Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪৮ বছর পর পিতাকে পেয়ে আপ্লুত কন্যা

গোপালগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২০, ৩:২০ পিএম | আপডেট : ৩:৩৫ পিএম, ৬ আগস্ট, ২০২০

৪৮ বছর পর পিতাকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত কন্যা। পিতাও চোখের জল রাখতে পারেননি। দু’ জনের চোখে বেয়ে গড়িয়ে পড়েছে আনন্দ অশ্রু।
কন্যা অন্যের ঘরে প্রতিপালিত হয়েছে । সেখানে লেখাপড়া করেছেন। বিয়ে হয়েছে। কিন্তু তিনি জানতেন না ওই ঘরে তিনি পালিত হয়েছেন। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর বিষয়টি জানতে পারে কন্যা। পরে জম্মদাতা পিতার খোঁজে বের হন কন্যা। খুঁজে পান জন্মদাতা পিতাকে। পান পিতৃ পরিচয়। এ ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লাটেংঙ্গা গ্রামে। এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে উৎসুক জনতা ভিড় জমায় লাটেঙ্গা গ্রামে।
বিল বেষ্টিত কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লাটেঙ্গা গ্রামের ভগীরথ মধু ১৯৭২ সালে পার্শ্ববর্তী কোনেরভিটা গ্রামের পরিষ্কার বাড়ৈকে বিয়ে করেন। ১৯৭৩ সালে এ দম্পত্তির ঘর আলো করে একটি কন্যা সন্তান জম্ম নেয়। এ কন্যার জম্ম দিতেই ভগীরথের স্ত্রী পরিষ্কার বাড়ৈর মৃত্যু বরণ করেন। ৩ দিন বয়সের মা হারা কন্যা শিশুকে বাঁচাতে চিন্তায় পড়েন ভগীরথের পরিবার। তারা বেতকাছিয়া গ্রামের লিও মধু ও কামিনী মধু দম্পতির কাছে মেয়েটিকে দত্তক দেন।

ওই দম্পত্তি কন্যা সন্তানকে যশোরের পলেন সরকার নামে তার এক নিঃসন্তান আত্মীয়েরর কাছে দিয়ে দেন। সংগীত পরিচালক পলেন সরকার ও তার স্ত্রী এঞ্জেলা সরকারের কাছেই বড় হতে থাকে মেয়েটি। শিশুটির নাম রাখা হয় বেদনা সরকার। বেদনার শৈশবকাল যশোরেই কেটেছে। পরবর্তীতে পলেন সরকার সপরিবারে ঢাকার মহাখালীতে বসবাস করেন। ১৯৮৮ সালে বরিশালের স্বপন মালাকারের সাথে বেদনার বিয়ে হয়। এই দম্পতির লিপিকা মালাকার ও লিখন মালাকার নামে দুই সন্তান রয়েছে।
বেদনা ৪৮ জানতে পার জানতে পারে পলেন সরকার তার আসল পিতা নন, ছোট অবস্থায় তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। এই কথা শোনার পরে তার পালক মাতার কাছ থেকে জানতে পারেন তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। এরপর থেকেই বেদনা পিতৃ পরিচয় খুঁজতে শুরু করেন।প্রথমে তিনি কোটালীপাড়া উপজেলার নারিকেল বাড়ি মিশনে এসে স্থানীয়দের কাছে জানতে পারেন তাকে দত্তক নেওয়া লিও মধুর বাড়ি বেতকাছিয়া গ্রামে।
গত ৩ দিন আগে মঙ্গলবার জন্মদাতা পিতার কাছে পৌঁছান বেদনা সরকার। বেদনা সরকার লাটেঙ্গা গ্রামে গিয়ে দীর্ঘ ৪৮ বছর পর জন্মদাতা পিতাকে চোখের সামনে দেখতে পান। পরিচয় পাওয়ায় বাবা-মেয়ে দু’জনেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। তাদের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে আনন্দ অশ্রু ।
বেদনা সরকার বলেন, পলেন সরকার ও এঞ্জেলা সরকার আমাকে তাদের সন্তানের মতোই আদর যতেœ বড় করেছেন। তারা কোনোদিনও আমাকে কখনো বুঝতে দেননি আমি তাদের পালিত মেয়ে।

তিনি আরো বলেন, ৪৮ বছর পর আমি বিষয়টি জানতে পারি । তারপর পিতার সন্ধান শুরু করি। যখন দীর্ঘকাল পরে আমার পিতাকে পেয়েছি। এখন আমি সবাইকে নিয়েই আমি সুখে থাকব। আমি আমার পিতৃ পরিচয় খুঁজে পেয়েছি । মনোর আশা পুরন হয়েছে। এটি আমার কাছে বড় আনন্দের প্রাপ্তি ।
বেদনার জন্মদাতা পিতা ভগীরথ মধু মেয়েকে কাছে পেয়ে আনন্দে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি এত বছর পর মেয়েকে কাছে পেয়ে তিনি বলেন, এমন প্রাপ্তি হবে, তা আমি ভাবতে পরিনি। আমি মেয়েকে পেয়ে খুবই খুশি। ভবিষ্যতে এ বন্ধন অটুট থাকবে। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ