Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রূপ নিচ্ছে আন্দোলনে!

নিয়মিত আদালত খোলার দাবি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

সারাদেশে ৩৫ জনের বেশি আইনজীবী মারা গেছেন করোনা এবং করোনা উপসর্গে। ইন্তেকাল করেছেন একজন বিচারক। বিচারপতিও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন আদালত-সহায়ক কর্মচারীও মারা গেছেন করোনায়। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ বাস্তবতার মধ্যেই আইনজীবীদের বড় একটি অংশ নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন দিচ্ছেন, বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, মানববন্ধন করছেন। করছেন প্রধান বিচারপতির বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রাও। সিনিয়র আইনজীবীদের অনেকেই পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আদালত খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন।

এমনকি সুপ্রিম কোর্ট বারও বেশ কিছু সুপারিশ সম্বলিত সুপারিশ পেশ করেছেন। কিন্তু জবাবে তেমন কোনো সাড়া মেলেনি। বরং ভার্চুয়াল আদালতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টায় একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে চলেছে। এতেও তুষ্ট নন আইনজীবীদের এই বৃহৎ অংশটি। তাদের যুক্তি-ভার্চুয়াল আদালত অনন্তকাল চলতে পারে না। জীবন-জীবিকার প্রশ্নে ‘সাধারণ ছুটি’ তুলে নেয়া হয়েছে। কার্যকর অর্থে দেশের কোথাও কোনো লকডাউনও নেই। সব কিছুই প্রায় স্বাভাবিক। তাহলে আদালত অঙ্গনে কেন ‘লকডাউন পরিস্থিতি’ বিরাজ করবে? আগাম জামিনসহ গুরুত্বপূর্ণ বহু অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার কাজই বন্ধ রয়েছে।

এ পরিস্থিতির মধ্যেই গত ৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন, সম্পাদক ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজলসহ কার্যকরি কমিটির নেতৃবৃন্দ ছিলেন। বার নেতৃবৃন্দ বলেন, ভার্চুয়াল আদালত নিয়মিত আদালতের বিকল্প হতে পারে না। নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত খুলে দিন।

এ দাবির পাশাপাশি করোনার আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক ছুটিসহ দেশের সব আদালতের ডিসেম্বরের ছুটি বাতিল, পরবর্তী বছরগুলোতে ঐচ্ছিক ছুটি কমিয়ে আনা, স্বাস্থ্যসুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন এবং আগাম জামিন চালুসহ ৭ দফা প্রস্তাব পেশ করেন প্রধান বিচারপতি বরাবর। তবে ওইদিনই নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার পরিবর্তে ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম বিস্তৃত করা হয়। ফুল কোর্ট রেফারেন্সের সিদ্ধান্তে হাইকোর্টে ভার্চুয়াল দ্বৈত বেঞ্চ চালুর আদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে নিয়মিত আদালত খোলার পক্ষে অধিকাংশ বিচারপতি ফুলকোর্ট সভায় এক মতো হতে পারেননি বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এর চারদিন পরই আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও ক্রম বিস্তৃত করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল আদালত চালুর পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। ১২ জুলাই তিনি বলেন, এখন ভার্চুয়াল আদালতের সাহায্য নিতেই হবে। করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে নিয়মিত আদালত স্বাভাবিকভাবেই চলবে।

ভার্চুয়াল আদালত কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে বা বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। করোনাভাইরাস আমাদেরকে কতদিনে ছেড়ে যাবে জানি না। যদি করোনাভাইরাসের প্রকোপ আরও বাড়ে, তাহলে আমাদেরকে ভার্চুয়াল কোর্টের সাহায্য নিতেই হবে। কারণ বিচারব্যবস্থার কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। স্বাধীন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য জনগণের আশা পূরণ করতেই হবে। আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যের দিন এবং তার পরপরই গত ১৬ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি বরাবর পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচি-উত্তর সমাবেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত আদালত খুলে দেয়া দাবি পুনঃব্যক্ত করেন তারা।

‘সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদ’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত পদযাত্রা শেষে সংগঠনটির আহ্বায়ক মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী বলেন, আইন পেশা আজ গভীর খাদে পড়ে আছে। বিচারপ্রার্থী ও জনগণ তাদের আইনগত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ভার্চুয়াল কোর্ট কখনো নিয়মিত আদালতে বিকল্প হতে পারে না। অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, সৈয়দ মামুন মাহবুব, রফিকুল হক তালুকদার রাজাসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আইনজীবী কর্মসূচিতে অংশ নেন। এর আগেও গত ১২ মে সারাদেশের আদালতগুলোতে ভার্চুয়াল আদালত চালুর পরপর প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে ঢাকাবারসহ বিভিন্ন জেলা বার নেতৃবৃন্দ। নিয়মিত আদালত চালুর পক্ষেই মতামত দিচ্ছেন সিনিয়র আইনজীবীরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার অভিমত ব্যক্ত করছেন। নিয়মিত আদালত খোলার পক্ষে অভিমত জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান বলেন, সব খুলে দিয়ে শুধু আদালত বন্ধ রাখার কোনো মানে হয় না। বহু আইনজীবী এখন রুটি-রুজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ক্ষুধার মাত্রা বাড়তে থাকলে এক সময় ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙে যাবে। তখন হয়তো রুটি-রুজির দাবিতে আইনজীবীরা মাঠে নামতেই বাধ্য হবেন।



 

Show all comments
  • নোবেল হাসান ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    আমরা ভার্চুয়াল কোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছি। সাধারণ আইনজীবীরা এর মাধ্যমে কোনো সুফল পাচ্ছেন না। কিছু আইনজীবী নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • কে এম শাকীর ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    যারা ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করছেন, তাদেরও বাইরে যেতে হচ্ছে ওই মামলার কাজেই। তাই আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত আদালত খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • হোসাইন এনায়েত ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    দীর্ঘদিন ধরে দেশের সব আদালতের বিচার কার্যক্রম একদম বন্ধ থাকলেও বর্তমানে দেশব্যাপী দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে কিছুটা হলেও চলছে। তবে আমাদের তথ্যানুযায়ী, অধিকাংশ আইনজীবী নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ভার্চুয়াল আদালতে মামলা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • তাসফিয়া আসিফা ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    যতদিন পর্যন্ত নিয়মিত আদালত চালু করা সম্ভব হচ্ছে না ততদিন পর্যন্ত সকল আইনজীবী যেন পেশা পরিচালনার সুযোগ পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে বিদ্যমান ভার্চুয়াল কোর্টের সংখ্যা, পরিধি ও বিচারিক সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য ভার্চুয়াল আদালতেও আগাম জামিন চালু করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হৃদয়ের ভালোবাসা ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
    করোনাকালে আদালত প্রাঙ্গণে বিচারক আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সব পক্ষকে সুরক্ষা নীতিমালা করে তা মেনে চলতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ