দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুফতি পিয়ার মাহমুদ
পৃথিবীর সকল ধর্ম-বর্ণেই বিয়ে প্রথার প্রচলন আছে। তবে এর আনুষ্ঠানিকতা ও বাস্তবায়ন একেক ধর্মে একেক আঙ্গিকে। প্রায় সকল ধর্মেই এর গুরুত্ব সীমাহীন। ইসলাম তো একে ইবাদত হিসাবেই স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকি মুসলমানদের এক বিশাল জামাত দাম্পত্য জীবনকে একাকীত্বের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে যদিও সে একাকীত্ব নফল ইবাদতে পূর্ণ হয়। তাই একজন মুমিনের এ মহান কাজটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানা অপরিহার্য, যেন সে এ কর্মে সঠিকপথে সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে। তো ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের প্রধান ও মৌলিক লক্ষ্য হলো মানব বংশের সংরক্ষণ ও তার প্রজনন ধারা অব্যাহত রাখা। এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেÑ “তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র” (যাতে শুক্রাণু বীজস্বরূপ ও সন্তান ফসলতুল্য) সুতরাং স্বীয় শস্যক্ষেত্র চাষাবাদের দ্বারা যেভাবে মূল উদ্দেশ্য থাকে ফসল ফলানো এবং এর ধারা অব্যাহত রাখা ঠিক সেভাবে বিয়ের উদ্দেশ্যও হলো সন্তান জন্মদান এবং তা সংরক্ষণ ও এর ধারা অব্যাহত রাখা। এব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেনÑ “তোমরা পরস্পরে বিয়ে-শাদী আঞ্জাম দাও এবং বংশ ধারা অব্যাহত রাখ” (বুখারী-২)। অন্য বর্ণনায় মহানবী (সা.) ইরশাদ করেনÑ “তোমরা প্রেমময়ী ও অধিক পরিমাণে সন্তান জন্মদানকারিণী নারীদের বিয়ে কর।” মিশকাত : ২/২৬৭। উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস থেকে বিয়ে সম্পর্কে ইসলামের চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গি স্বরূপে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে যে, ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে-শাদীর প্রধান ও মূল লক্ষ্য হলো মানব বংশের প্রজনন ধারা অব্যাহত রাখা। এজন্যই ইসলাম জন্মনিয়ন্ত্রণ দর্শনকে সমর্থন করে না। বিয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো মানবের সতীত্ব সংরক্ষণ। সৃষ্টিগতভাবেই প্রতিটি সুস্থ মানুষের মধ্যে রয়েছে কামক্ষুধা। সেই ক্ষুধা নিবারণের একমাত্র শুদ্ধ পন্থা হলো বিয়ে। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেনÑ “(ভিন পুরুষের জন্য) পর নারীর আগমন-প্রত্যাগমন শয়তানের আগমন-প্রত্যাগমন তুল্য। যখন তোমাদের কারো কাছে কোনো নারীকে ভালো লাগে এবং তার উপর দৃষ্টি পড়ায় তোমাদের কারো মনে তার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, তাহলে সে যেন স্বীয় স্ত্রীর নিকট গমন করে সহবাস করে নেয়। এটা তার অন্তরে উদ্ভূত ঐ অবস্থা বিদূরিত করে দিবে।” (মুসলিম : ১/৪৪৯-৪৫০) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈকা নারীর উপর মহানবী (সা.) এর দৃষ্টি পড়ল। এতে তাঁর মনে প্রভাব পড়ায় তৎক্ষণাৎ স্বীয় স্ত্রী সাওদা (রা.)-এর নিকট গমন করলেন। তখন সাওদা (রা.) খোশব প্রস্তুত করছিলেন আর তার পাশেই উপবিষ্টা ছিলেন কয়েকজন নারী। তারা রাসূলুল্লাহকে (সা.) দেখে সেখান থেকে সরে গেলেন। তখন তিনি নিজ প্রয়োজন মিটালেন। অত:পর তিনি ঘোষণা করলেন, অপর নারী দর্শনে কোনো পুরুষের ভালো লাগলে এবং অন্তরে আকর্ষণ সৃষ্টি হলে সে যেন স্বীয় স্ত্রীর নিকট গমন করে সহবাস করে নেয়। কারণ ঐ নারীর যা আছে তার স্ত্রীরও তা আছে। (মিশকাত : ২/২৬৯) রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেনÑ “হে যুবসমাজ! তোমাদের মাঝে যারা বিয়ে করতে সক্ষম তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় অধিক সহায়ক।” (বুখারি : ২/৭৫৮; মুসলিম : ১/৪৪৮-৪৪৯, ইবনে মাজা : ১৩২) রাসূলুল্লাহ (সা.) এও বলেছেনÑ তিন ব্যক্তিকে আল্লাহতাআলা অবশ্যই সাহায্য করবেনÑ ১. স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ গোলাম, যে নিজ মুক্তিপণ আদায়ের ইচ্ছা রাখে, ২. যে সতীত্ব ও চারিত্র্যিক পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিয়ে করে, ৩. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী। (তিরমিযী : ১/২৯৫; নাসায়ী: ২/৫৮; ইবনে মাজা: ১৮১)। সাহাবী আনাস ইবনে মালিক (রা.) কর্তৃক বর্ণিত এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেনÑ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সাথে পূত:পবিত্র অবস্থায় সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেন স্বাধীন নারীকে বিয়ে করে। (ইবনে মাজা : ১৩৫)। তো উপরোক্ত বর্ণনাগুলোর মাধ্যমে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের সতীত্ব রক্ষাও বিয়ে-শাদীর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। বিয়ের তৃতীয় উদ্দেশ্যটি হলো, স্বামী স্ত্রীর একে অপরের সান্নিধ্যে এসে আন্তরিক প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভ করা। এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেÑ “তিনি (আল্লাহ) তোমাদের থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের স্ত্রীদের, যেন তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ কর এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের (স্বামী-স্ত্রীর) মাঝে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া। ” (রুম : ২১) স্বামী-স্ত্রী যদি নেক ও সৎ হয় এবং তাদের ভেতর থাকে আল্লাহর ভয়, তাহলে একে অপরের জন্য আত্মার প্রশান্তি ও মানবিক স্বস্তির ছায়া হয়ে বিরাজ করে। জীবনের শেষ অবধি শান্তি-সুখের প্রধান নির্ভরতা হয়ে থাকে একে অপরের। একের কষ্ট বেদনায় অপরে মাখায় সান্তনার প্রলেপ। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তরে কিংবা একান্ত নির্জনে দুজন দুজনের কাছে খুলে বলে মনের কথা। এককথায় বিয়ের বন্ধন এত মজবুত এবং স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ও নিবিড় যার তুলনা পৃথিবীতে নেই। এজন্যই এ সম্পর্ককে কুরআন মাজীদে ‘লিবাস’ শব্দে চিত্রায়িত করা হয়েছে। আল্লাহতাআলা বলেন,- “তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমারাও তাদের জন্য পরিচ্ছদস্বরূপ।” (বাকারা :১৮৭) উক্ত আয়াতে লিবাস তথা পোশাক শব্দের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ও গভীরতাকে যতটা শিল্পময় ভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়েছে তার উপমা বিরল। কারণ পোশাকের চেয়ে মানব শরীরের সান্নিধ্যে আর কিছুই বাস করে না। ঠিক সেভাবে স্বামী তার স্ত্রীর অথবা স্ত্রী তার স্বামীর যতটা সান্নিধ্যে বাস করে পৃথিবীর অন্য কোনো নারী বা পুরুষ যত পরম আত্মীয়ই হোক না কেন এতটা সান্নিধ্যে বাস করে না। আমরা যদি গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলে দেখব উল্লিখিত তিনটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের অভিপ্রায়েই বিয়ে সম্পাদিত হয়। আর বিয়ে-শাদী সম্পর্কিত অন্যান্য বিধি-বিধানও এই তিনটি উদ্দেশ্যের সাথেই সম্পৃক্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।