Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ

প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাঈদ হোসাইন
সন্ত্রাসবাদ’ বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত একটি বিষয়। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের যে অপ্রতিরোধ্য বিস্তার ঘটছে, তাতে এটি সর্বাপেক্ষা বড় ‘আতঙ্কে’ পরিণত হয়েছে। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশ্বশান্তি ও ইসলামের ভূমিকাকে বিশ্লেষণ করা সময়ের অপরিহার্য দাবি হয়ে উঠেছে। কারণ বিশ্বের কোথাও কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- সংঘটিত হলে তৎক্ষণাৎ কোনো পর্যবেক্ষণ ছাড়াই মুসলমানদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে। কিংবা নির্লজ্জভাবে কিছু মুসলিম নামধারী জঙ্গি সংগঠন হীন স্বার্থসিদ্ধির জন্য এর দায় স্বীকার করছে। ফলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিশেষত পশ্চিমা মিডিয়ায় এই বিবৃতি বারবার উচ্চারিত হচ্ছেÑ ‘সব মুসলমানই সন্ত্রাসী নয়, তবে সব সন্ত্রাসীই মুসলমান।’ অথচ ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে সন্ত্রাসের দূরতম সম্পর্কও নেই।
আমেরিকার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৮২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৫টি সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে। এর অধিকাংশ সংঘটিত হয়েছে খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের দ্বারা। তাই বলে কি আমরা বলব, সকল সন্ত্রাসীই খ্রিস্টান বা ইহুদি? অবশ্যই না। এসব মিডিয়া জিহাদকে সন্ত্রাসবাদের সাথে গুলিয়ে ফেলারও অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। ‘ইসলামের নামে সন্ত্রাস’ সৃষ্টি ইহুদিবাদী ও সা¤্রাজ্যবাদীদের সুদূরপ্রসারী চক্রান্তেরই ফসল। কোরআনের কিছু আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে জিহাদের নামে সন্ত্রাস বৈধ করার অপচেষ্টা করছে তারা। বিশেষত আধুনিক তরুণ যাদের অধিকাংশই ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের মধ্যে ইসলামের বিকৃত ধারণা দিয়ে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করছে।
উইকিপিডিয়ার বর্ণনা মতে, ‘সন্ত্রাসবাদ’ (ইংরেজি : ঞবৎৎড়ৎরংস) হলো সন্ত্রাসের পদ্ধতিগত ব্যবহার যা প্রায়শই ধ্বংসাত্মক এবং বল প্রয়োগের মাধ্যমে ঘটানো হয়। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্ত্রাসবাদের কোনো বেঁধে দেওয়া সীমারেখা অথবা সংজ্ঞায়ন নেই। প্রচলিত সংজ্ঞানুযায়ী যে সকল বিধ্বংসী কার্যকলাপ জনমনে ভীতির উদ্বেগ ঘটায়, ধর্মীয়, রাজনৈতিক অথবা নীতিগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৃত রুচিবিরুদ্ধ কাজ, ইচ্ছাপূর্বক সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার বিষয় উপেক্ষা অথবা হুমকি প্রদান করা। আইনবহির্ভূত কার্যকলাপ এবং যুদ্ধকেও সন্ত্রাসবাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
১৯৯৮ সালে এপ্রিল মাসে আরব রাষ্ট্রগুলোর স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীদের এক সম্মেলনে সন্ত্রাস দমনে সম্মিলিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তিতে ‘সন্ত্রাসবাদের’ নি¤েœাক্ত সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়। মিসরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক ‘আল-আহরাম’ পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাস হলো ব্যক্তিক বা সামষ্টিক অপরাধ মনোবৃত্তি হতে সংঘটিত নিষ্ঠুর কাজ বা কাজের হুমকি, যে প্ররোচনা বা লক্ষ্যেই তা হোক না কেন, যা দ্বারা মানুষের মাঝে ভয়ভীতি সঞ্চার করা হয় বা তাদেরকে কষ্টে ফেলার হুমকি দেয়া হয় বা তাদের জীবন, স্বাধীনতা, নিরাপত্তাকে ধ্বংসের মুখে ফেলা হয় বা পরিবেশকে ক্ষতির মুখোমুখি করা হয় অথবা সাধারণ জনগণের বা সরকারি সম্পত্তি ছিনতাই করা, জবর-দখল করা বা নষ্ট করা হয়, অথবা কোন রাষ্ট্রীয় উৎস ধ্বংসের মুখে ফেলা হয়।’
সন্ত্রাসবাদের সর্বজনগ্রাহ্য কোনো সংজ্ঞা নেই। প্রচলিত আছে, ঙহব সধহ’ং ঃবৎৎড়ৎরংঃ রং ধহড়ঃযবৎ সধহ’ং ভৎববফড়স ভরমযঃবৎ. দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে কারো কাছে বীর হয়ে যায় সন্ত্রাসবাদী, আর কারো চোখে সন্ত্রাসবাদী হয়ে যায় বীর। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আমাদের কাছে যাঁরা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা; পাকিস্তান সরকারের কাছে তাঁরাই ছিলেন দুষ্কৃতকারী। দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন বীর, আর বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকারের কাছে তিনি ছিলেন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী। কাশ্মীরে যারা এখন স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে তারা কাশ্মীরীদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা হলেও ভারত সরকারের দৃষ্টিতে তারা সন্ত্রাসবাদী। একইভাবে ফিলিস্তিনিদের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বীর হলেও ইসরাইলের ইহুদিদের চোখে তারা সন্ত্রাসবাদী। এভাবেই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে দৃশ্যপট পাল্টে যায়।
ইসলাম যে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না তা বলাই বাহুল্য। শান্তি, সাম্য, সৌভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, পরমতসহিষ্ণুতা ও মানবতাবাদের ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে এমন অপপ্রচার একান্তই বিদ্বেষপ্রসূত। পবিত্র কোরআনে ‘ফিতনা’ ও ‘ফাসাদ’ শব্দ দুটি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অনর্থ, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয় ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমান সময়ের সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বলতে যা বোঝায় তার সবই কোরআনে বিধৃত হয়েছে ‘ফিতনা’ ও ‘ফাসাদ’ হিসেবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর তোমরা ফ্যাসাদ সৃষ্টি কর না [সূরা, আল আরাফ-৫৬]। তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করে বেড়িও না [সূরা, বাকারা-৬০]। আল্লাহ সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে বলেন, তারা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, আল্লাহ ধ্বংসাত্মক কর্মে লিপ্তদের পছন্দ করেন না [সূরা, মায়িদা-৬৪]। নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা অশান্তি সৃষ্টিকারী, দুষ্কর্মীদের কর্ম সার্থক করেন না [সূরা, ইউনুস-৮১]। সন্ত্রাসবাদ তথা ফিতনাকে কোরআনের ভাষায় অভিশপ্ত মুনাফিকদের চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যখনই তাদেরকে ফিতনার (অর্থাৎ দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা) দিকে আহ্বান করা হয়, তখনই তারা তাতে নিপতিত হয় [সূরা, নিসা-৯১]। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা গোটা মানব জাতিকে হত্যা করার শামিল। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষ হত্যার অপরাধ কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্ম পরিচালনা ব্যতীত কাউকে হত্যা করল, সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করল। আর যে কারো প্রাণ রক্ষা করল সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল’ [সূরা মায়েদা : ৩২]। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী অমুসলিম নাগরিক বা মুসলিম দেশে অবস্থানকারী অমুসলিম দেশের কোন অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও লাভ করতে পারবে না, যদিও জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বৎসরের দূরত্ব থেকে লাভ করা যায়’ [বুখারি, ৩/১১৫৫; মুসলিম, ৪/২২৭৮]। সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন , ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়াতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ও সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করে, তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হয় হত্যা করা হবে নতুবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটা হলো তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা। আর পরকালে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি অবধারিত রয়েছে’ [সূরা মায়েদা : ৩৩]। কোরআনের এসব আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়, ইসলামের সাথে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কোরআনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা উচ্চারিত হয়েছে, তাতে বোঝা যায় কোনো মুসলমানই সন্ত্রাসী হতে পারে না।
আন্তর্জাতিক মিডিয়া জিহাদকে সন্ত্রাসবাদের সমার্থক হিসেবে পেশ করছে। অথচ কোরআন, হাদিস ও ইসলামের সোনালি ইতিহাস প্রমাণ করে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবৎকালে সংঘটিত প্রতিটি জিহাদ বা যুদ্ধই ছিল আত্মরক্ষামূলক বা উবভভবহংরাব। যেসব যুদ্ধকে বাহ্যত আক্রমণাত্মক বা ঙভভবহংরাব মনে হয়, তার প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, তাও মূলত দুশমনের হামলার প্রস্তুতির গোপন সংবাদের ভিত্তিতে করা হয়েছে। অর্থাৎ তাও ছিল আত্মরক্ষামূলক বা উবভভবহংরাব।
সন্ত্রাস বিস্তৃত আজকের বিশ্বে সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য কত প্রচেষ্টাই না চলছে। পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্য পর্যন্ত সন্ত্রাস প্রতিরোধে কী করা যায়, তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা-পর্যালোচনা। বর্তমান বিশ্বে সন্ত্রাস দমনের এ পর্যায়ে আমরা বাংলাদেশের পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে নি¤œবর্ণিত সুপারিশমালা প্রণয়ন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি।
১. দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার আয়োজন করে জনগণের কাছে সন্ত্রাসবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টি করে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা। এক্ষেত্রে খতিব ও ওয়ায়েজগণ সুন্দর ভূমিকা পালন করতে পারেন। খতিবগণ জুমার খুতবায় এবং ওয়ায়েজগণ ইসলামী মাহফিলে ‘ইসলামের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসবাদ’ সম্পর্কে আলোচনা করতে পারেন।
২. প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিটি ক্লাসে এবং উচ্চ শিক্ষার প্রতিটি সেমিস্টারে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। মাদরাসা শিক্ষা সংকোচন এবং সাধারণ শিক্ষা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ করার নামে ধর্মীয় শিক্ষামুক্ত করা সা¤্রাজ্যবাদীদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনলেও জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা লক্ষ করেছি, আমাদের দেশে ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িতদের অধিকাংশই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। এই ‘ধর্ম-মুক্ত’ শিক্ষাব্যবস্থা সন্ত্রাসবাদ না কমিয়ে শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত হওয়ার জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলে। তাই শিক্ষার প্রতিটি স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা আবশ্যক করা প্রয়োজন।
৩. মসজিদভিত্তিক শিক্ষা ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। পাশাপাশি ইসলামী পাঠাগারও চালু করা। ‘তাবলিগ জামাতে’র কার্যক্রম প্রতিটি মসজিদে সক্রিয় করা। আত্মবিস্মৃত যুবসমাজকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত প্রক্রিয়ায় মানসিক পরিচর্যা করা। সাথে সাথে কোরআন-হাদিসের ব্যাপক চর্চা সমাজে প্রতিষ্ঠা করা।
৪. মিডিয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সোচ্চার করে তোলা। এক্ষেত্রে আলেম ও দাঈগণ পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারেন। রেডিও ও টেলিভিশনে আলেম ও দাঈগণকে ‘ইসলামের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসবাদ’ বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া অতীব জরুরি।
৫. বেকারত্ব, বঞ্চনা ও হতাশা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্ম দেয়। বেকার, বঞ্চিত ও হতাশ যুবক সন্ত্রাসীদের সহজ শিকারে পরিণত হয়। তাই বেকার সমস্যার আশু সমাধান নিশ্চিত করা। জীবন সম্পর্কে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। সার্বজনীন ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
৬. মাদকদ্রব্য সেবন ও ব্যবহার, আমদানি, প্রস্তুতকরণ, এর ব্যবসা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীকে কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে দ্রুত কার্যকর করা।
৭. সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে তাদের অর্থের উৎস ও নেপথ্য নায়কদের চিহ্নিত করা। সন্ত্রাসীদের আস্তানাগুলো শনাক্ত করে তাদের গতিবিধি সংকীর্ণ করে দেওয়া। প্রকৃত সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
৮. বর্তমান সময়ে যেসব ছাত্র ও যুব সংগঠন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষাঙ্গনে আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং এবং টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের জন্য যে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, তার বিরুদ্ধে সরকার, প্রশাসন, মিডিয়া তথা সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।
৯. অপসংস্কৃতির বেড়াজাল ছিন্ন করে সুস্থ-সামাজিক ইসলামী সংস্কৃতি ও বিনোদনের ব্যাপক চর্চা নিশ্চিত করা। নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার বিকাশ সাধনে উপযুক্ত সিলেবাস প্রণয়ন ও পুস্তক রচনা করা। পাড়া-মহল্লাকেন্দ্রিক কিশোরদের মাঝে নৈতিকতা ও শিষ্টাচারিতার ক্ষেত্রে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা।
দেশপ্রেমিক প্রতিটি ঈমানদীপ্ত নাগরিককে মনে রাখতে হবে, অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা আমাদের নেতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। আজ আবার সময় এসেছে গর্জে ওঠার। ঈমানি শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা, লেখালেখি, গবেষণা ও বুদ্ধিবৃত্তিক পন্থায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার। যারা উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চড়ানোর অশুভ পাঁয়তারা করছে এবং ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন। দল-মত নির্বিশেষে সিসাঢালা দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে তুলতে হবে আমাদেরকে ইসলাম, সমাজ ও রাষ্ট্রবিধ্বংসী সকল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
ষ লেখক : সদস্য, জাগৃতি লেখক ফোরাম, চট্টগ্রাম



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ
আরও পড়ুন