তো এক্সিডেন্টই। যেহেতু একটি রিপোর্টে পজেটিভ এসেছে তাই তার গণভবনে প্রবেশ করা ঠিক হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।