Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জোয়ারে প্লাবিত রামগতি-কমলনগর : ক্ষতির শিকার ৭ হাজার হেক্টর ফসলী জমি

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫০ পিএম | আপডেট : ৬:১৮ পিএম, ৮ আগস্ট, ২০২০

মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার প্রায় ৩৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ নদীর পানি ৫-৬ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসলসহ গবাধিপশু, মুরগির পোল্ট্রি খামার ও শতাধিক মাছের ঘের ক্ষতির শিকার হয়েছে। গত বুধবার (৫ আগস্ট) বিকেলে আচমকা মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে এমন ক্ষতির শিকার হন উপকূলের বাসিন্দারা। বেড়ি বাঁধ না থাকায় পূর্ণিমার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়দের দাবী।গত বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) ও শুক্রবার (৭ আগস্ট) ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার পরিবারগুলোর তালিকা করে আর্থিক সহায়তার জন্য রামগতি ও কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ জেলা প্রশাসকের নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন।সূত্রে জানা যায়, মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে বেড়িবাধ। তাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে এসব এলাকা। হঠাৎ গত বুধবার (৫ আগস্ট) বিকেলে মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট বেড়ে যায়। এসময় তীব্র বাতাস ও স্রোতে নদীর পানি হু-হু করে ঢুকে পড়ে উপকূল এলাকায়। মুহূর্তেই বিস্তীর্ণ জনপদ পানির স্রোতে ভেসে যায়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়,কমলনগরের চর ফলকন, চর কালকিনি, চর লরেন্স, নবীগঞ্জ, নাছিরগঞ্জ ও রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহ, চর গজারিয়া, চর গাজী, চর আলগী, বড়খেরী, তেলীর চর, আলেকজান্ডার, বালুর চর, সুজন গ্রাম, জনতা বাজার, সেবা গ্রামসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। নদীর তীর থেকে এসব এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে নদী সংযুক্ত খাল, পুকুর, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয়-প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে। শত শত বসতঘরে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়েছে আসবাবপত্র ও বিভিন্ন মালামাল। এতে মেঘনা উপকূলীয় মানুষগুলো চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
অপরদিকে কমলনগরের চর লরেন্স ইউনিয়নের ‘তাজ পোল্ট্রি খামারের’ সাড়ে ৫ হাজার মুরগী জোয়ারের পানিতে ডুবে মারা গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে মুরগির খাবার। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে খামারী মো. ওসমানের। খামারী মো. ওসমান জানান, দশ মিনিটের জোয়ারে তার পুরো মুরগির খামার লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে তার খামারের মুরগিগুলো মরে গেছে। মোটা অংকের ঋণ নিয়ে খামারটি করেছিলো সে। ঋণের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। মেঘনা আমাকে নিঃশ্ব করে দিয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কর্মকর্তা রফিকুল্লাহ মুরাদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মেঘনার অস্বাভাকি জোয়ারে রামগতি- কমলনগর উপজেলায় আউশ, রোপা আমন, বোনা আমন ও শাকসবজিসহ প্রায় ১১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে রোপা আমনের ৩৭৫ হেক্টর জমির বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষতির পরিমান সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যা মোকাবেলায় জিআর নগদ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, জিআর চাল ৩৫০ টন, গোখাদ্যের জন্য ৬ লক্ষ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লক্ষ টাকা, শুকনা খাবার ২ হাজার প্যাকেট মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়াও কবলিত এলাকর মানুষের আশ্রয়ের জন্য জেলার মোট ৫ উপজেলায় ১০১টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা রয়েছে।
চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার সাইফুল্লাহ ও চরগাজী ইউপি চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন জানান, তাদের ইউনিয়ন গুলোতে জোয়ারের কারণে বেশ কিছু কাঁচা, আধাপাকা ঘরবাড়ি ও সড়কের গাছসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোতে শুকনা খাবারসহ সহ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবারক হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, জোয়ারের পানিতে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২৫ হাজার পরিবারের ৬০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এদিকে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মোমিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মেঘনার হঠাৎ জোয়ারে ৬টি ইউনিয়ন ও রামগতি পৌরসভার আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘর-বাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলী জমিসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ১০ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।তাৎক্ষনিক কিছু শুকনা খাবার দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসক নিকট ত্রাণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বিতরণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ