Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুসাফির মদীনার পানে

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর
মারওয়ান তার শাসনামলে একদিন কোথাও যাচ্ছিলো, তখন সে কোন ব্যক্তিকে দেখলো যে, ঐ ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরানী কবরে নিজের মুখ লাগিয়ে রেখেছেন। মারওয়ান বললো: তুমি কি জান যে, তুমি কী করছ? যখন তিনি মারওয়ানের দিকে তাকালেন তখন দেখা গেলো যে, তিনি ছিলেন হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমি কোন পাথরের নিকট আসিনি, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়েছি। আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি যে, দ্বীনের জন্য ততক্ষন পর্যন্ত অশ্রু বিসর্জন করবে না, যতদিন পর্যন্ত এর দায়িত্ব উপযুক্ত লোকেদের নিকট থাকবে। দ্বীনের জন্য তখনই অশ্রু বিসর্জন করো, যখন এর দায়িত্ব অনুপযুক্তদের নিকট হবে। (মুসনাদে আহমদ , ৯/১৪৮, হাদীস :২৩৬৪৬)

উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা জানা গেলো যে, সাহাবায়ে কিরামগণ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম প্রিয় আক্বা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অতিশয় ভালবাসা পোষণ করতেন এবং তাদের এই আক্বীদা ছিলো যে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নূরানী কবরে জীবিত, তাইতো হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মারওয়ানকে খুবই কড়া ভাষায় উত্তর দিলেন যে, আমি কোন পাথরের নিকট আসিনি, যা নিষ্প্রাণ, শুনে না, বলতে পারে না বরং আমি তো আল্লাহ তায়ালার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়েছি, যিনি আজও তাঁর নূরানী কবরে উৎকর্ষময় জীবন সহকারে বিদ্যমান আছেন। সুতরাং আমাদেরও শয়তানী কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে এই আক্বীদার উপর অটল থাকা উচিৎ যে, শুধু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় বরং সকল আম্বিয়ায়ে কিরামরাও আলাইহিমুস সালাম তাঁদের কবরে জীবিত। নূরে মুজাসসাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: আম্বিয়ায়ে কিরামগণ আলাইহিমুস সালাম তাঁদের কবরে জীবিত এবং নামাযও আদায় করে থাকেন।” (মুসনাদে আনাস বিন মালিক,৩/২১৬, হাদীস :৩৪১২) অপর এক হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে: নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আম্বিয়ায়ে কিরামদের আলাইহিমুস সালাম শরীরকে খাওয়া মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন, আল্লাহ তায়ালার নবীগণ জীবিত, তাঁদের রিযিক দেয়া হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২/২৯১, হাদীস :১৬৩৭)

ইমামুল আরেফিন হযরত সৈয়্যদ আহমদ কবীর রেফায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন হজ্ব থেকে অবসর হয়ে মদীনা মুনাওয়ারায় নূরানী রওযায় উপস্থি হয়ে আরবীতে এই দু’টি লাইন পাঠ করেন:

অর্থাৎ দূরে থাকাবস্থায় আমি আমার রূহকে আপনার পবিত্র খেদমতে প্রেরণ করতাম তখন তা আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে পবিত্র আস্তানা শরীফকে চুম্বন করতো। আর এখন স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়েছি, সাক্ষাতের পালা এসেছে। তাই আপনার পবিত্র হাত মুবারক প্রসারিত করে দিন, আমার দুখানি ঠোঁট যেন হাত মুবারক চুম্বন করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। যখনই এই চরন শেষ হলো নূরাণী কবর হতে হাত মুবারক প্রকাশিত হলো, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত মুবারক চুম্বন করার সৌভাগ্য অর্জন করে নিলেন।-(আল হাভী লিল ফাতোয়া, ২/৩১৪)

এ প্রসঙ্গে হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি মদীনার সফরের এক ঈমান উদ্দীপক ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “আমি (১৩৯০ হিজরিতে হজ্ব ও মদীনায়ে তৈয়বার যিয়ারতের সময়ে) মদীনা মুনাওয়ারায় হোচট খেয়ে পড়লে ডান হাতের কব্জির হাঁড় ভেঙে যায়, ব্যথা যখন বৃদ্ধি পেল তখন আমি তা চুমু দিয়ে বললাম: “হে মদীনার ব্যথা, তোমার স্থান আমার হৃদয়ে, তুমি তো আমার প্রিয় হাবীবের দরজা থেকে পাওয়া।” (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসাফির

৩১ জুলাই, ২০২০
২৪ জুলাই, ২০২০
১৭ জুলাই, ২০২০
১৭ জানুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ