পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই জিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫৩ জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন, সরকারি দলের লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বললে, রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে, সরকারের সমালোচনা করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হচ্ছে। এমনকি যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদের কোনো দুর্নীতি কথা, তাদের কোনো বিবেকবর্জিত কীর্তিকলাপের কথাও যদি সোশ্যাল মিডিয়াতে অথবা প্রিন্টিং মিডিয়াতে প্রকাশ করে তাহলে সেই সাংবাদিক বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) ভার্চুয়াল মাধ্যমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ভয়ে আজ জাতির কণ্ঠ রুদ্ধ। বিএনপি শুরু থেকেই বলে এসেছে এই আইন সংবিধান বিরোধী এবং এটা আইন জনগণের কন্ঠরোধ করার জন্য সরকারের হাতিয়ার। তারা ক্ষমতায় টিকেজ থাকার জন্য এই আইন করেছে। অবিলম্বে এই আইনটি বাতিল করা উচিৎ এবং জনগণের চিন্তা-ভাবনা, তার স্বাধীনতার প্রকাশকে নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাংবাদিকসহ সবাই এটা (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) নিয়ে প্রচÐ সমালোচনা করার পরেও ৯৪ শতাংশ মামলা হয়েছে এই বিতর্কিত ’৫৭ ধারায়। জারি হওয়ার দুই বছরের কম সময়ের মধ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিক্রিয়া বেশ লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠছেন।
এই আইন কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ প্রক্রিয়ারই একটা অংশ। যখনই কোনো সরকার কর্তৃত্ব পরায়ন হয়ে উঠে, স্বৈরাচারী হয়ে উঠে, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র পরিণত করতে চায় তখনই প্রথম আঘাত হানে সংবাদ প্রকাশ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর। একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াকে দমন করা। সেটাই এই সরকার অত্যন্ত পরিকর্পিতভাবে, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে, সচেতনতার সঙ্গে করে চলেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলোর মূল অভিযোগ হলো, ব্যক্তির মানহানি, আক্রমণাত্মক মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন কিংবা রাষ্ট্রের তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ করা, ভাবমূর্তিক্ষুন্ন করা। অথচ এই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা প্রতিনিয়ত কিভাবে বিরোধীদলীয় কিংবা ভিন্নমতাবলম্বীদের সম্মানহানি করছে, কিভাবে আক্রমণাত্মকভাবে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করছে, কিভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এই সরকারের মন্ত্রী-এমপি-আমলা-পুলিশের লুটপাট কিভাবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনামক্ষুন্ন করছে। এ সরকারের নেতাকর্মীদের করোনা সার্টিফিকেট বিক্রির কারণে ইতালিতে বাংলাদেশ থেকে আগত কোন ব্যক্তিকে এখন প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না, নিউ ইয়র্ক টাইমসে নেতিবাচক প্রবন্ধ হয় বাংলাদেশকে নিয়ে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শীর্ষ দেশগুলোতে বাংলাদেশ উঠে আসে শীর্ষে। এসবের জন্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামক্ষুন্নের জন্য তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী কর্মকাÐ বা সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে কি এই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা দÐিত হবেন না বা তাদেরকে দায়ী করা সম্ভব হবে না? সরকার কী কোনো ভাবে দায় এড়াতে পারেন।
২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১২ জন সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইতোমধ্যে সংবাদপত্র, সম্পাদক পরিষদ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে করে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আেইন-২০১৮‘র জন্য সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই কালো আইন বাতিলের দাবি তুলেছে। আমাদের অনেক প্রতিথযশা সম্পাদক যাদের বিরুদ্ধে এই আইন মামলা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে এবং তাদেরকে আদালতে গিয়ে জামিন নিতে হয়েছে।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, যে সমস্ত আইন মানুষের অধিকারকে খর্ব করে, মানুষের স্বাধীনতার চেতনার যে বিষয়গুলো ছিলো বাক স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা সেগুলোকে খর্ব করে, হরণ করে। অবশ্যই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব যদি পাই কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা সেগুলোকে অবশ্যই বাতিল করবো।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে সরকারকে কোনো চিঠি দেবেন কিনা, কোনো কর্মসূচি নেবেন কিনা কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ৫ মাস ধরে কোবিড-১৯ এর কারণে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই কারণে এই মুহুর্তে এই ধরনের কোনো কর্মসূচি যেটা জনসমাবেশ থাকে সেটা আমরা আনিনি। তবে আপনি যেটা বলেছেন যে, সরকারকে চিঠি দেয়া, সরকারকে অবগত করানোর চেষ্টা করা- সেটা তো আমরা এর আগেও করেছি, এখনো আমরা করবো।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ফ্যাসিবাদের চরিত্র হচ্ছে- মনোজগতে ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি করা এবং সেই ভয়ে কোনো কিছু করা। এতে যাদের ওপর আক্রমণ করা হবে তারা ছাড়া বাকীরা ভয় পেয়ে যাবে, কথা বলবে না। এটাই করা হয়েছে ইতোমধ্যেই। মিডিয়াতে যারা এক সময়ে খুব সাহসী উচ্চারণ করতেন এখন কিন্তু তারা থেমে গেছেন। থেমে গেছেন অন্যান্য ঘটনাগুলো দেখে, অন্যান্য সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন-নির্যাতন দেখে। এধরনের ঘটনা যদি দেখে যে একজন সাংবাদিক তার একজন কলিগকে শুধুমাত্র লেখার কারণে তাকে অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। তখন সে স্বাভাবিকভাবে কনট্রোল হয়ে আসে। একই ঘটনা কিন্তু সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রেও, রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রেও, শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও, চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও-সকলের বেলা এটা প্রযোজ্য। আফটার অল তার মনোজগতে এটা শুরু হবে যে, ইটস এ ডেনজারাস থিং, আই কেন নট ডু দিস। আমার ফ্যামিলি এফেক্ট হতে পারে, আমি এফেক্ট হতে পারি- তখন অত্যন্ত ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পৃথিবীতে এমন বেশ কয়েকটা দেশ আছে তারা কিন্তু মনোজগতে আক্রমণটা চালিয়েছে, ইনভেনশনটা সেখানেই হয়েছে। সেটার ওপরে অনেক সাহিত্য আছে, অনেক ছবিও তৈরি হয়েছে, ফিল্মও তৈরি হয়েছে যে, প্রথম আক্রমণটা তারা মনোজগতে করে। একটা খুব ভালো ছবি সত্যজিত রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’। তো সেই যে মগজ ধোলাই। এটা হচ্ছে যে, মগজ ধোলাইয়ের একটা প্রক্রিয়া।
মানবাধিকার সংস্থাসমূহের তথ্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০২০ সালের ২২ জুন পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১০৮ টি। এই সব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪৪ জন, আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন। এই হিসেবে প্রায় ২৫ ভাগ আসামিই হলেন সাংবাদিক। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১০, ফেব্রæয়ারিতে ৯, মার্চে ১৩, এপ্রিলে ২৪, মে‘তে ৩১ এবং জুনের ২২ তারিখ পর্যন্ত ২১টি মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। গত বছর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৬৩টি, ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও আইসিটি অ্যাক্ট মিলিয়ে মামলা হয়েছে ৭১টি। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালে এক বছরে মোট মামলা হয়েছে ৬৩টি। সেখানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই মামলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি- ১০৮টি। তবে বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। কারণ অনেক মামলার খবরই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয় না। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তার খোঁজ পায় না। ফলে তাদের সংখ্যার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।