Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপসর্গে মৃত্যু ৬

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনা উপসর্গ সর্দি, জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সারা দেশে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এদের কারো শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ছিল কিনা তা নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
যশোর ব্যুরো জানায়, লকডাউন, ব্যাপক প্রচার প্রচারণা, স্বাস্থ্যবিধি অমান্যে জরিমানা কোনভাবেই ভয়ঙ্কর করোনা সংক্রমণের হার কমানো যাচ্ছে না যশোর অঞ্চলে। ক্রমাগত বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গতকালও যবিপ্রবি ল্যাবে নতুন আরো ৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে যবিপ্রবিতে গত ৩ মাসে ১০ হাজার ২শ’৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট হয়েছে ২হাজার ২শ’৯৫ জনের।
যবিপ্রবির এনএফটি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শিরিন নিগার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইল জেলাসহ এ অঞ্চলের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে যবিপ্রবির ল্যাবে। পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হার ক্রমাগত বাড়ছেই। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেণ্টারে গতকাল ও করোনার টেস্টের ফলাফলে ৯৯ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, গতকাল যশোরের ২৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৮ জনের, মাগুরার ৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জনের, বাগেরহাটের ৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জনের ও সাতক্ষীরার ২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪ জনের নমুনাতে কোভিড-১৯ পজেটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ যবিপ্রবির ল্যাবে মোট ৩৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৯৯ জনের করোনা পজিটিভ এবং ২৮৭ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে। খুলনা ল্যাবেও করোনা শনাক্তের হার বাগছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সূত্র মতে গোটা অঞ্চলে ক্রমাগতভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের ৮২ থেকে প্রায় দ্বিগুণ ১৬২’তে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি শুধুমাত্র ঝালকাঠি ছাড়া অন্য জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেড়েছে কয়েকগুণ। সুস্থতার সংখ্যাও আগের দিনের ১১৮ থেকে ৯১’তে হ্রাস পেয়েছে। এসময়ে পিরোজপুরে মৃত্যু হয়েছে একজনের। ফলে সরকারী হিসেবেই দক্ষিণাঞ্চলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৬৯ ও মৃতের সংখ্যা ৯৫’তে উন্নীত হল। এরমধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনেই ১ হাজার ৬০১ জন আক্রান্ত সহ ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে নতুন করে ৩৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যে সংখ্যাটা আগের দিন ছিল ২৬। তবে এসময়ে বরিশালে কোন মৃত্যু ছিলনা। আগের দিন ৩ জনের মৃত্যু হয় এ জেলায়। জেলাটিতে শণিবার ৫৫ জন সহ মোট ৯৩৮ জনের সুস্থতার খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নতুন আক্রান্তেদের মধ্যে মহানগরীতেই সংখ্যাটা প্রায় ২৫।
অপরদিকে পটুয়াখালীতে আগের দিনের ২২ জনের স্থলে নতুন করে ৪০জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে জেলাটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১৪। মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। তবে গতকাল জেলাটিতে নুতন ২৮ জনসহ মোট ৩৪৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
দ্বীপজেলা ভোলাতে আগেরদিন কোন অক্রান্তের খবর না থাকলেও নতুন ২১ জন সহ জেলায় মোট সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪৪৩। মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। এমনকি গতকাল এ জেলায় নতুন কারো সুস্থ হয়ে ওঠারও খবর ছিলনা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ছেন ২৮০ জন। পিরোজপুরের পরিস্থিতিও যথেষ্ঠ অবনতি ঘটেছে। জেলাটিতে আগের দিনের ১০ জন থেকে শণিবার আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ জনে উন্নীত হয়েছে। এসময়ে জেলা সদরে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ জেলায় মোট আক্রান্ত ৪৪৩, মৃত্যু হয়েছে ৭জনের। শণিবার নতুন কারো সুস্থতার খবর মেলেনি জেলাটি থেকে ।
বরগুনাতেও সংক্রমন আগের দিনের তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৭ থেকে ২১-এ উন্নীত হয়েছে। তবে আগের দিন দুজনের মৃত্যু হলেও শণিবার কোন মৃত্যু ছিলনা জেলাটিতে। বরগুনাতে এ পর্যন্ত ৪৪৩ জন আক্রান্তের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শণিবার ৯ জন সহ মোট ২৪৩ জন সুস্থ হয়ে ওঠার খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ ।
একমাত্র ঝালকাঠিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের ১৭ থেকে ৫-এ হ্রাস পেয়েছে। এসময়ে জেলাটিতে কোন মৃত্যু ছিলনা । আগের দিন একজনের মৃত্যু ঘটে। তবে আগেরদিন জেলাটি থেকে ২২ জনের সুস্থতার খবর দেয়া হলেও সংখ্যাটা ছিল শূন্য। এ পর্যন্ত ঝালকাঠিতে ৩৮১ জন আক্রান্তের বিপরীতে ১২ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
এদিকে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোন রোগী ভর্তি না হলেও ২০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে আরো ৪৯ জন। হাসপাতালটির আইসোলেশন ওয়ার্ডে এসময়ে নুতন ১৫ জনকে ভর্তি করা হলেও ৪৪ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। ফলে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪৩ জন। হাসপতালটিতে ভর্তিকৃতদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনের নমুনা পরিক্ষায় ৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এপর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তিকৃতদের মধ্যে ৮৪৬ জনের নমুনা পরিক্ষায় ৩১৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদিন রাজশাহীতে দুই জন ও বগুড়ায় তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। একই সময় সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ৫১ জন।
গতকাল দুপুরে এক প্রতিবেদনে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তারের পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য জানান, সকাল পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮১৫ জনে। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১২৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪০৭৪ জন।
ডা. জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্তের মধ্যে রাজশাহীর ৬৫ জন, চাঁপাইনবাগঞ্জের ৪৫ জন, নওগাঁর ৩৯ জন, নাটোরে ১৩ জন, জয়পুরহাটে ২৭ জন, বগুড়ায় ৭১ জন, সিরাজগঞ্জে ৩৮ জন ও পাবনায় ৪৩ জন।
তিনি জানান, রাজশাহী বিভাগে আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ বগুড়ায় ৪ হাজার ৫১ জন। এছাড়াও রাজশাহীতে ২ হাজার ৩৯ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৮৬ জন, নওগাঁয় ৭৭৯ জন, নাটোরে ৩৪০ জন, জয়পুরহাটে ৬২৫ জন, সিরাজগঞ্জে ১০২৪ জন ও পাবনায় ৬৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত বিভাগের আট জেলার মধ্যে ছয় জেলায় মৃতের সংখ্যা ১২৭ জন। এর মধ্যে রাজশাহীতে ১৭ জন, নওগাঁয় ১২ জন, নাটোরে একজন, বগুড়ায় ৭৮ জন, সিরাজগঞ্জে ১০ জন ও পাবনায় নয়জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে। সরকারি হিসেবে এখনো জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোন করোনা আক্রান্ত রোগী মারা যায়নি।
এ পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ৪০৭৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগি। এর মধ্যে রাজশাহীর ৬০২, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৭ জন, নওগাঁয় ৫৩৮ জন, নাটোরে ১১৫ জন, জয়পুরহাট ১৮৫ জন, বগুড়ায় ২০৬৫ জন, সিরাজগঞ্জ ২০৭ জন ও পাবনায় ২৬৫ জন।
এদিকে, রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন জানান, রাজশাহী জেলায় করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১৫জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৬০২ জন। সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, জেলায় বর্তমানে মোট ২ হাজর ৩৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে নগরীতেই অবস্থান করছে ১ হাজার ৬১২জন। আর বাকি ৪২৭ জন জেলার ৯টি উপজেলার বাসিন্দা। উপজেলার ৪২৭ জন করোনা আক্রান্তদের মধ্যে বাঘার ৪০, চারঘাটের ৩৭, পুঠিয়ায়র ২৫, দুর্গাপুরের ২৭, বাগমারার ৪৬, মোহনপুরের ৬৩, তানোরের ৫৯, পবার ১০১, গোদাগাড়ীর ২৯ জন।
স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে জানান, চাঁদপুর দু'দফা রিপোর্টে আরো ৩৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় এ নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৪৫৭জন। এরমধ্যে মৃতের সংখ্যা ৬৮জন।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে চাঁদপুর সদরে ৫জন, হাইমচরে ২জন, মতলব উত্তরে ১০জন, মতলব দক্ষিণে ১জন, ফরিদগঞ্জে ২জন হাজীগঞ্জ ৬জন (মৃত ১জনসহ), কচুয়ায় ৫জন এবং শাহরাস্তিতে ৪জন। উপসর্গে মারা যাওয়া মৃত কামরুন নাহার (৫৪) এর রিপোর্ট করোনা পজিটিভ এসেছে। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুর ও বিকেলে ৬৯টি রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে ৩৫ টি পজেটিভ। ৩৪ টি নেগেটিভ। জেলায় ১৪৫৭জন করোনা আক্রান্ত রোগীর উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান হচ্ছে; চাঁদপুর সদরে ৫৪৮জন, মতলব দক্ষিণে ১৬৬জন, শাহরাস্তিতে ১৪৯জন, হাজীগঞ্জে ১৪১জন, ফরিদগঞ্জে ১৭৩জন, হাইমচরে ১১২জন, কচুয়ায় ৬৪জন এবং মতলব উত্তরে ১০৪জন। চাঁদপুর জেলায় করোনায় মৃত ৬৮জনের মধ্যে চাঁদপুর সদরে ২০ জন, হাজীগঞ্জে ১৭জন, ফরিদগঞ্জে ৯জন, কচুয়ায় ৫ জন, মতলব উত্তরে ৮জন, শাহরাস্তিতে ৫জন , মতলব দক্ষিণে ৩জন এবং হাইমচরে ১জন।
জয়পুরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, জয়পুরহাটে এই প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মামুন সরদার নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে ওই ব্যবসায়ী বগুড়ার বেসরকারি টিএমএসএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা: সেলিম মিয়া।
তার বাড়ি কালাই উপজেলার পৌর সদরের থানাপাড়া মহল্লায়। পারিবারিক সুত্র জানায়,করোনা উপসর্গ নিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে শুক্রবার টিএমএসএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে তিনি মারা যান। সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিয়া জানান, মৃত ওই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ ছিল। তার করোনার সবগুলি উপসর্গই ছিল বলে পরিবার নিশ্চিত করেছে। জয়পুরহাটে করোনায় এই প্রথম একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। জেলায় এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮১৫জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে ফলাফল আসে ৭ হাজার ৪৯৩ জনের। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬২৩। আর সুস্থ হয়েছেন
৩৭৮ জন।
স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে জানান, কুষ্টিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো ২ জন মৃত্যু বরণ করেছেন ও ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৪৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ১৭ জুলাই শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কুষ্টিয়ার মেডিকেল কলেজের প্রদত্ত তথ্য মতে পিসিআর ল্যাবে ১৭ জুলাই কুষ্টিয়ার ১৪২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৪৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ৩১ জন, দৌলতপুর উপজেলায় ৭ জন, মিরপুর উপজেলায় ১ জন, খোকসা উপজেলার ২ জন ও কুমারখালি উপজেলায় ২ জন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চৌড়হাস কলোনিপাড়ার বাসিন্দা আদালতের আইনজীবি সহকারি (মুহুরী) মোকসেদ আলী (৬৫) করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শুক্রবার রাতে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাক্তার এএইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তার মৃত্যুর বিষয়টি গোপন করে সকালে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পরে আমরা মোকসেদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। গত ৩ জুলাই তার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। তিনি বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন শিমুল বিশ্বাস (২০) নামে এক যুবক। শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শিমুল কুষ্টিয়া সদর উপজেলা হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে মৃত আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাসের দ্বিতীয় ছেলে। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ২৪ জনের মৃত্যু হলো।
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায় আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা হলো ১২ জন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, পুলিশ ও নার্সসহ মোট ৩৯ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নওগাঁ’র ডেপুটি সিভিলসার্জন ডাঃ মঞ্জুর মোর্শেদ জানিয়েছেন এদের মধ্যে পত্মীতলা উপজেলায় ১ চিকিৎসকসহ ৭ জন, সাপাহার উপজেলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, ১ জন পুলিশ সদস্য ও ১ জন নার্সসহ ১২ জন, নিয়মতপুর উপজেলায় ১ পুলিশ সদস্য ও ইউ এন ও অফিসের এক অফিস সহকারীসহ ৫ জন, সদর উপজেলায় ৮ জন, রানীনগর উপজেলায় ১ জন, মহাদেবপুর উপজেলায় ২ জন এবং পোরশা উপজেলায় ৪ জন । এ নিয়ে জেলায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের মোট সংখ্যা হলো ৭৭৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫৩৮ জন।
স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫ হাজার ৭১৯ জনে। জেলায় নতুন করে করোনায় কোন মৃত্যু নেই, এ যাবত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১২৩ জনের। গতকাল নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করে।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডের বিভিন্ন কোম্পানীতে কর্মরত ২৩ চীনা নাগরিকসহ নতুন করে জেলায় ৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নীলফামারীতে এ পর্যন্ত ৫৫ জন চীনা নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হলো। এর মধ্যে ম্যাজেন (বিডি) ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে ২৩ জন, ভেনচুরা লেদারওয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানীতে ২ জন, এভারগ্রীন প্রোডাক্টস কোম্পানীতে ২৫ জন এবং কর্ড (বিডি) লিমিটেডে ৫জন।
গত শুক্রবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন রনজিৎ কুমার বর্মন জানান এনিয়ে জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৮১ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩৯৪ জন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র মতে, নতুন ৪৫ জনের মধ্যে রয়েছে নীলফামারী সদর উপজেলায় উত্তরা ইপিজেডের ২৩জন চীনা নাগরিকসহ ৩৫জন, ডোমার উপজেলায় ২জন, সৈয়দপুর উপজেলায় ২ জন ও ডিমলা উপজেলায় ৬ জন ।
গোপালগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, গোপালগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গোপালগঞ্জে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৮১ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৮২ জন । গোপালগঞ্জ সদর, কোটালীপাড়া মুকসুদপুর, কাশিয়ানী ও টুঙ্গিপাড়ায় মারা গেছেন ২৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় গোপালগঞ্জ জেলা থেকে করোনা পরীক্ষা করার জন্য ৬৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ফরিদপুরে পাঠানো হয়েছিলো। এর মধ্যে নতুন করে ৩০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
গতকাল সকালে গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ এ তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় গোপালগঞ্জ সদরে ১০ জন, টুঙ্গিপাড়ায় ৭ জন, কোটালীপাড়ায় ৪ জন ও মুকসুদপুরে ৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন । সিভিল সার্জন জানান, আক্রান্তদের বসতবাড়ি সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর লকডাউন করা হয়েছে। সেই সাথে আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেণ্টিনে থাকার পারমর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ পর্যন্ত ৬৫৭২ টি নম‚না পরীক্ষা করা হয়েছে।এর মধ্যে মুকসুদপুরে ২২৬ জন, কাশিয়ানীতে ২১৩ জন, গোপালগঞ্জ সদরে ৩৭৭ জন, টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৩ জন ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ১৭৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল (১৮ জুলাই) সকালে তারা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে মারা যান। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, শহরের পলাশপোল এলাকার ওমর আলীর ছেলে করোনা আক্রান্ত নজরুল ইসলাম (৭৫) ও যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাগআচড়া গ্রামের ফরাজ তুল্লাহ’র ছেলে ইসমাইল হোসেন (৬০)। তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, গত ১০ জুলাই জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হন বৃদ্ধ নজরুল ইসলাম। পরদিন তার নমুনা সংগ্রহ করে যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পাঠানো হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর ভোরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এনিয়ে, সাতক্ষীরায় করোনা আক্রান্ত হয়ে পর্যন্ত মারা গেছেন ১২ জন। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় নতুন করে ব্যাংক কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও এক স্বাস্থ্যকর্মীসহ ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় পর্যন্ত ৪৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
শেরপুর জেলা সংবাদাতা জানান, শেরপুরে নতুন করে আরও ২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে শেরপুর জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮৮ জন। এদের মধ্যে ২৪৩ জন সুস্থ হয়েছেন। আর ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নালিতাবাড়ী থানার এএসআই সুমন মিয়া ও নকলা উপজেলার উরফা গ্রামের মানিক রয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে সিভিল সার্জন ডা. একেএম আনওয়ারুর রউফ এসব তথ্য জানান।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম পরিবারসহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল সকালে তিনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তার স্ত্রী ও মেয়েও করোনায় আক্রান্ত। এ সময় দ্রæত আরোগ্য লাভের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন তিনি। সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, চিকিৎসক, পুলিশ, আইনজীবী, ব্যাংকার, পোস্টাল স্টাফ, শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ জেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ২১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন।
পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে পটুয়াখালীতে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। গতকাল দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম চেরাগ আলী। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তিনি পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের বাসিন্দা।
কুমিল্লা : কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর তালিকা প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে। ইতোমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কুমেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে কুমেক হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম এই তথ্য জানান। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) একজন এবং করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে তিন জনের মৃত্যু হয়।
নড়াইল : নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে পুলিশ সুপারের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তিনি ক'দিন ধরে বাসায় আইসোলেশনে আছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। এদিকে, করোনা উপসর্গ নিয়ে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বড়দিয়ার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম চৌধুরী (৫৭) মারা গেছেন। গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আরিফুলের স্ত্রী শিক্ষক আসমা চৌধুরীও (৪৭) করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ