পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বাস্থখাতে চলছে মহাদুর্যোগ। অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা যেন সেক্টরটিকে গ্রাস করেছে। করোনাকালে সেক্টরটির ‘ভয়ঙ্কর দুর্নীতির থাবা’ প্রকাশ্যে চলে আসছে। করোনা মহামারিতে বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত; যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও করোনার চিকিৎসা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে; তখন বাংলাদেশে ‘ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা’রা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন রোগীদের। কিন্তু করোনার দুর্যোগময় মুহূর্তে সরকারকে সহযোগিতা করার কথা থাকলেও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ‘সিন্ডিকেট’ করে সেক্টরকে কার্যত পঙ্গু করে ফেলেছে। একদিকে স্বাস্থ্যখাতের ‘ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা’ চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দিনরাত পরিশ্রম; অন্যদিকে একটি অসাধু চক্র স্বাস্থ্যখাত বিতর্কিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানো উচিত। আমূল পরিবর্তন ছাড়া স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) নিয়োগ দেয়া হবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্য অধিদফতরের যাদের নাম আসবে; তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখোমুখি অবস্থানের পর শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে স্বাস্থ্যখাতে। স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি দেশে করোনা মহামারি চলকালীন অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। তাছাড়া এ সময় অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার নানা অনিয়ম দুর্নীতি প্রকাশিত হতে থাকে। ফলে স্বাস্থ্য খাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। এসব পরিস্থিতির উত্তরণে সম্প্রতি নানা পদক্ষেপ নেয় সরকার। গতকালও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে বদলি করা হয়েছে। পদত্যাগ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। অধিদফতরের পরিচলককে (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) যে কোন সময়ে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অধিফতরের আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল করার চিন্তা করছে সরকার। তাই স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট আতঙ্কে আছেন। কখন অব্যাহতি বা বদলি করা হচ্ছে এ নিয়ে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে অব্যাহত অনিয়ম, দুর্নীতি, অসঙ্গতি দূর করতে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের আমূল পরিবর্তন করা দরকার। গত কয়েক বছরে স্বাস্থ্য অধিদফতরে কিছু অযোগ্য লোককে বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে চিকিৎসক ও আমলাদের মাঝে যে সমন্বয়হীতা দেখা দিয়েছে সেটিও দূর করতে হবে। শুধু সচিব বা মহাপরিচালক পরিবর্তন করেই এই সঙ্কটের সমাধান করা সম্ভব নয়। শুরুটা হয়েছিল চিকিৎসকদের নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ দিয়ে। এরপর বিতর্কিত রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতি ফাঁস হওয়ায় মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। এ সময় মহাপরিচালক একটি সিন্ডিকেটের নির্দেশে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সরকারের চুক্তি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার কাছে ব্যাখ্যা চায়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরও দুই-তিন বছর থাকবে বলে বক্তব্যের জন্য মন্ত্রীদের তোপেও পড়তে হয়েছিল মহাপরিচালকে। পরে তিনি সেই বক্তব্য নিয়ে ‘বিভ্রান্তির’ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নেয়া দুটি প্রকল্পেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সেখানে বলা হচ্ছে, এ প্রকল্পে গগলস ও পিপিইর দাম বাজারমূল্যের কয়েকগুণ বেশি ধরা হয়েছে। যদিও এই প্রকল্পের ক্রয় কার্যক্রমের আগেই গত মাসে প্রকল্প পরিচালককে বদলি করে সরকার। মহামারির মধ্যে নানা অভিযোগ ওঠায় এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় এবার ডা. আবুল কালাম আজাদকে বিদায় নিতে হল। তবে এসব দায় কাধে নিয়েই গত মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) নিয়োগ দেয়া হবে। এ সময় মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করেছেন। নিয়ম আছে, সেই নিয়ম অনুযায়ী এটা জনপ্রশাসনে গেছে। জনপ্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী পদক্ষেপ তারা কী নেবেন। নতুন ডিজি নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, পদত্যাগপত্র যেটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গেছে এ বিষয়ে আগে আমাদের কাছে সব সিদ্ধান্ত আসুক তারপর চিন্তা-ভাবনা করবো। সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করব, দরকার হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরও কিছু কর্মকর্তার নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, আমরা দেখব যেখানে পরিবর্তনের প্রয়োজন, সেখানে পরিবর্তন করা হবে। আমরা চাই এখানে সুষ্ঠু পরিচালনা হোক, মানুষ সঠিক সেবা পাক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র সচিব বা মহাপরিচালক নয়। মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিবকে ইতিমধ্যে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে কেন্ত্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়া জেনারেল মো. শহীদউল্লাহসহ ৮ থেকে ১০ জন বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি বদলি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অতিগোপনে অধিদফতরের ১০ থেকে ১২ মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা বদলি করা হয়েছে। এখন পরিচালক পদমর্যাদার ১৫ থেকে ২০ জন কর্মকর্তা বদলির সিদ্ধান্ত রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। অধিদফতরের শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. আবদুল হামিদ বলেন, এটা আইস বার্গের চূড়া, স্টাকচারাল পরিবর্তন না করলে কোন সমস্যা মিটবে না। শুধু স্বাস্থ্য নয়, কোন মন্ত্রণালয়ে চেন অব কমান্ড নেই। এর কারণ বেশিরভাগ নিয়োগ/পদায়ন হয় তদবিরে। উপযুক্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত অবস্থানে না বসালে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে উপযুক্ত লোক বসাতে হবে। এক্ষেত্রে হেলথ ক্যাডার সার্ভিস গঠন করা জরুরি। অর্থাৎ জুডিশিয়াল সার্ভিসের মতো করে হেলথ ক্যাডার সার্ভিস গঠন করতে হবে। পাশাপাশি সর্বস্তরে যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে হবে।
সরিয়ে দেয়া হচ্ছে হাসপাতাল পরিচালককে : স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আমিনুল হাসানকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনুমোদনহীন হাসপাতাল রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তিসহ তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পরিচালকের ফাইলটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই আমিনুল হাসানই গত ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের চুক্তি বিষয়ক চিঠিতে লিখেন, সচিব স্যারের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। অথচ রিজেন্টকে চুক্তি করাতে তিনিই প্ররোচিত করেছিলেন স্বাস্থ্য মহাপরিচালককে।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের পদত্যাগ : স্বাস্থ্য অধিদফতরে মহাপরিচালক (ডিজি) প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, পদত্যাগপত্রটি প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা। এখন প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে সম্মতি দিলেই মহাপরিচালক হিসেবে প্রফেসর আজাদের দায়িত্বের অবসান হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।