পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যেন নামটাই মুখে আনা বারণ। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে কথা উঠলেই কিছু নাম উচ্চারিত হয়। কিন্তু সব নামই ডান ও বামের। আসল নামটি উচ্চারিত হয় না। যেন সমীহই করে খোদ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। যেন ভাসুরের নাম মুখে নিতে মানা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভেতর মিঠুর প্রভাব এতোটাই প্রবল। যে কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মিঠুকে তলব করলে তিনি সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুদকের চিঠির জবাবে পাল্টা নসিহত করেন।
অথচ আলোচিত এই ‘মিঠু’ নিছক ‘ইউনিসেফ’র মীনা কার্টুনের মিঠু নন। তিনি মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া ডন। যার ইশারায় স্বাস্থ্যখাত ওলটপালট হয়ে যায়। মন্ত্রী-সচিব বদল হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে যিনিই দায়িত্বে থাকুন স্তব্ধ হয়ে যায় দুদকের ‘সাঁড়াশি অভিযান’। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে দুদক মাঝেমধ্যেই মিডিয়া ট্রায়াল করে। ‘কাউকে ছাড়া হবে না’ জাতীয় ভাঙা রেকর্ড বাজায়। কিন্তু চ‚ড়ান্তভাবে দেখা যায়, যাকে কিংবা যাদেরকে ধরা হয় তিনি মিঠু নন-মিঠুরই প্রতিপক্ষ মাত্র।
মিঠুরই দেয়া তালিকা ধরে কিছু লোককে শায়েস্তা করে দুদক। মিঠুর সহযোগী হিসেবে তার পথ নিষ্কন্টক করা মাত্র। মিঠুকে রক্ষার্থেই দুদকের এই আইওয়াশ। কারণ-মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর কোনো দুর্নীতিই নাকি খুঁজে পায় না সংস্থাটি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালে যদি মিঠু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে শুরু হওয়া তদন্তটি আলোর মুখ দেখতো তাহলে স্বাস্থ্যখাতে পরবর্তী ঘটনাগুলোর জন্ম হতো না।
‘আফজাল-কান্ড’ মিঠু প্রযোজিত চিত্রনাট্য মাত্র। দুদকের পরিবেশনায় আফজালের ‘দেশত্যাগ’ নাটক সংস্থাটির কতিপয় কর্মকর্তার আন্তরিক সহযোগিতারই প্রয়াস মাত্র। ঘটনাটি তখন এবং এখনও সংবাদকর্মীদের মুখে মুখে। এরই ধারাবাহিকতায় হালের করোনায় মাস্ক-পিপিই কান্ড। একই সুতোয় গাঁথা সাহেদ-ডা. সাবরিনা-আরিফ কান্ডও। মিঠু শারীরিকভাবে দেশে অনুপস্থিত। অথচ এখনো দেশের স্বাস্থ্যখাত তারই নিয়ন্ত্রণে। এই করোনাকালেও তার সিন্ডিকেট বেশি সক্রিয়। মানহীন মাস্ক সরবরাহ কেলেঙ্কারিতে মিঠুর বিষয়েও দুদক অনুসন্ধান করছে বটে। কিন্তু তার পুরনো অনুসন্ধানগুলো ধামাচাপা দিয়ে।
চার বছরের বেশি সময় ধরে দুদকেই ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে তার অনুসন্ধান। এ বিষয়ে টুঁ-শব্দটি নেই। এমনকি দুদকের সুপারিশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ঘোষিত ‘কালো তালিকাভুক্ত ১৪ ঠিকাদারের’ মধ্যেও তার নাম নেই। চুনোপুঁটিদের ‘কালো তালিকায়’ রেখে কার ছত্রছায়ায় বারবার বেঁচে যাচ্ছেন মিঠু তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
দুদক সূত্র জানায়, মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার নামে মিঠুর হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ‘কোনো প্রমাণ’ পায়নি দুদক। মুখ রক্ষায় এক পর্যায়ে তার সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়। দুদকের সেই নোটিশকে তিনি পাত্তাই দেননি। ২০১৬ সালে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে একটি ‘নন-সাবমিশন’ মামলা করে মিঠুর বিরুদ্ধে। পরে রহস্যজনক কারণে থেমে যায় সেই মামলার তদন্ত। আরেকটি অনুসন্ধানে মিঠুর ১৬টি প্রতিষ্ঠানের রেকর্ডপত্র চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেয় দুদক। রহস্যজনক কারণে থেমে যায় মিঠুর সেই অনুসন্ধানও।
তবে তার বৃহৎ দুর্নীতির অভিযোগটির অনুসন্ধান শুরু হয় ২০১৩ সালে। মিঠু এবং তার স্ত্রী রংপুর হাসাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি নিশাত ফারজানা অনুসন্ধানটির বিষয়বস্তু। মিঠু-ফারজনার তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি দেয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরে। ওই চিঠি চ্যালেঞ্জ করে রিটের মাধ্যমে অনুসন্ধান থামিয়ে দেন মিঠু দম্পতি।
চার বছর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ২০১৭ সালে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। ফের অনুসন্ধান শুরু হলে দুদকের অভ্যন্তরে থাকার মিঠুর শুভাকাঙ্খী কর্মকর্তারা ফাইলটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। আশ্রয় নেন ক‚টকৌশলের।
জানা গেছে, প্রশাসন ক্যাডার থেকে দুদকে প্রেষণে আসা পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর ব্যবসায়িক অংশীদার। সহোদর কাজী শাহ আলমের মাধ্যমে মিঠুর সঙ্গে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করেন। এই কর্মকর্তা এক সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। দুর্নীতির ফাইলগুলো ধামাচাপা দিতে ওই কর্মকর্তাকে মিঠুই দুদকে প্রেষণে পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করেন। মিঠুর দুর্নীতির অংশীদার এ কর্মকর্তা নিজের নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতির একটি ফাইল তৈরি করেন। এটির তদন্তের দায়িত্ব রাখেন নিজের নিয়ন্ত্রণে।
নতুন সৃষ্ট ফাইল এবং মিঠুর ফাইল ‘একই ধরণের’ উল্লেখ করে মিঠুর ফাইলটিও নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য কমিশনে চিঠি দেন। কমিশন সেটি মঞ্জুর করেন। এ চিঠির ভিত্তিতে অনুসন্ধান তদন্ত-১ এর মহাপরিচালকের নিয়ন্ত্রণে থাকা মিঠু দম্পতির ফাইলটি এ কর্মকর্তা নিজের কব্জায় নেন। আর এভাবেই এই কর্মকর্তার কাছে নিরাপদে ধামাচাপা পড়ে আছে স্বাস্থ্যের মাফিয়া ডন মিঠুর বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ সম্বলিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তার সহযোগিতায়ই মিঠুর শিস্য আফজাল হোসেন দেশত্যাগ করেন।
সূত্রমতে, দুদকে মিঠুর বিরুদ্ধে রয়েছে এক ডজনের বেশি অনুসন্ধান ও তদন্ত। এর মধ্যে রয়েছে একটি মামলাও। এছাড়া ২০১৬ আলোচিত পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতেও মিঠুর নাম আসে। নামে-বেনামে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারকারী হিসেবে যে ৩৪ বাংলাদেশির নাম প্রকাশিত হয় মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু তাদের একজন। এ কারণে মিঠুর ব্যাপারে দুদকের তথ্যানুসন্ধান ও তদন্তের বিষয়টি প্রথম দিকে বেশ গুরুত্ব পায়। মিঠুকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চেয়ারম্যান উল্লেখ এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চায় দুদক।
২০১৬ সালের মে মাসে দেয়া ওই চিঠিতে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে স্বাস্থ্য সেক্টরে বিভিন্ন উন্নয়ন, সেবা খাতে যে সব কাজ বাস্তবায়ন করেছে, চলমান আছে এবং ওষুধ-মালামাল-যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে সেগুলোর প্রশাসনিক অনুমোদন, বরাদ্দপত্র, প্রাক্কলন-টেন্ডার, কোটেশন, দাখিলকৃত টেন্ডার, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কার্যবিবরণী, কার্যাদেশ, কার্যসমাপ্তি প্রতিবেদনসহ প্রাসঙ্গিক সব রেকর্ডপত্র সে বছর ৩০ মের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু মিঠুর ইশারায় চলা স্বাস্থ্য অধিদফতর কোনো রেকর্ডপত্রই দেয়নি। রহস্যজনকভাবে দুদকও এ নিয়ে আর আগ্রহ দেখায়নি। দুদকের সহকারী পরিচালক সিরাজুল হক ওই অনুসন্ধানটির কর্মকর্তা ছিলেন।
দুদকের হাতে এখনও অধরা মিঠুর নাম ফের আলোচনায় আসে করোনায় মাস্ক-পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি সরবরাহে দুর্নীতির ঘটনায়। দুদক পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে একটি টিম অনুসন্ধান চালাচ্ছে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় মেসার্স জেএমআই হাসপাতাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমেটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, তমা কনস্ট্রাকশনের সমন্বয়কারী (মেডিক্যাল টিম) মতিউর রহমান, ‘লেক্সিকন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনো ট্রেড লিমিটেড’র মালিক মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু, এলান কর্পোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম আমিন এবং মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেডের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরকে তলব করে। গত ৮ এবং ৯ জুলাই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও আমিনুল ইসলাম আমিন অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে সময় প্রার্থনা করেছেন। বাকি তিনজনকে টানা ৫ ঘণ্টা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু দুদকের তলবি নোটিশ পাত্তাই দেননি। বরং একজন আইনজীবীকে দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে দুদকের অনুসন্ধানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। তিনি বলেন, আমি পরিবারসহ ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চলে আসি। গত ৫ বছরে গড়ে এক মাসও দেশে অবস্থান করিনি। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এবং অসুস্থতাজনিত কারণে আমি হাঁটা-চলায় অপারগ। এ জন্য আমার পক্ষে সশরীরে হাজির হয়ে জবাব দেয়া সম্ভব নয়।
মিঠু দাবি করেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি কোনো দিনই আমদানি অথবা সরবরাহ করেননি। তার সিন্ডিকেটকে ‘কাল্পনিক জুজু’ বলে উল্লেখ করেন। তবে দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব ভট্টাচার্য জানান, করোনাকালের দুর্নীতির বিষয়ে দুদক শূন্য-সহিষ্ণুতা নীতি অবলম্বন করছে। আলোচিত মিঠু যে বক্তব্য পাঠিয়েছেন সেটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় না আসায় দুদক টিম সেটি গ্রহণ করেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।