পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার মধ্যে এবার ঈদুল আজহা আসায় রাজধানী ঢাকায় কোরবানির পশুর হাট কমানো হয়েছে। দুই সিটিতে বসবে ১০টি হাট। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্যবিদরা আশঙ্কা করছেন পশুর হাটে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী হবে। তাদের বক্তব্য পশুর হাটে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়। সেটা দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে। মৌলভীবাজার, দিনাজপুর ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, গাইবান্ধাসহ কয়েকটি জেলার ইনকিলাব প্রতিনিধিরা জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন যায়গায় ইতোমধ্যেই কোরবানির পশুর হাট বসেছে। পশুর হাটগুলোতে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এমনো দেখা গেছে ৫শ’ থেকে এক হাজার লোকের উপস্থিতির ‘পুশুর হাটে’ একজনের মুখেও মাস্ক নেই। জাতীয় রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলেছে, দেশে যখন সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী তখন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুর হাট বসলে করোনা সংক্রমণে ‘ম্যাসাকার’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাট না বসানোর পরামর্শ দেয়।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার সক্ষমতা নেই আমাদের। এক হাতিরঝিলেই জনসমাগম বন্ধ করতে পারিনি। কী করে পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানবে?
রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণের হার যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন পশুর হাট বসানো একেবারেই যুক্তিহীন, ভিত্তিহীন। এখনতো চারিদিকে সংক্রমণ, বায়োলজিক্যালি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়। যখন একটা দেশে মহামারি হয়, তখন যেকেউ আক্রান্ত হতে পারে। মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে না এনে জনসমাগম করা আত্মঘাতী।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে বেশ কয়েকটি পশুর হাট বসেছে। এই হাটগুলো যেন করোনা মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলো জমে উঠা হাটে কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। হাটগুলোতে মাস্ক, হ্যান্ডগøাভস, সামাজিক দূরত্ব না মেনেই চলছে পশু ক্রয়-বিক্রয়। আদমপুর বাজারে দেখা গেল, পশুগুলোর কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই চলছে ক্রয়-বিক্রয়। নেই কোনো পশু রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা, নেই কোনো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পশুর ডাক্তার বা পর্যবেক্ষণ টিম। শুক্রবার এমন দৃশ্য দেখা গেছে উপজেলার সর্ববৃহৎ পশুর হাট গরু ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, গরুগুলোকে কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাজারে প্রবেশ করানো হচ্ছে। মাস্ক বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত বলেও মনে করেন তারা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেদায়েত আলী বলেন, কোরবানির গরুর হাটগুলোতে মেডিক্যাল টিম কাজ করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
কুষ্টিয়ার সর্ববৃহৎ পশুর হাট সদর উপজেলার আলামপুরর বালিয়াপাড়া মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সামাজিক দ‚রত্ব বজায় রাখা তো দ‚রের কথা ক্রেতা-বিক্রেতাদের কারোর মুখেই মাস্ক নেই। অথচও জেলায় প্রতিদিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। তারা জানান, কোরবানির ঈদের আগে কুষ্টিয়ার হাট-বাজার থেকে ব্যাপারীরা গরু কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। এবার সেই সংখ্যা অনেক কম। জেলায় বড় পশুর হাট রয়েছে ১২টি। এসব হাট ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও ছোট ছোট হাট-বাজারে বিক্রির জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-ছাগল নিয়ে আসছে খামারিরা। হাটে গাদাগাদি করে পশু বিক্রি করছে। সামাজিক দ‚রত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানা দূরের কথা বেশিরভাগ মানুষের মুখেই নেই মাস্ক।
রংপুর শহরের লালবাগে কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এ ছাড়াও কাউনিয়া, পীরগাছা, শ্যামপুরসহ জেলায় প্রায় শতাধিক পশুর হাট বসেছে। লালবাগের পশুর হাটে হাজার হাজার জনসমাগম; অথচ অধিকাংশর মুখে মাস্ক নেই।
দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখি। করোনা ঠেকাতে দীর্ঘদিন সরকারি ছুটি ছিল। সীমিত আকারে অফিস চললেও অঞ্চলভিক্তিক লকডাউন চলছে। জনসমাগমে না যাওয়াই হচ্ছে করোনা থেকে বাঁচার প্রথম শর্ত। সেখানে পশুর হাটে মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবে? এমনিতেই দেশের মানুষের মধ্যে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বা মাস্ক পরার মতো বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে। আর গরুর হাটে কোনোভাবেই করোনা প্রতিরোধের এই তিন ‘বেসিক’ মেনে চলা সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, পশুর হাটে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট করা যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।