Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্বনাথে বিল্ডিং নির্মাণ নিয়ে দ্বন্ধে বন্ধুকে ফাঁসালেন বন্ধু

বিশ্বনাথ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২০, ৪:২৩ পিএম

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারি ইউনিয়নের টেংরা বাঘমারা গ্রামে এক প্রবাসির বিল্ডিং নির্মাণের দ্বন্ধে বন্ধুকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসালেন অপর বন্ধু। অভিযুক্ত বন্ধু একই গ্রামের মৃত রিফাত উল্লাহর ছেলে বাদশা মিয়া (১৬)। সে দীর্ঘ ৫মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজের ঘটনায় বাদশা মিয়ার বড় ভাই মাদরাসা শিক্ষক হাফিজ আকবর আলী গত ২১ ফেব্রুয়ারি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন, (ডায়েরী নং-১১৩৪)। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কিশোরী হামিদা বেগম (১৫) বাদি হয়ে বাদশা মিয়াকে একমাত্র আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং-১৫)। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ১৫জানুয়ারি থেকে ২০২০সালের ২০ ফ্রেবুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১৩মাস জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে বাদশা মিয়া।
সরেজমিন গিয়ে জানাগেছে, টেংরা বাঘমারা গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফারুক মিয়ার বসত বাড়িতে বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করতেন ঠিকাদার আছকর আলী। সহযোগী হিসেবে তার সঙ্গে কাজ করতেন তারই ছোটভাই বাদশা মিয়া (১৬)। আর নির্মাণ কাজের দায়িত্বে ছিলেন প্রবাসীর ভাতিজা রাসেল মিয়া (২২)। আর ওই বাড়িতে কাজ করতেন প্রবাসীর আরেক আত্মীয় একই গ্রামের আবুল মিয়ার মেয়ে হামিদা বেগম (১৫)। নির্মাণ কাজের কিছুদিন পর ঠিকাদার আসকর আলীর কাছে উৎকোচ দাবি করেন রাসেল। এ নিয়ে ঠিকাদার ও রাসেলের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে প্রবাসী তার ভাতিজাকে কাজের দায়িত্ব থেকে বাদ দিয়ে ঠিকাদার আছকর আলীর কাছে নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেল মিয়া গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ওরসে যাওয়ার কথা বলে আছকর আলীর ছোটভাই বাদশা মিয়াকে মোবাইলে ডেকে প্রবাসীর বাড়িতে নিয়ে আটক করে। পরে রাসেল তার সহযোগীদের নিয়ে হামিদা বেগমকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে বাদশা মিয়াকে নির্যাতন করা হয়। পরেরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি বাদশা মিয়ার বড়ভাই, প্রতিপক্ষ রাসেল ও মেয়ের বাবাসহ এক বৈঠকে বসেন। বৈঠক থেকেই বাদশা মিয়া নিখোঁজ হন। এর পর ২২ ফেব্রুয়ারি থানায় জিডি করেন বড়ভাই হাফিজ আকবর আলী। এর দুইদিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি কিশোরী হামিদা বেগম (১৫) বাদি হয়ে বাদশা মিয়াকে আসামি করে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং ১৫)।
এ বিষয়ে মামলার বাদি হামিদা বেগমের বাড়িতে গিয়েও তার সাথে দেখা করা যায়নি। তবে, হামিদার পিতা সাংবাদিকদের জানান, থানার দারোগা স্যার ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারবনা।
এদিকে অভিযুক্ত বাদশার মা ষাটোর্ধ আছিয়া বেগম তার ছেলে নির্দোষ দাবি করে বলেন, পরিকল্পিত ও সাজানো ধর্ষণ মামলায় তার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। ফাঁসানোর গোপন বৈঠকের একটি ভিডিও রেকর্ড আছে। বাদশা মিয়ার ভাই ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষক আকবর আলী বলেন, তাকে রাতে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রতিপক্ষ রাসেলের লোকজন স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন। তবে, এ বিষয়ে জানতে রাসেলের বাড়িতে গিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা কিংবা বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। টেংরা বাঘমারা জামে মসজিদের মোতায়াল্লী হাজী নেছার আলী কটু মিয়া বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি মসজিদে ফজরের নামাজে গিয়ে জানতে পারেন ইমাম হাফিজ আকবর আলী ও তার ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে ওইদিন দুপুরে পঞ্চায়েত ও এলাকাবাসী মিলে ইমাম আকবর আলীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান।
একই গ্রামের মুরব্বী আলকাছ আলী ও মাসুক মিয়া বলেন, ঠিকাদর আছকর আলী ও রাসেলের মধ্যে প্রবাসীর বাড়ি নির্মাণ কাজ নিয়ে দ্বন্ধের কথা শুনেছেন। তবে, ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে তারাও কিছুই জানেন না।
তবে, বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীম মুসা বলেছেন, মামলার তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামি কয়েক দিনের মধ্যেই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ