Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরীক্ষা নিয়ে কাটছে না অনিশ্চয়তা

প্রাথমিকে বিকল্প তিনটি প্রস্তাব এইচএসসি, আলিম পরীক্ষা হবেই জেএসসি-জেডিসির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে মন্ত্রণালয়

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উলট-পালট করে দিয়েছে সব সূচি। প্রাণঘাতি এই মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সকল ক্লাস-পরীক্ষা। বছরের শেষ দিকে এসে এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে না পারায় অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে বেশ কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষাসহ বার্ষিক পরীক্ষাও। পরীক্ষা হবে কিনা কিংবা পরীক্ষা হলে কি পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে সেটি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে রাখা কঠিন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে বিকল্প কয়েকটি প্রস্তাবনা তৈরি করছে কিন্তু এখনো নিশ্চিত করে কোন কিছুই বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। ফলে বেশ কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে এগুচ্ছে দুই মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে তারা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে পিছিয়ে গেছে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা। সাময়িক ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষাগুলোও নিতে পারেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে শেষের দিকে চলতি শিক্ষাবর্ষ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে না আসায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মন্ত্রণালয় দুটি। একদিকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরীক্ষা গ্রহণ করা, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ কিভাবে হবে তা নিয়েও চলছে আলোচনা। ফলে শিক্ষার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয় দুটি পৃথক পৃথক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। তাদের কাছ থেকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ চাওয়া হয়। ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটির কাছ থেকে প্রস্তাবনা পেয়েছে এবং তা রোববার বা সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে তারা পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেননি। আজও বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক রয়েছে। তারা বিকল্প কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলো পর্যালোচনা হচ্ছে।
প্রাথমিকের তিন প্রস্তুতি: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ক্লাস, পরীক্ষা নিয়ে তিনটি বিকল্প প্রস্তাবের ওপর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যদি সেপ্টেম্বরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সম্ভব হয় তাহলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়িয়ে সেটির ওপর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষাসহ অন্যান্য শ্রেণির পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। আর যদি অক্টোবরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয় সেক্ষেত্রে ৫০ নম্বরের এমসিকিউ এর মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। এই ফলাফলের ভিত্তিতেই পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হবে। এছাড়া নভেম্বরেও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে অটোপ্রমোশন কিংবা অন্যকোন চিন্তা করছে মন্ত্রণালয়।

এবিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না খোলার পরিস্থিতির ওপর তিনটি বিকল্প মাথায় রেখে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে আগামী সপ্তাহে। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা আছেই। এই পরীক্ষাটা নিতে হলে আমাদের পাঠদানের যে সময় আছে, সেই সময়টা পাচ্ছি না। আমরা সেপ্টেম্বরের দিকে যদি স্কুল খুলে দিতে পারতাম, তাহলে শর্ট সিলেবাসে একটা পরীক্ষা (প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী) নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা ছিল। আমরা শর্ট সিলেবাস করে পরীক্ষাটা নেবো। না-হলে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা হবে না। আবার যদি তা না (সেপ্টেম্বরে না খুলে) হয়, অক্টোবরের দিকে খুলে তাহলে ৫০ নম্বরের পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি কিনা? যদি সম্ভব হয় তাহলে এমসিকিউ করতে পারি ৫০ নম্বরের। এগুলো আমাদের চিন্তা-ভাবনা। পরীক্ষা (প্রাথমিক সমাপনী) আমরা রাখবো, পরীক্ষার কোনও বিকল্প নাই।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন যেহেতু সেপ্টেম্বরে স্কুল খুলতে পারবো কিনা, তা বলতে পারছি না। অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে খুললে তখন কী অবস্থা হবে, আমরা একটা মূল্যায়নের ভিত্তিতে স্কুলে স্কুলে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করতেছি।

অক্টোবরে না খুললে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, অক্টোবরে না খুললে নভেম্বরে খুলবে, নভেম্বরে না খুললে তখন বিকল্প ব্যবস্থা নেবো। তবে সেই বিকল্প ব্যবস্থার কথা জানাননি প্রতিমন্ত্রী। সমাপনী পরীক্ষার বদলে অটো পাসের চিন্তা-ভাবনার কথা আমরা শুনেছি, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, না। এরকম কোনও চিন্তা-ভাবনা আমাদের নেই। অটো পাসের চিন্তা নেই। এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি যে, পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এরকম হুট করে বলা যায় না। অটো পাসের বিষয়টা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের ওখানে আমাদের মাধ্যমিকের সচিব এবং আমাদের সিনিয়র সচিব কথা বলেছেন, এটা নিয়ে (অটো পাস) আলোচনা করেছেন যে, এরকম কিছু করা যায় কিনা?। তিনি বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞ আছেন, অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন, আমরা তাদেরকে নিয়ে বসে একটা ডিসিশন দেবো। আমরা যা-ই করি আমাদের অভিভাবক আছেন, আমরা সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবো। উনি যেটি অনুমোদন করে দেবেন, আমরা সেটি বাস্তবায়ন করবো।

এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা হবেই: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাওয়ায় চলতি বছরের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যে মাসেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তার ১৫ দিনের মধ্যে এই পরীক্ষা শুরু হবে। এই পরীক্ষায় সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করার কোন সম্ভবনা নেই। কারণ বন্ধের আগেই সম্পূর্ণ সিলেবাস পড়ানো হয়ে গেছে। তবে মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে কিংবা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এই পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।

প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়: এদিকে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেটসহ মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজও এই কমিটির বৈঠক রয়েছে। অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মহামারীকে বিবেচনায় নিয়ে জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞবৃন্দ তাদের পর্যবেক্ষণসহ কিছু বিকল্প প্রস্তাব প্রদান করেছেন। মন্ত্রণালয় প্রস্তাব সমূহ পর্যালোচনা করছে। মহামারিকে বিবেচনায় নিয়ে জেএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিভিন্ন বিকল্প নিয়েই শিক্ষা মন্ত্রনালয় ভাবছে। এই বিষয়ে এখন ও কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ