Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রামুতে গোলাম কাদের হত্যার আসামীরা প্রকাশ্যে, ধরছেনা পুলিশ হুমকি দিচ্ছে বাদীকে

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২০, ৫:২৩ পিএম

রামু কাউয়ারখোপের মনিরঝিল এলাকার হতভাগী জুবাইদা আক্তারের স্বামী হত্যার বিচার মেলেনি এখনো। ৫ মাসেও কোন অগ্রগতি হয়নি মামলার। ঘটনার দিন দুই আসামীকে জনতা ধরে পুলিশের হাতে দিলে তারা এখন কারাগারে।

তবে আরো ৫জন এজাহারভুক্ত আসামী প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে বলে জানা গেছে। তারা বাদীকে মামলা তুলে নিতে হুমকী ধামকী দিচ্ছে এমনটি খবর পাওয়া গেছে। এদিকে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা টাকা ছাড়া কোন কাজ করেন না বলে জানয়িছেন মামলার বাদী জুবাইদা।

জুবাইদা আক্তার বয়স মাত্র ২০ বছর। সুন্দর মলিন চেহারা কৈশোর পার হয়ে সবে যৌবনে পা দিয়েছে। জুবাইদার বাবা মা খুব ধুমধামের সাথে বিয়ে দেয় গত বছর ১৩ জুলাই কাউয়ারখোপের মনিরঝিল ১নং ওয়ার্ড়ের মৃত আব্দুল হাসিমের পুত্র গোলাম কাদের (২৮) এর সাথে।

বিয়ের দিন দুই গ্রামের মানুষকে আতিথিয়তার কমতি ছিলনা। সেদিন যারা বিয়েতে এসেছে তারাও বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে বেশ খুশি হয়েছিল এবং তাদের দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয় সেই দোয়া করেছিল সবাই। বিয়ের পর থেকে তাদের সংসার সুন্দরভাবে চলছিল। কিন্তু নবদম্পতির এই সুখের সংসার শুরু করতে না করতেই জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ২৪ মার্চ খুন হয় গোলাম কাদের।

তার আপন ভাইয়েরা, আপন মামা জেবুল হোসেন ও চাচাতো মামা সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ হোসনসহ এলাকার কিছু কুটক্রী মহল তার জমি দখল নিতে তাকে নির্মমভাবে পিঠিয়ে হত্যা করা হয় বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

স্বামীর বিচার চাইতে নিহত গোলাম কাদের এর স্ত্রী জুবাইদা আক্তার বাদী হয়ে গত ২৬ মার্চ রামু থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৪৫/১১৯।
ঘটনার দিন নিহত গোলাম কাদের এর আপন দুই ভাই আবদুর রহিম (২৫) ও নবী হোসন (২২) কে জনতা পুলিশের হাতে তুলে দিলেও এর পর আর কোন আসামী গ্রেফতার করা হয়নি বলে মামলার বাদী জুবাইদা আক্তার প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

বিধবা জুবাইদা আক্তার জানান, তার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তারা এখন প্রকাশ্যে বাজারে, মহল্লায় ঘুরাফেরা করছে। তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকী দিয়ে আসছে। যদি আমি মামলা তুলে না নিই তা হলে আমাকেও প্রানে মেরে ফেলবে বলে হুমকী দি্েচ্ছ। এমন অবস্থায় সে প্রাণ নাশের আশঙ্কায় আছে। সে বলে, 'তারা আমাকে যে কোন মুহুর্তে হামলা করতে পারে। তাই আমি আইনের আশ্রয় চাই'।

জানা গেছে, মামলা থেকে কয়েকজন আসামীকে বাদ দিতে একটি চক্র মিশন নিয়ে কাজ করছে। তারা বেশ বড় অংকের টাকার বিনিময়ে এই মামলা থেকে রেহায় পেতে জোর তদবির চালাচ্ছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর ইমাম হোসেন প্রতিবেদককে টেলিফোনে জানান, মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় আছে। এই মামলায় দুইজন গ্রেফতার হয়েছে বাকিদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরো বলেন, এটি স্পষ্ট হয়েছে গোলাম কাদেরকে তার আপন ভাই্ একই পিতার পুত্র ওসমান গনি (৪০),আবদুর রহমান (৩০) আবদুর রহিম (২৫) নবী হোসেন (২২) সহ আরো কিছু তাদের সহযোগীদের নিয়ে হত্যা করতে পারে।
তদন্তের মাধ্যমে তা উঠে আসবে বলে মনে করছি। হত্যা মামলা আসামীদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছেনা কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি করোনা আক্রান্ত ছিলাম বিধায় একটু দেরি হয়েছে তবে এখন এই হত্যা মামলা আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।

এদিকে মামলার ব্যাপারে কক্সবাজার সদর সার্কেল (এএসপি) আদিবুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের জন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারিনি। কারণ এতে পুরো থানায় করোনা সংক্রমন হওয়ার সম্ভবনা ছিল। তবে এখন একটু শীথিল হয়েছে। আমরা এই মামলাটি গুরুত সহকারে দেখবো।

মনিরঝিল ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জহির উদ্দীন জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সহোদর ভাইদের মধ্যে এভাবে খুনের ঘটনায় পুরো গ্রামবাসী হতভাগ। এর হত্যার বিচার অচিরেই আমরা এলাকাবাসি চাই।
প্রসংগত গত ২৪ মার্চ (মঙ্গলবার) সকালে উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পশ্চিম মনিরঝিল গ্রামের মৃত, আবদুর রহমান,আবদুর রহিমও নবী হোসন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পার্র্শ্বতী সোনাইছড়ি নন্নাকাটা গ্রামে তাদের সহোদর ভাই গোলাম কাদের (২৮) উপর হামলা করলে সে গুরুতর আহত হয়।

পরে হামলাকারী সহোদর ভাইয়েরা গোলাম কাদেরকে মুমুর্ষ অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার মৃত্যু হলে লাশটি হাসপাতালে রেখেই তারা সেখান থেকে সরে পড়ে।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গোলাম কাদেরের এক ভাই নবী হোসন পাশ্ববর্তী পুর্ব রাজারাকুল গ্রামে ঘোরাফেরা করলে গ্রামবাসীর সন্দেহ হলে তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। তার স্বীকারোক্তিমতে ২৫ মার্চ বুধবার সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়।

গ্রামবাসী গোলাম কাদের খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ত সকলকে আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ