পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কালো কোট নেই। নেই কোটের ওপর কালো গাউন। সাদা শার্ট, টার্নড আপ সাদা কলার, সাদা ব্যান্ড, প্যান্ট, শাড়ি-সালোয়ার-কামিজ পরনে। আছে থোকা থোকা ভিড়। লম্বা কিউ। দেখা হতেই দূরত্ব বজায় রেখে সসঙ্কোচ কুশল বিনিময়। নেই হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি। নেই চেম্বারে কফি খাওয়ার দাওয়াত। মাস্ক আর ফেস-শিল্ডে ঢাকা পড়া মুখ দেখে হঠাৎই যেন চেনার জো নেই। ধবল শ্মশ্রুমন্ডিত অবয়ব কারও।
দীর্ঘ ৫ মাসের নিস্তব্ধতার অবসান ঘটানো সুপ্রিম কোর্ট বারের গতকালের দিনটি একদিকে যেমন ছিল বাধভাঙা আনন্দের। তেমনই ছিল বেদনার। কত চেনা মুখ করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন! তাদের আর দেখা যাবে না সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে। মরহুমদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ঝুলছে অসংখ্য কালো ব্যানার। এক ‘অন্যরকম’ সূচনাই দেখা গেলো পাঁচ মাস পর খুলে দেয়া আদালত প্রাঙ্গণে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনতা, ভয় আর শঙ্কা নিয়েই জীবিকা অন্বেষণে হাজির হন শত-সহস্র আইনজীবী। মুখে সাধ্যমতো মাস্ক ঠেঁসে আদালতে উপস্থিত হতে দেখা গেছে শত-সহস্র বিচারপ্রার্থীদের।
করোনা-ঝুঁকি সত্তে¡ও ‘আল্লাহর ওপর ভরসা’ করে ছেলের মামলার তদবির করতে এসেছেন সত্তরোর্ধ্ব নেকবর মুন্সি। জামালপুরে মাদকের ‘মিথ্যা মামলায়’ তার ছেলে কারাগারে আছে দেড় বছর। আলাপচারিতায় জানালেন, তার গ্রামে করোনার চিহ্ন নেই। কোনোদিন মাস্কও পরেননি। ঢাকায় এসে হাইকোর্টের প্রবেশদ্বারে আটকে দেয়া হয় তাকে। পরে আইনজীবীর মুহুরি পকেট থেকে মাস্ক বের করে দিলে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারে প্রবেশের ‘যোগ্যতা’ অর্জন করেন।
মুখে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি কাউকেই। প্রবেশ পথেই মুখোমুখি হতে হয় ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, স্যানিটাইজার হাতে দাঁড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলেই প্রবেশে পড়ছে বাধা। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের স্বার্থেই বিচারাঙ্গণে নতুন এই সংযোজনকে বিড়ম্বনা ভাবছেন না কেউই।
সুপ্রিম কোর্ট বারের অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম বলেন, কষ্ট হলেও আমাদের এইটুকুন মেনে নিতেই হবে। করোনার মধ্যেও আমরা পেশায় ফিরে আসতে পেরেছি এটি বড় আনন্দের বিষয়। বেদনাদায়ক বিষয় হুলো, অনেক চেনামুখ, সহকর্মীকেই আর দেখতে পাবো না। করোনায় সুপ্রিম কোর্ট বারেরই অন্তত ৩৫ জন সদস্য আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি, সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটি মিলিয়ে ১৩৯ দিন পর খুলেছে নিয়মিত আদালত। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে হাইকোর্টের ১৮টি বেঞ্চে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পাশাপাশি চলে ৩৫টি ভার্চুয়াল বেঞ্চও। বিচার কার্যক্রম চলে ন্যূনতম উপস্থিতিতে। তা সত্তে¡ও ওকালতনামা, কোর্ট ফি ক্রয়, এডিডেভিটকরণসহ বিভিন্ন ডেস্কে ছিল অজগরের মতো লম্বা কিউ। কিউতে চেষ্টা করা হয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার। তবে সার্বক্ষণিক শৃঙ্খলা ধরে রাখা যায়নি।
এর আগে মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতিতে নিয়মিত আদালতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের স্বার্থে বিচারপতি এবং আইনজীবীদের পরিধেয় পোশাক নির্দিষ্ট করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সশরীর শুনানিকালে কালো কোট ও গাউন ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়। টার্নড আপ সাদা কলার ও সাদা ব্যান্ডসহ সাদা শার্ট ও প্যান্ট এবং নারীদের শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ পরিধান করে আসতে বলা হয়। এ ছাড়া মামলা পরিচালনায় ৫ দফা নির্দেশনাও দেয়া হয়।
নির্দেশনা কতটা প্রতিপালিত হচ্ছে- জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, নিয়মিত আদালত পরিচালনায় যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা প্রতিপালনের হার সন্তোষজনক। কারণ এটি সবারই নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। তাই সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিবেশর তথ্য পেয়ে প্রশাসন থেকে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।