Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকায় ঢুকছে বন্যার পানি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোতে বাড়ছে বন্যার পানি। ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে রাজধানীর চারপাশ। দক্ষিণখান, উত্তরখান, বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, খিলগাঁও ও ডেমরা, জুরাইনের নিচু এলাকায় বেশিরভাগ ঘরের ভিতরে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। কিছু এলাকায় ঘরের ভিতর পানি না ঢুকলেও পানি বন্দি হয়ে পড়েছে বাসিন্দারা। এবার রাজধানীর অনেক এলাকাই প্লাবিত হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, উত্তরায় বেড়িবাধ থাকলেও দক্ষিণখান, উত্তরখান, বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা, খিলগাঁও ডেমরা এলাকায় কোন বেড়িবাধ নেই। প্লাবিত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নদীর পাশে হবার কারণে উক্ত এলাকাগুলোর নি¤œাঞ্চল বর্ষাকালে সবসময়ই প্লাবিত হয়ে থাকে। তবে এবার বন্যার পানি অনেক বেশি। দিন দিন বেড়েই চলছে। পরিস্থিতি দেখে বুঝা যাচ্ছে ১৯৮৮ বা ১৯৯৮ সালের মত অবস্থা তৈরী হতে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রীর দিকে খালের পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মেরাদিয়ার হাট পেরিয়ে স্টাফ কোয়ার্টারের দিকে যেতেই দেখা যায় রাস্তার দুইপাশ পুরো প্লাবিত। মূল সড়ক বাদে বেশিরভাগ সড়কই বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। আমুলিয়ার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্যবার বন্যার পানি আসলেও বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে না কিন্তু এবার ঘরে পানি ঢুকে গেছে।

এদিকে ডেমরার কোনাপাড়ার অনেক ঘরেই এখন বন্যার পানি। কোনাপাড়া বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ‘আশপাশে কোনো পানি ছিল না। এই এলাকায় বন্যার পানিও আসতো না। কিন্তু এখন প্রতিদিনই পানি বাড়তাছে। পানি বেড়ে এখন ঘরে পর্যন্ত ঢুকে গেছে। সামনে কি হয় কে জানে।’ কোনাপাড়া বাজারেরও বিভিন্ন দোকানপাট, বাড়ি ও ভবনে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। কোনাপাড়ার নতুন ঢালাই করা রাস্তা দিয়ে অল্প সামনে এগোলে দেখা যায়, ওই এলাকার সব ভবন, দোকানপাট ও বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। অনেকে যাতায়াত করছেন নৌকায়।

উত্তরা হয়ে আশুলিয়া বেড়িবাধের দিকে দেখা যায়, নদীর পানি অনেক বেড়েছে। আশুলিয়ার দুইপাশের সবকিছুই প্লাবিত। পানি বাড়লে উত্তরা, তুরাগ, মিরপুর, রুপনগর পুরো এলাকাই প্লাবিত হতে দুই ঘন্টার বেশি সময় লাগবে না। আশুলিয়ার মাছ ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন, ৯৮’র বন্যা ছাড়া এতো পানি আর দেখি নাই।

এদিকে উত্তরখান ও দক্ষিণখানের নি¤œাঞ্চল প্রতিবছরই বন্যার পানি ডুবে যায়। কিন্তু এবার বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। দক্ষিণখানের হলানের বাসিন্দা ডা. জাকিরুল ইসলাম বলেন, হলান, বড়–য়ার নিচু জায়গাগুলো প্রতিবছরই বন্যার পানিতে ডুবে যায়। কিন্তু এবার পানি অনেক বেশি। উঠান পর্যন্ত পানি চলে আসছে, কয়েকদিনে হয়তো তা ডুবে যাবে।

ডেমরা এলাকার বাসিন্দারা জানান, ১৯৯৮ সালের পর ঢাকায় এমন বন্যা হয়নি। অনেক বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে, ১০ দিনের বেশি হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও সপ্তাহখানেক হলো বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার অনেক জায়গায় বাড়িঘরে পানি প্রবেশ না করলেও আশপাশে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এই বন্যা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের ভাড়া করা কাঁচা কিংবা আধা-কাঁচা ঘরগুলোই বেশি তলিয়েছে বন্যার পানিতে। বন্যায় ভোগান্তির শিকার এসব মানুষের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে না। এমনকি তাদের খোঁজ-খবরও নেয়া হচ্ছে না।

জানা যায়, ডেমরার ধার্মিকপাড়া, মল্লিকপাড়া, সুংড়াডেঙ্গা, আমুলিয়া, মানিকদা, আরও আশেপাশে জায়গা ডুবে গেছে। এই পাশে যাত্রাবাড়ীরও বিভিন্ন জায়গা ডুবে গেছে। যাত্রাবাড়ীর কাজলা, মৃধাবাড়ি, কাউন্সিলর এগুলো ডুবে গেছে। খিলগাঁওয়ের উত্তর মানিকদার নাগদারপাড় সেতুর উভয়পাশে অনেক পাকা বা কাঁচা বাড়ি বন্যার পানিতে অর্ধেক ডুবে গেছে। উত্তরখানের মৈনারটেক, কাচকুড়া, ভাতুরিয়া, দোবাদিয়া, সোনারখোলা, দক্ষিণখানের হলান,মধুবাগ, বড়–য়ার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভাটারার বেরাইদসহ অনেক জায়গা ডুবে গেছে।

বন্যা বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি যেখাবে বাড়ছে তাতে রাজধানীর মূল অংশে অল্প সময়ের মধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করবে। এবার হয়তো সরকার তেমন কিছু করতে পারবে না, তবে আগামীতে রাজধানীর চারপাশ বেড়িবাধ দিয়ে সুরক্ষিত করতে হবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক পূর্বাভাসে বলেছে, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রধান নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করতে পারে। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোর বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণখান, উত্তরখান, ডেমরা, জুরাইন, মাদারটেক, খিলগাঁও, বাড্ডা, সাঁতারকুল এসব অঞ্চলগুলোর যে নিচু এলাকা আছে, সেখানে পানি উঠেছে। এগুলোতে মূলত বালু নদী ও শীতলক্ষ্যার পানি প্রবেশ করেছে।###

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানি

২৫ অক্টোবর, ২০২২
২১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ