পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস সঙ্কটে অর্থের জোগান বাড়াতে রেপো (পুণঃক্রয় চুক্তি) ও রিভার্স রেপোর সুদহার আরও এক দফা কমিয়ে ‘সম্প্রসারণমুখী’ নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার মূল কাজ হল মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে স্বাভাবিক, অর্থাৎ কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বলছে, করোনাভাইরাস মহামারী, বন্যা, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাব এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এ মুদ্রানীতি করা হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন বিনিয়োগ জোরদারকরণে নতনু মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি পর্যাপ্ত হবে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরের এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। প্রতিবার সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও এবার মহামারীর কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থবছর ২০২০-২১ এ নীট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও স¤প্রসারণমূলক ও সংকুলান মুখী মুদ্রানীতি ভঙ্গির কারণে নীট অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। মহামারীর ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা থেকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতিতে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আর সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
লিখিত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং সরকার নির্ধারিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন বিনিয়োগ জোরদারকরণে বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি পর্যাপ্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গভর্নর বলেন, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হলো চলমান করোনাভাইরাসজনিত মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আর্থিক খাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করা। ২০২০-২১ এর মুদ্রানীতি ভঙ্গিকে স্পষ্টতই স¤প্রসারণমূলক ও সংকুলানমুখী উল্লেখ করে গবর্নর জানান, মুদ্রানীতির মূল কাজ হলো মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে স্বাভাবিক অর্থাৎ কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। প্রবৃদ্ধির এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাকে দুটির যোগফল থেকে প্রাপ্ত নমিনাল বা বাজারমূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর সাথে অর্থের আয় গতির পরিবর্তন সমন্বয় করে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের (যা মুদ্রানীতির মধ্যবর্তী লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত) প্রয়োজনীয় প্রবৃৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয় ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি সরকারি খাতের তুলনায় কম দেখালেও টাকার অংকে বেসরকারি খাতের জন্য প্রক্ষেপিত মোট ঋণের পরিমাণ সরকারি খাতের তুলনায় অনেক বেশি হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, করোনাভাইরাস মহামারী, বন্যা, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাব এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এ মুদ্রানীতি করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে, চলমান মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা এবং সরকার নির্ধারিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আর্থিক খাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করা। সে হিসাবে নতুন মুদ্রানীতির ভঙ্গিকে স্পষ্টতই স¤প্রসারণমূলক ও সংকুলানমুখী’ হিসেবে বিচেবনা করা যায়। যার মূল কাজ হল মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে স্বাভাবিক, অর্থাৎ কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী অব¯’ায় ফিরিয়ে আনা। ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। মুদ্রানীতিতে রেপোর হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। এক্ষেত্রে সুদহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। রেপো বা রিভার্স রেপোর মাধ্যমে সাধারণত এক দিনের জন্য ধার করা বা জমা রাখা হয়। একে বলা হয় ব্যাংকিং খাতের নীতি উপাদান (পলিসি টুলস)। এর সুদ হারকে বলা হয় নীতি সুদ হার (পলিসি রেট)। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে তারল্য ও বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে। রেপোর সুদ কমলে ব্যাংকগুলো কম খরচে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল পাবে। তাতে তারা কম সুদে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিতে পারবে। অন্যদিকে রিভার্স রেপোর সুদ হার কমানোর অর্থ হলো, ব্যাংকগুলোকে চাপ দেওয়া, যাতে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা ফেলে রেখে মুনাফা না তুলে ব্যবসা ও উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়ায়।
২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য গৃহীত স¤প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে সিআরআর ও রেপো সুবিধা হারে পরিবর্তন আনয়ন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সেকেন্ডারি মার্কেট হতে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়ের ওপর গুরুত্বারোপ এবং বিভিন্ন নতুন পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালুর পাশাপাশি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালুকরণের মতো পদক্ষেপসমূহ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। মুদ্রানীতিতে রেপোর হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। এ ক্ষেত্রে সুদহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে আটকে রাখতে চেয়েছে সরকার। গত মুদ্রানীতিতেও (২০১৯-২০) বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের পবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছিল। কিন্তু মহামারীর ধাক্কায় এই প্রবৃদ্ধি এ যাবতকালের সর্বনিম্ন; ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে পর্যায়ে নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে গত ১০ বছরের বেসরকারি খাতে ঋণের তথ্য পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের মতো এত কম প্রবৃদ্ধি এক দশকে হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাসেই সর্বনিম্ন। মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা এবং কাঙ্খিত জিডিপি মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাজারে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ সম্পর্কে একটি আগাম ধারণা দিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিবছর মুদ্রানীতি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়। এবারও মতামত নেওয়া হয়েছে। তবে এবার উন্মুক্ত আলোচনা সভা করা যায়নি, এর পরিবর্তে মেইলে মতামত নেওয়া হচ্ছে। আর সর্বসাধারণের মতামত নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক অর্থবছরে দুটি মুদ্রানীতি (জুলাই-ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি-জুন) ঘোষণা করে আসছিল। কিন্তু তার ‘বিশেষ তাৎপর্য’ নেই বলে গত ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে একটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।