পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণ আমাদের ওপর নজর রাখছে। আমাদের কাজ দৃশ্যমান। আমরা অবকাঠামো তৈরি করছি। মানুষ অনেক সচেতন। আমাদের গতিবিধি, আচার-আচরণ দেখছে। জনগণের সম্পদ আমরা কীভাবে ব্যবহার করছি তা তারা গভীর নজরে রেখেছে। তাই টাকার ব্যবহার, সময়োপযোগিতা ও পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, রূপপুরের বালিশকান্ড, কৃষি মন্ত্রণালয়ের বটিকান্ড, করোনা মোকাবিলায় সুরক্ষা সামগ্রীর অস্বাভাবিক দাম ধরার ফলে বেশ কয়েকবার বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছিল সরকারকে। সামনের দিনগুলোতে আর যাতে এমন বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে না হয় সেজন্য কঠোর হচ্ছে সরকার। বাজার দর যাচাই বাছাই না করে উন্নয়ন প্রকল্পে কেউ যদি পণ্য ও উপকরণের দাম বেশি ধরে, তাহলে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে। বিদ্যমান যেসব আইন কানুন আছে, তার ওপর ভিত্তি করে শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। এছাড়া প্রকল্প নজরদারিতে আইএমইডিকে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ৩০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের ডেকে এই হুশিয়ারি দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, বাজার দর যাচাই করে তবে পণ্যের দাম নির্ধারন করতে হবে। সভায় আরো জানানো হয়েছে, শুধু কারিগরি ছাড়া এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তারা শিক্ষা সফরের নামে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। গাড়ি কেনাও বন্ধ। ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে যেসব প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে আসবে, সেসব প্রকল্প দেখার ক্ষেত্রে আরো শক্ত হওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও সংস্থা বিভিন্ন উপকরণ ও পণ্যের দাম ধরার ক্ষেত্রে অবশ্যই যাতে বাজারমূল্য যাচাই করে নির্ধারণ করে, সেই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে গতকাল সব সচিবদের নিয়ে বৈঠকে বসেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সেখানেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সাধারণ অর্থনিিত বিভাগের (জিইডি) সচিব ড. শামসুল আলম, ইকোনমিক রিলেশন্স ডিপার্টমেন্ট (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, পানি সম্পদ বিভাগের সচিব কবির বিন আনোয়ার, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. জাকির হোসেন আকন্দ, শামীমা নার্গিস, আবুল কালাম আজাদ, প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, আইএমইডি সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহসহ ৩০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া থেকে শুরু থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত কোথায় কোথায় অসঙ্গতি রয়েছে, তা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে একাধিক সচিব জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়, বেশিরভাগই কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই নেয়া হয়। সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প নেয়ার কারণে পদে পদে জটিলতা তৈরি হয়। দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। অনেক সময় নকশা প্রণয়ন না করে প্রকল্পটি অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ৫০ কোটি টাকার মধ্যে রাখা হয়, যাতে প্রকল্পটি জাতীয় র্অথনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠাতে না হয়। একনেক সভার সভাপতি প্রধানমন্ত্রী। ৫০ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প হলে সেই প্রকল্প পরিকল্পনামন্ত্রী নিজ ক্ষমতাবলে অনুমোদন করতে পারেন।
উপস্থিত একাধিক সচিব জানান, দেশে বস্তুনিষ্ঠতার চেয়ে তদবিরে প্রকল্প নেয়া হয়। বাজার দর যাচাই না করেই প্রকল্পে পণ্য ও সেবার দাম নির্ধারণ করা হয়। ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে একটি প্রকল্পে একজন প্রকল্প পরিচালক থাকার কথা থাকলেও একজন পিডি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব পালন করেন। আর পিডি নিয়োগ হয় কারো পছন্দে; কারো তদবিরে। একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর ওই প্রকল্পের জন্য কেনা যানবাহন পরিবহন পুলে জমা পড়ে না বলেও সভায় জানানো হয়। আবার সাধারণ প্রকৃতির একটি প্রকল্পে পরামর্শকের প্রয়োজন না হলেও সেখানে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। সার্বিকভাবে এসব কারণে উন্নয়ন প্রকল্প সঠিকসময়ে বাস্তবায়ন হয় না। নানা অনিয়ম হয়। সরকারি টাকার অপচয় হয়।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পণ্যের উচ্চ দাম আর মেনে নেয়া যায় না। জনগণের টাকা স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় করতে হবে। যাতে কোনভাবেই নয়ছয় না হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পর্যায়েই ব্যাপক মনিটরিং জোরদার করতে হবে। বিধিবিধান মেনেই তৈরি করতে হবে উন্নয়ন প্রকল্প।
সচিবদের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনগণ আমাদের নজরে রাখছে। মানুষ অনেক সচেতন। আমাদের গতিবিধি, আচরণ দেখছে। জনগণের সম্পদ আমরা কিভাবে ব্যবহার করছি তা তারা গভীর নজরে রেখেছে। তাই টাকার ব্যবহার, সময়োপযোগীতা ও পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন, এখন থেকে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পগুলো আরো শক্তভাবে নজরদারি করবে। তাছাড়া মন্ত্রণালয়গুলো যখন পণ্যের দাম নির্ধারণ করবে, তখন বাজারমূল্য যাচাই করে নির্ধারণ করবে।
সভায় মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় টাকা যতটা খরচ হয়, উন্নয়ন সহযোগীদের টাকা ততটা খরচ হয় না। যার ফলে পাইপলাইনে অনেক বিদেশি ঋণ পড়ে আছে। করোনার কারণে আমাদের রাজস্ব আদায় কমে যাচ্ছে। তাই এখন থেকে বিদেশি ঋণ খরচে বেশি মনোযোগী হতে হবে।
অর্থসচিব আব্দুর রউফ বলেন, করোনার কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের শিক্ষা সফরের নামে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ। গাড়ি কেনাও বন্ধ। তবে কারিগরি সংক্রান্ত বিষয়ে বিদেশ সফরে যাওয়া যাবে।
আইএমইডি সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ক্রয়নীতি বা পিপিআর অনুসরণ করে না। যার ফলে অনেক সময় অপচয় হয়। উন্নয়ন সহযোগীরা যাতে বাংলাদেশের ক্রয়নীতি অনুসরণ করে ঋণ দেয়, সেটি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।
সভায় জানানো হয়, ৫০ কোটি টাকার উপরে কোনো প্রকল্প নেয়া হলে সেটিতে সমীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোনো প্রকল্পে এই নীতি অনুসরণ করা হয় না। সভায় প্রকল্প নজরদারিতে আইএমইডিকে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।