পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও চাহিদা বেড়েছে করোনা সুরক্ষা পণ্যের। বিশেষ করে মাস্কের চাহিদা বেড়েছে বেশি। চাহিদা বাড়ায় একটি অসাধু চক্র দেশে নকল এন-৯৫, কেএন-৯৫ ও সার্জিকাল মাস্ক আমদানি করছে। আবার দেশেই অনেকেই নকল মাস্ক উৎপাদন করছে। আর হঠাৎ করে মাস্ক ব্যবসায় নেমেছে দেশের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। যেমন-মাছ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কনস্ট্রাকশন ঠিকাদাররাও এই ব্যবসায় জড়িয়েছেন। আর তাই প্রতিদিনই আসছে করোনার নকল মাস্কসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির খবর।
গত কয়েকদিন থেকে সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহ। এই অভিযোগে গত শুক্রবার অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের মালিক ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমিন জাহানকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে গত শনিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। মূলতঃ শারমিন জাহান ইরফান আরিফ নামে একজন আমদানিকারকের কাছ থেকে ‘এন-৯৫’ মাস্ক ক্রয় করে তা বিএসএমএমইউতে সরবরাহ করেছেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে সারমিন যদি নকল মাস্ক বিএসএসএমএমইউতে দিয়ে থাকে তাহলে সেই মাস্ক আমাদিনকারক এবং তাদের সহযোগী ক্লিয়ারিং এ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্টরাও এর জন্য দায়ী। কারণ তারাই নকল মাস্ক দেশে এনেছে। যদিও মাস্ক আসল না নকল এটা বোঝার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই। তাই সারমিনকে নকল মাস্ক সরবরাহ করে ফাসানো হয়েছে বলে মনে করছেন বিএসএমএমইউ’র অনেকেই। একই সঙ্গে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালকে কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তাকারী মূল হোতা হাসপাতালের পরিচালক ও সহকারি পরিচালকও আড়ালেই থাকছে।
আদালতে শারমিন জাহান বিচারককে বলেছেন, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি যদি নকল মাস্ক দিয়ে থাকি তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে সেটা ফেরত দেবেন। কিন্তু সেটা না করে আমার নামে মামলা দিলেন। জানা গেছে, মাস্ক সরবরাহের ৪দিন পর মাস্ক নকল এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? অনেকের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে কয়েকজন মাস্ক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারাই আবার করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এন-৯৫ মাস্ক নকল ও ভুয়া হওয়ায় দেশের ফ্রন্টলাইনযোদ্ধা চিকিৎসক-নার্সরা করোনায় বেশি আক্রান্ত হেেচ্ছন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে। তাই দেশকে করোনা থেকে বাঁচাতে নকল মাস্ক আমদানি ও বাজারজাতকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট ইমপোরটার্স এন্ড হোলসেলার ইউনিটির সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান সোহাগ বলেন, শারমিন যে মাস্ক সরবরাহ করেছেন সেই মাস্ক বাংলাদেশে তৈরী হয় না। তৈরী হয় চায়নাতে। তাই মাস্কের মান যাচাই করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র আন্তজার্তিক কিছু ল্যাবরেটরীর। বাংলাদেশে যে সকল ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নির্দেশ রয়েছে তাদের একটিতেও এন-৯৫ মাস্কের মান যাচাই করার ক্ষমতা নেই।
সূত্র মতে, করোনার সুরক্ষায় দেশে সবার মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র নেমে পড়েছে নকল মাস্ক ব্যবসায়। এতে চিকিৎসক-নার্সদের জন্য প্রয়োজনীয় এন-৯৫ মাস্ক নকল হওয়ায় তাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে নকল মাস্ক আমদানি বা বিক্রি করেও এই চক্রটি অধরাই থেকে যাচ্ছে। এসব মৌসুমী ব্যবসায়ীদের নকল মাস্ক আমদানিতে সহযোগীতা করছে ৫-৭ জন সিএন্ডএফ এজেন্ট। এদের মধ্য সিনথিয়া ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. শাহজাহান, আমদানিকারক চৌধুরী ইন্টারপ্রাইজের মালিক ও সিন্ডএফ ব্যবসায়ী রাসেল অন্যতম। তারা কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নকল মাস্ক ছাড় করাচ্ছে। সিএন্ডএফ রাসেল ১০ লাখ সার্জিক্যাল মাস্কের অনুমতি নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি নকল এন-৯৫ মাস্ক এনে দিয়েছে বিভিন্ন মৌসুমী আমদানিকারকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নকল মাস্ক উৎপাদনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চায়নার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। যাদের প্রধান মার্কেট হচ্ছে বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশগুলো। চায়না, হংকং কিংবা তাইওয়ানের মার্কেট এখন দ্বিগুণ মূল্য দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বিশ্ববিখ্যাত থ্রিএম কিংবা ম্যাকরাইট কোম্পানীর এন-৯৫ মাস্ক। তবে করোনাকালীন বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চায়না থেকে দেদারসে আনছে এ সকল ভুয়া এন-৯৫ মাস্ক।
স¤প্রতি সিএন্ডএফ ও আমদানিকারক রাসেল নতুন করে আবারও সিচুয়ান কোম্পানীর আরও ১০ লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক আমদানির জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে আবেদন করে। অধিদফতরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার ফাইলটি চেকিংয়ের সময় তার প্রতিনিধিকে সার্জিক্যাল মাস্কের আড়ালে নকল এন-৯৫ মাস্ক আমদানীর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে দুই লাখ টাকা অফার করে। পরবর্তীতে ওই কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে পড়লে তার প্রতিনিধি তড়িঘড়ি করে পালিয়ে যায় বলে নিশ্চিত করেছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সহকারী পরিচালকের অফিস সহকারি।
ঔষধ প্রশাসনের অনুমিত নিয়ে এসজিএস সার্টিফিকেট ও ল্যাব রিপোর্টের মান যাচাই করে মাস্ক আমদানি করা এক ব্যবসায়ী বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীদের প্রভাবে আমরা মূল আমদানিকারকরা এখন ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। কিছু অসাধু সিএন্ডএফ ও ডোর টু ডোর সার্ভিস দেয়া আমদানি কারকরা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি পত্র জালিয়াতি করে দেশে ব্যবসা করছে।
মাস্কের পাইকারী বিক্রেতা এম এ আউয়াল বলেন, গত ১৫-২০ দিনে থ্রিএম’র এন-৯৫ মাস্ক একটিও বিক্রি করতে পারিনি। পরে আউয়াল সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট ও মোতালিব প্লাজা, মিরপুর ডিওএইচএস, বনানী ও পল্টনের বিভিন্ন আমদানিকারকদের গোডাউন ঘুরে ৫ জনের কাছ থেকে স্যাম্পল হিসেবে ৫ বক্স থ্রিএম এন-৯৫ এর ৮২১০ ইউএসএ, ৮২১০ সিএন ও ১৮৬০ সিঙ্গাপুর, ও পেরু মডেলের পাঁচ বক্স পণ্য ক্রয় করে। এসকল পণ্যের গোডাউনে অন্তত ২০-২৫ লাখ এন-৯৫ মাস্ক রয়েছে। এই মাস্ক আমদানিকারকদের কারো মাছের ব্যবসা, কারো কাপড়ের ব্যবসা, আবার কারো মোবাইলের ব্যবসা। কারো বা হার্ডওয়্যার ব্যবসা। কেউ বা সেনেটারী আইটেমের ব্যবসায়ী। কিন্তু সবাই এখন নকল মাস্ক নিয়ে ব্যবসা করছেন।
ইনকিলাবের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গত ৬ জুন মতিঝিলের একটি প্রতিষ্ঠান ৭৮৪০ পিস ১৮৬০ মডেলের থ্রিএম’র ১৮৬০ মডেলের এন-৯৫ মাস্ক আমদানী করে। তিনি আমদানীর পূর্বেই চায়না থেকে এসজিএস নামক আন্তজার্তিক ল্যাবরেটরী থেকে মাস্কের মান যাচাই করে সার্টিফিকেটসহ পন্য আমদানি করলেও তার মাস্কে একটি বানান ভুল নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিএসএমএমইউ’র কিছু মাস্ক ব্যবসায়ী চিকিৎসক। যাদের মধ্য ডা. ইশতিয়াক ও ডা. আনোয়ার আজিম অন্যতম। তারা প্রথমে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কম দামে পণ্য কিনতে চেয়েছিলো। তা না পেয়ে তারা মাস্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তার জেরে ওই ব্যবসায়ী মতিঝিল থানায় একটি সাধারন ডায়েরী (জিডি) করে যার কপি ইনকিলাবের হাতে আছে। আমদানির চারদিন পর ঐ ব্যবসায়ী যখন থ্রিএম’র মেইল পাঠিয়ে কর্নফার্ম হয় যে প্রোডাক্টটি থ্রিএম’র উৎপাদিত কিন্তু ট্রায়াল প্রোডাক্ট ছিল। সাথে সাথেই ওই ব্যবসায়ী ফেসবুকের গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রিত সকল পণ্যের মধ্যে ৪৫০ টি বাদে সব মাস্ক ফেরত নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে রিএক্সপোর্ট দেয়ার জন্য আবেদন করেন। রিএক্সপোর্টে এনওসি পেতে দেরী হওয়ায় ৭ দিন পর ১৪ জুলাই পণ্যটি তিনি ডিএইচলের মাধ্যমে ফেরত পাঠান।
যদিও অবাক করা বিষয় ওই ব্যবসায়ী ফেসবুক গ্রুপে পোষ্ট দিয়ে চারদিনে পণ্য ফেরত নিয়ে তা ফেরত পাঠালো হংকংয়ে। সেই একই পণ্য হংকং এয়াপোর্ট থেকেই কিনে নিয়েছেন অন্য একজন বাংলাদেশী চিকিৎসক। যিনি নিজেও বিএসএমএমইউতে কর্মরত। ওই ব্যবসায়ী আফসোস করে বলেন, যে পণ্যকে কেন্দ্র করে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করলো একটি চিকিৎসক সিন্ডিকেট। এখন তাদের হাতেই সেই বিতর্কিত মাল রয়েছে ৩০ হাজারের বেশি। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, নকল এন-৯৫ মাস্ক ফ্রন্টলাইনযোদ্ধা চিকিৎসক-নার্সদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ তারা এই মাস্ক পড়ে নিজেদেরকে সুরক্ষিত মনে করছে। এই মাস্ক ভেজাল হলে সবার জন্যই বিপদ।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।