পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিবেশ ও নদীদূষণ রোধে ঢাকার হাজারিবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর করা হয় দেশের বৃহত্তম চামড়া শিল্পনগরী। উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং ১৫ বছরের আইনি লড়াইয়ের ফসল এই স্থানান্তর। স্থানান্তরিত নতুন এ শিল্প নগরী চালু হয়েছে বছরখানেক হলো। কিন্তু স্বস্তি আসেনি পরিবেশে। বন্ধ হয়নি ধলেশ^রী ও বুড়িগঙ্গার দূষণ।
পরিবেশবাদী এবং আইনবিদদের অভিযোগ-তিন বছরের প্রকল্প শেষ হয়েছে ১৭ বছরে। তারপরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি প্রকল্পটি। ট্যানারি স্থানান্তরে আদালতের নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি এখনও। অব্যাহত রয়েছে নদীদূষণ। পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। মিলছে না কাক্সিক্ষত সুফল। পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তিন দশকের টানাপড়েন শেষে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর হয়েছে। এখানে স্থানান্তরে সরকার অনেক গড়িমসি করেছে। শেষ পর্যন্ত স্থানান্তরিত হলেও বন্ধ হয়নি পরিবেশ ও নদীদূষণ। এখনও চামড়ার কেন্দ্রীয় সলিড বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি চালু হয়নি। গড়ে ওঠেনি রাস্তা-ঘাট, অন্যান্য অবকাঠামো। ধলেশ্বরীর পানি এখনো কালো। বুড়িগঙ্গার পানির রং এখনো বদলায়নি। আদালতের রায় শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি বলেই এখনও মেলেনি সুফল।
আইনি লড়াইয়ের শেষ দিকে সংশ্লিষ্ট সরকারপক্ষীয় আইনজীবী অমিত তালুকদার জানান, ১৯ বছর আগে ২০০১ সালে ঢাকার হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি পল্লী সাভারে স্থানান্তরের আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ কার্যকরে গড়িমসি করেন সরকার এবং ট্যানারি মালিকরা। ২০০৯ সালের ২৩ জুন স্থানান্তরে পুনরায় আদেশ দেন হাইকোর্ট। সেটিও বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদালত অবমাননা হয়। বহুবার সময় নেয় সরকার। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ২০১৮ সালে হাজারিবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে চালু হয় বিসিকের চামড়া শিল্প নগরী।
কিন্তু এখনকার বাস্তবচিত্র হচ্ছে, বিসিকের অব্যবস্থাপনায় আবর্জনার স্তূপ রয়েছে অনেক চামড়া শিল্পনগরীর বিভিন্ন জায়গায়। ২শ’ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা বিসিকের এ শিল্পনগরীতে ১শ’ ৫৫টি ট্যানারি রয়েছে। এরই মধ্যে বিক্রয় ও ব্যবহারযোগ্য চামড়া উৎপাদন করছে ১শ’ ৩৩টি প্রতিষ্ঠান। তবে এখনও অবকাঠামোগত ঘাটতি রয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে পড়ে থাকছে আবর্জনা। বিশেষ করে ঈদুল আজহার কোরবানির সময় অবৈধ ডাম্পিং ইয়ার্ডে উপচে পড়ছে ট্যানারি বর্জ্য। সেন্ট্রাল এনভায়রনমেন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) থাকলেও তাতে বর্জ্য যথাযথভাবে শোধন করা হচ্ছে না। এখনও সিইটিপির দূষিত পানি ফেলা হয় ধলেশ্বরীতে।
এবার কোরবানির আগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার করুণদশা দশায় শঙ্কিত ট্যানারি মালিকরা। যদিও সংকট সমাধানে স্থায়ীভাবে তিনটি ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রকল্প পরিচালক। প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করে বলেন, নানা সংকটে জর্জরিত সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর। বিরাট সম্ভাবনার প্রদীপ যেন আবারও নিভে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। ৫০ বর্গফুটের ছোট একটা গর্ত ছিা। এটিতে বর্জ্য ফেলা হতো। এখন এটি বড় আকার ধারণ করেছে। অবৈধভাবেই তৈরি করা হয়েছে ডাম্পিং ইয়ার্ড। মূল নকশায় এই ডাম্পিং ইয়ার্ডের কোনো অস্তিত্ব নেই। ইয়ার্ডে ফেলা হচ্ছে সলিড বর্জ্য।
করোনার কারণে মাঝে চার মাস বন্ধ ছিল এই ইয়ার্ড। আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে আবার চালু হয়েছে। সিইটিপির অবস্থা তথৈবচ। চলছে সবগুলো মডিউল। অথচ পুরোপুরি শোধন হচ্ছে না বর্জ্য। এসব বর্জ্য গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরীতে। উক্ত প্রকৌশলী জানান, সিইটিপি পুরোপুরি চালু হয়নি। এ কারণে নি:সৃত হচ্ছে অপরিশোধিত বর্জ্য। ফলে বন্ধ হয়নি দূষণ। তবে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী জিতেন্দ্রনাথ পাল বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, বর্জ্য ডাম্পিং ইয়ার্ডে বেশিক্ষণ থাকছে না। ধলেশ্বরীরর দূষণ আগের চেয়ে কমে এসেছে। প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, এখন পর্যন্ত দেড়শ’র বেশি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান সাভারে স্থান্তারিত হয়েছে। এর মধ্যে ১১৫টি প্রতিষ্ঠান কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতের প্রাথমিক কার্যক্রম এখানে সম্পন্ন করছে। শ্রমিকরা সঠিক পরিমাপের নেট ব্যবহার করছে না। ফলে চামড়াজাত বর্জ্যরে পরিমাণটা বেশি। চামড়ার টুকরো ড্রেনে এসে পড়ছে। যা তরলের সঙ্গে মিশে রাস্তায়ও ছড়িয়ে পড়ছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাতে ব্যবহৃত লবণ পৃথককরণের মেশিন স্থাপন হয়নি এখনও। তবে সিইটিপির ৪টি সব ক’টিই এখন চলছে। মডিউলগুলোতে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা শাহিন আহমেদের মতে, সাভারের ট্যানারি চালু করা হলেও এখানকার সিইটিপি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর নয়। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা। কম ডায়ামিটারের পাইপ দিয়ে ড্রেনগুলো তৈরি করা হয়েছে। পানি সরছে না। বর্জ্য মিশ্রিত পানিই ধলেশ্বরীর দূষণ ঘটাচ্ছে। যা প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য বিনষ্টের কারণ।
ট্যানারি স্থানান্তরে দীর্ঘ আইনি লড়াই চালানো মানবাধিকার ও পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্টের রায় কার্যকরে সরকার এবং ট্যানারি মালিকদের আন্তরিকতার অভাব সুস্পষ্ট। পরিবেশ দূষণ রোধের যে কনসেপ্ট থেকে চামড়া শিল্প নগরী হাজারিবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে নেয়া হলো সেটি এখনো অর্জিত হয়নি। বুড়িগঙ্গার দূষণ কিছুটা কমলেও ধলেশ্বরী নতুন করে দূষণ শুরু হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ শতভাগ কার্যকর না হলে নদী তথা পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।