পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এক রকম। মামলা হচ্ছে অন্য রকম। যিনি আসামি হওয়ার কথা- তিনি হচ্ছেন বাদী। যে ধারায় মামলা হওয়ার কথা-সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই ধারা। যুক্ত করা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত লুঘু দন্ডের ধারা। ফাঁক থেকে যাচ্ছে আইন প্রয়োগেই। এতে জনরোষ ও ঘৃণা আপাত প্রশমিত হচ্ছে বটে। কিন্তু মানুষ হচ্ছেন বিভ্রান্ত। নষ্ট হচ্ছে মামলার ভবিষ্যৎ।
তবে করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতে উদঘাটিত দুর্নীতি, অনিয়ম, কেলেঙ্কারি পর পর বিভিন্ন সংস্থার তড়িঘড়ি করে দায়েরকৃত মামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এসব মামলায় প্রকৃত অপরাধী যথোপযুক্ত শাস্তি পাবেন কি না সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, প্রকৃত অপরাধ এবং অপরাধীদের আড়াল করতেই অনেক সময় তড়িঘড়ি করে মামলা দায়ের করা হয়। যার চূড়ান্ত ফসল অপরাধীরই ঘরে ওঠে। রুজু এবং তদন্ত শুরুর আগে এর বিচার-ভবিষ্যৎ বিবেচনা করেই মামলা করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
আসামি হচ্ছে না সরকারি কর্মকর্তারা : রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে পুুরনো অন্ততঃ ৩২টি মামলা খুঁজে পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। এসব মামলা নিয়ে দিব্যি মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করেছেন তিনি। সাহেদ ধরা পড়েন তার প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে ভুয়া করোনা রিপোর্ট বিক্রির পর। এর আগে করোনা টেস্ট এবং কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন করে। ২১ মার্চ সম্পাদিত চুক্তিতে সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালিন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষর করেন।
কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় দুর্নীতিটি সংঘটিত হয়েছে এই চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে। যাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ সাহেদের সঙ্গে সরকারি ব্যক্তিবর্গের যোগসাজশের প্রামাণ্য দলিল রয়েছে। অপরাধের ধরণ অনুযায়ী এটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র তফসিলভুক্ত। এই ঘটানাটিতে মোহাম্মদ সাহেদ শুধুমাত্র প্রতারণা করেছেন। অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু ঘুষ গ্রহণের বিনিময়ে অবৈধ প্রতিষ্ঠান রিজেন্টকে প্রতারণা মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতে সহায়তা করা, অপরাধলব্ধ অর্থ আয়, সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার, অন্য কর্মকর্তাগণ চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছেন। এসব অপরাধ দুদকের তফসিলভুক্ত। দুদক এসব ঘটনায় নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে।
অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান মামলা দায়ের করলেও সেটি পাঠিয়ে দেয় দুদকে। দুদক তদন্ত করে। এছাড়া চুক্তি স্বাক্ষরের মতো অকাট্য প্রমাণ থাকলে অনুসন্ধানের নামে সময়ক্ষেপণ না করে সরাসরি মামলা করার এখতিয়ারও দুদকের রয়েছে।
সাহেদকান্ড নিয়ে তোলপাড় চললেও সরকারি কর্মকর্তাদের (প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী) সহযোগিতায় সাহেদের প্রতারণা, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এখন অবধি কোনো মামলা করেনি। কোনো সরকারি কর্মকর্তাকেও আইনের আওতায় আনেনি দুদক। তবে ব্যাংকের পৌনে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ ছোটখাটো কিছু ঘটনায় দুদক মামলা করেছে সাহেদের বিরুদ্ধে। যাতে সাহেদ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাউকেউ আসামি করা হয়নি। অথচ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বাস্থ্যখাতের কর্মকর্তারাই উদঘাটিত দুর্নীতির হোতা।
প্রায় অভিন্ন ঘটনা জেকেজি’র সাবরিনা-আরিফের ক্ষেত্রেও। কোভিড-১৯ টেস্ট না করেই অর্থের বিনিময়ে ভুয়া করোনা রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গত ৫ আগস্ট চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এ মামলায় সাবরিনা-আরিফ ছাড়াও আসামি করা হয়েছে আরও ৬ জনকে। ওই ৬ জনের মধ্যে একজনও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। অথচ জেকিজি’র সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে এবং সেই চুক্তিতে সরকারের পক্ষে যারা স্বাক্ষর করেছেন-তারাও এ মামলার আসামি হওয়ার কথা। সরকারি কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় এ মামলাটিও দুদকেরই করার কথা, সেটি করেনি। বরং প্রতিষ্ঠানটি এখন ডা.সাবরিনা-আরিফের সম্পদ অনুসন্ধানে ব্যস্ত। অবৈধ সম্পদের মামলা হলে আসামি হবেন সাবরিনা-আরিফ। অন্ততঃ দুদকের মামলায় নিরাপদ থাকবেন জেকেজি’র সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরকারী সরকারি কর্মকর্তারা।
নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে ‘অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল লি:’র মালিক শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)র প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোজাফ্ফর আহমেদ। ২৩ জুলাই দায়েরকৃত মামলায় ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে দন্ডবিধির ৪২০ এবং ৪০৬ ধারা। শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার। তিনিও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। সংবাদমাধ্যমে তার পদপদবি বহুবার প্রচার-প্রকাশ হয়েছে। মামলাটি দায়ের করার কথা দুদকের। তদন্তও করার এখতিয়ারও দুদকেরই। কিন্তু অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে এটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এজাহারে।
এ মামলায় শারমিন জাহানকে একক আসামি করা হয়েছে বিএসএমএমইউ’র জড়িত কর্মকর্তাদের রক্ষার উদ্দেশ্যেই। কারণ কেনাকাটায় পিপিআর অনুসরণ করা হয়নি। সরকারি কর্মকর্তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তার চুক্তি সম্পাদন করেছেন। কার্যাদেশ দিয়েছেন। নথিপত্রে দেখাযায়, এ কার্যাদেশে এম-৯৫ মাস্কের কোনো ‘স্পেসিফিকেশন’ও ছিল না। সরবরাহকৃত মাস্ক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিনা আপত্তিতে গ্রহণ করেছেন। সেগুলো ব্যবহারও করেছেন। সেখান থেকে ১১শ’ মাস্ক ‘নিম্নমান’র বলে চিহ্নিত করেছেন। আলামত বিনষ্টের উদ্দেশ্যে পরে তা ফেরতও দিয়েছেন।
এ অপরাধগুলো একতরফাভাবে সংঘটন করেছেন বিএসএমএমইউ’র কর্মকর্তারাই। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলায় নিজ প্রতিষ্ঠানের কাউকেই মামলায় আসামি করা হয়নি। দুদক বাদী হয়ে মামলা করলে কিংবা দুদক মামলাটির তদন্ত করলে বাদীপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও আসামি হতে পারতেন। আত্মরক্ষা এবং ঘটনা ধামাচাপা দিতেই তড়িঘড়ি করে দায়ের করা হয় দায়সারা গোছের মামলা। বিচারে যেটির সুফল পেতে পারেন আসামিপক্ষ।
আরেক জাহালম-কান্ডের আশংকা ! : স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম, কেলেঙ্কারির পর দায়েরকৃত মামলা প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন সাবেক জেলা জজ এবং দুদকের অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো.মাঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিএসএমএমইউতে মাস্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় শুধুমাত্র সরবরাহকারীকে একক আসামি করা হয়েছে। যোগসাজশের বিষয়টি মামলায় আসেনি। তাই এটি সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিপূর্ণ মামলা। সঠিক ধারায় মামলাটি করা হয়নি। এজাহারে ৪০৯ ধারা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এটি তদন্তের এখতিয়ার দুদকের । শুধুমাত্র সাপ্লাইকারীই দায়ী হবেন না। যারা মালামাল গ্রহণ করলেন তারাও আসামি হবেন।
এজাহারে প্যানাল কোডের ৪২০ ধারা যুক্ত করায় বিএসএমইউতে কেউ সম্পৃক্ত কি না সেটি খোঁজার সুযোগ সঙ্কোচিত হয়ে গেল। পুলিশ যদি মামলাটি দুদকে তদন্তের জন্য না পাঠায় তাহলে আরেক জাহালমের কাহিনী ঘটবে। যিনি মামলা দায়ের করেছেন তিনি ভুল করেছেন। যিনি রেকর্ড করেছেন তিনিও ভুল করেছেন।
সাবেক এ জেলা জজ বলেন, রিজেন্ট-জেকেজির ক্ষেত্রেও ভুল ধারায় মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং ধারা প্রযোজ্য। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষীতপূরণ কে দেবে? প্রতারণা হয়েছে ১৬ হাজারটি। সাবরিনা প্রতারণা করেছেন ১৬ হাজারটি। তাহলে কতগুলো মামলা হবে প্রতারণার? তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি মানিলন্ডারিং মামলা করাটাই ছিল যৌক্তিক। তিনি বলেন, করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের বহু দুর্নীতির তথ্য সংবাদ মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশিত হচ্ছে। উচিত ছিল স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব নিয়ে দুদকের কাজ করা। দুদকও দায় এড়াচ্ছে কি না সেই প্রশ্নও উঠতে পারে ।
অভিন্ন প্রশ্নে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ত্রুটি মামলার সুফল আসামি পান। মামলার সঠিক তদন্ত না হলে অনেক নির্দোষ মানুষও বলির পাঁঠা হতে পারেন। পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে জাহালম-কান্ডের। তাই দায়সারা মামলা করে ঘটনার আপাত ইতি ঘটালেই চলবে না। এটির ভবিষ্যৎও ভাবতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।