পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারির করোনার প্রাদুর্ভাবে গোটা বিশ্বই পর্যুদস্ত। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম অ্যাভিয়েশন ও পর্যটন খাত। করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিভিন্ন ধরনের সভা-সেমিনার স্থগিত হয়ে যাওয়ায় পর্যটনের প্রধান উপখাত অভিজাত হোটেল ও গেস্ট হাউসের ব্যবসা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কারণ এসব অভিজাত গেস্ট হাউস ও হোটেলের অতিথিদের সিংহভাগই বিদেশি। গত মার্চ মাস থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটের ফ্লাইট সংকুচিত হতে থাকায় পাঁচতারকাসহ অভিজাত গেস্ট হাউস ও হোটেলগুলো অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। অনেকটা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের। সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল স্বাভাবিক না হলে এ অবস্থা কাটবে না। কারণ বিদেশিরা বাংলাদেশে আসতে না পারলে পর্যটন ও অভিজাত হোটেল ব্যবসায় মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এজন্য সরকারের উচিত হবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বাড়িয়ে দেয়া। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পরিচালক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) রেজওয়ান মারুফ ইনকিলাবকে বলেন, গত ২ জুন থেকে আমাদের হোটেল খুলেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে আমরা সেভাবে অতিথি পাচ্ছি না। স্থানীয় মার্কেটিংকে গুরুত্ব দিয়ে কোনোমতে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অবশ্যই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাড়াতে হবে। বিদেশিদের আসা-যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
আটাবের সাবেক সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব ইনকিলাবকে বলেন, বিমান চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় এভিয়েশন ও পর্যটন সম্পর্কিত সব ব্যবসায় ধস নেমেছে। আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না আমাদের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তারা বিভিন্ন দেশের সিভিল এভিয়েশনের সাথে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। বিভিন্ন ফ্লাইটে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ কারণেও বহু যাত্রী বিদেশে যাওয়া আসা করতে পারছে না। ট্রাভেল এজেন্সীগুলোকে টিকিট করতে দেয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে করেও যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে।
চার মাস পরে গত মঙ্গলবার নেপালে লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশটির পর্যটন খাতও খুলে দেয়া হয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন সরকারের মুখপাত্র ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী যুবরাজ খতিওয়াদা। তিনি বলেন, আসন্ন শরৎকালের পর্যটন মৌসুম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত। নেপাল সরকার আশা করে যে, এই সিদ্ধান্তের ফলে ভ্রমণ বাণিজ্য উদ্যোক্তারা আসন্ন পর্যটন মৌসুমের জন্য বুকিং শুরু করতে পারবেন। এদিকে, বাংলাদেশের পর্যটনের সবচেয়ে বড় স্পট কক্সবাজার। দীর্ঘ প্রায় চার মাস পর গত ১২ জুলাই থেকে কক্সবাজারে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। হাটবাজার স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে সবকিছু। তবে কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের সাড়ে ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল খোলার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। এ বিষয়ে আবাসিক হোটেলগুলোর কর্মকর্তারা গত ১৯ জুলাই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। কক্সবাজারের হোটেল কক্স-টুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, করোনার কারণে অভিজাত হোটেল ব্যবসায় যেভাবে ধস নেমেছে তাতে আমাদের টিকে থাকাই মুশকিল। আন্তর্জাতিকভাবে যোগাযোগ না বাড়ালে এ ব্যবসা স্বাভাবিক হবে না। এজন্য সরকারের উচিত দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া।
রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে যোগাযোগ করে জানা যায়, দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে ব্যাপকহারে অতিথির সংখ্যা কমতে শুরু করে। গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে অভিজা হোটেলগুলোতে অতিথি নেই বললেই চলে। এর মধ্যে গত রমজানের আগ থেকে ঈদের পর প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হোটেলগুলো বন্ধ ছিল। বর্তমানে হোটেল খোলা হলেও গেস্ট নেই। এমনকি বিভিন্ন ধরনের ছাড়ের অফার দিয়েও অতিথি মিলছে না, কারণ দেশে বিদেশিদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। বিদেশি অতিথির পাশাপাশি তারকা হোটেলগুলোর বাণিজ্যের একটি বড় উৎস বলরুমসহ বিভিন্ন সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন ধরনের সেমিনার ও সম্মেলন। এসব সম্মেলনের বড় অংশের আয়োজন করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজিত হয় এসব হোটেলে। এর পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও বিভিন্ন ধরনের সিভিল সোসাইটি সংগঠনও নানা ধরনের সভা-সম্মেলন আয়োজন করে। কিন্তু করোনাকালে এগুলোর সবই স্থগিত। চার মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো ব্যাংক এজিএম আয়োজন করেনি। বড় কোনো করপোরেট গ্রæপও এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেনি। এসব আয়োজন তারকা হোটেলগুলোর রাজস্বের অন্যতম প্রধান খাত। এর পাশাপাশি বিদেশি অতিথি না থাকায় হোটেলগুলোর নিজস্ব রেস্তোরাঁ ও বারগুলোর কার্যক্রমও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এমনকি সুইমিংপুল ও ব্যামাগারেও নেই কোনো সমাগম। একমাত্র হোম ডেলিভারি ব্যবসা সচল। সব মিলে তাদের ব্যবসা ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। হোটেলসংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ব্যবসা প্রায় এক-তৃতীয়াংশে বা তারও কমে নেমে এসেছে। বিশেষ অফারেও গ্রাহক পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশি অতিথি ছাড়াও আগে মোটামুটি প্রায় সব হোটেলেই সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন অফিসের সভা-সেমিনার থাকত, যা এখন পুরোপুরি বন্ধ।
রাজধানীর অন্যতম প্রধান পাঁচতারকা হোটেল প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও। স্বাভাবিক সময়ে কারওয়ান বাজারের এ হোটেলটিতে সভা-সেমিনার আয়োজনের জন্য কয়েক মাস আগে বুকিং দিতে হয়। এমনকি অতিথিদের জন্য রুম বুকিং পেতেও বেশ আগে থেকেই বুকিং দেওয়া লাগে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের পর সে চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোটেলের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা এতটাই নাজুক যে, গত তিন মাসে আমাদের বিদেশি অতিথি এসেছেন হাতেগোনা কয়েকজন। এর বাইরে চীনের একটি প্রতিনিধিদল কিছুদিন ছিল। তাছাড়া আর কোনো অতিথি আসেনি। হোটেল খোলা, কিন্তু অতিথি নেই। প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে।
হোটেল সোনারগাঁও কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় চার মাস ধরে বিদেশি অতিথি নেই বললেই চলে। আপাতত কিছু ফুড ডেলিভারি সেবা চালু আছে। সেগুলোও চলছে সীমিত পরিসরে। একই রকম অভিজ্ঞতার করা জানায় হোটেল লা মেরিডিয়ান। হোলেটটির প্রায় বেশিরভাগ সময় মুখরিত থাকে বিদেশি অতিথিদের পদভারে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে আর সে অবস্থা নেই। লা মেরিডিয়ান জানায়, সাধারণ ছুটির সময় অনেক দিন হোটেল বন্ধ রাখা হয়েছিল। বর্তমানে সাধারণ ছুটি নেই। হোটেল চালু করা হয়েছে, কিন্তু অতিথি বা ক্রেতা নেই।
এদিকে ব্যবসায় ধস নামায় টিকে থাকার তাগিদে কিছু তারকা হোটেল অনলাইন ও মোবাইলফোনের মাধ্যমে গ্রাহকদের নানা ধরনের ছাড়ের অফার দিচ্ছে। কিন্তু সে উদ্যোগেও তেমন সাড়া মিলছে না। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল রুমপ্রতি হোটেলটি ১১ হাজার টাকায় ভাড়ার প্রস্তাব করে নিয়মিত গ্রাহকদের মোবাইলফোনে বার্তা পাঠাচ্ছে। দুই রাত অবস্থান করলে এক রাত বিনা মূল্যে অবস্থানের অফারও দিচ্ছে অভিজাত হোটেলটি।
একই রকম স্পেশাল অফার দিচ্ছে আরেক অভিজাত হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও। ৯ হাজার ৯৯৯ টাকায় দুই বেলার খাবারসহ ২৪ ঘণ্টার জন্য রুম ভাড়ার প্রস্তাব দিয়ে নিয়মিত গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠাচ্ছে হোটেলটি। যদিও স্বাভাবিক সময়ে রুম ভাড়া ও খাবারের জন্য ২০ হাজার টাকার বেশি গুনতে হতো গ্রাহকদের। রাজধানীর আরেক অভিজাত হোটেল রেডিসন বø–’র চিত্রও একই। এছাড়া অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান ও বনানীতে বেশ কয়েকটি তারকা মানের হোটেল রয়েছে। তাদের ব্যবসায়ও ধস নেমেছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য সংশ্লিষ্টরা আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনা চিকিৎসার নামে অনিয়ম ও পরীক্ষা জালিয়াতির খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। বিশেষ করে বিমানে জাপান, কোরিয়া ও ইতালিতে গিয়ে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বাংলাদেশের ভূয়া করোনা সার্টিফিকেট নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় ফলাও করে সংবাদ প্রচার করা হয়। এক পর্যায়ে ইতালি বাংলাদেশের সব ধরনের ফ্লাইট নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এমনকি বাংলাদেশের ট্রানজিট যাত্রীদেরকেও নিষিদ্ধ করে ইতালি। এতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। একই সাথে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বিদেশিদের আনাগোনা ক্রমেই কমছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তৎপর হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং এসব তথ্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে জানানো হবে। তিনি বলেন, দেশের ভাবমূর্তি ফেরাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতারকদের বিচারিক অবস্থা জানতে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকেও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এরই অংশ হিসেবে টার্কিশ এয়ারসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনস সাড়া দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আরও কয়েকটি এয়ারলাইনস চালু হবে। কুয়েত এয়ার, এ্যামিরেটসও তাদের ফ্লাইট বাড়াচ্ছে বলে জানান একজন কর্মকর্তা।
এদিকে, বেশিরভাগ তারকা হোটেলের অতিথির সংখ্যা শূন্যে নেমে আসায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলেছে জানিয়েছেন হোটেল মালিকরা। এ জন্য তারা সরকারের কাছে ৫০০ কোটি টাকা অনুদান চেয়েছেন। পাশাপাশি সুদ মওকুফ, করছাড়, পরিষেবা বিল মওকুফ ও নতুন ঋণে সুবিধাসহ আরও নানা দাবি জানান তারা। তারকা হোটেল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা) গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।