Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পর্যটনে ছন্দপতন

রাজস্ব ক্ষতি হাজার কোটি টাকা : ঈদুল আজহার পর হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেয়ার দাবি

শামসুল হক শারেক কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

পর্যটকশূন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। করোনায় দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস ধরে দেশের প্রধান এ পর্যটন এলাকায় হোটেল-মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা। এতে স্থবির হয়ে আছে কক্সবাজারের পর্যটন খাতের সাথে জড়িত সাড়ে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান। মারাত্মক ক্ষতির মুখে পর্যটন নির্ভর ৫ লক্ষাধিক মানুষ। থুবড়ে পড়েছে ব্যাংক বিনিয়োগের হাজার হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। তাই ঈদুল আজহার পর কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে হোটেল মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার দাবি উঠছে। 

জানা গেছে, গত শনিবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সমন্বিত এক সভায় কক্সবাজারের হোটেল মোটেল এবং পর্যটন স্পটগুলো ঈদুল আজহার আগ পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হওয়ায় কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্র এবং পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদুল আজহার আগে খুলে দেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই।
এদিকে, ঈদুল আজহার পর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে হোটেল মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তারা জানায়, ইতোমধ্যে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ, রেস্টুরেন্ট, পরিবহণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ সাড়ে ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ৫ লক্ষাধিক পর্যটন নির্ভর মানুষ। বেকার হয়েছে ২০-৩০ হাজার শ্রমিক কর্মচারীসহ ২ লাখ মানুষ। এক্ষেত্রে প্রতি মাসে ৩ শত কোটি টাকা করে হলেও সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানায়, গার্মেন্টসসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল মোটেলগুলো খুলে দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস সময়েও কক্সবাজারে করোনা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হওয়ায় কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্র এবং পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদুল আজহার আগে খুলে দেয়ার অনুমতি দিচ্ছে না জেলা প্রশাসন।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স এসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের সাড়ে ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল, ১৪০ টিরও অধিক রেস্টুরেন্ট, ২ শতাধিক ট্যুর অপারেটর অফিসসহ পর্যটন শিল্প নির্ভর প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর সাথে অর্ধশত পরিবহন সংস্থা ও বিমান পর্যটক পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। সব কিছুই এখন বন্ধ। আর এর সাথে জড়িত শত শত পরিবারের হাজার হাজার মানুষ এখন বেকার।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল কাশেম সিকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, সাড়ে তিন মাসের ক্ষতি পোষাতে ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রণোদনা দাবি করা হয়েছে। তাতে কিছুটা হলেও বেকার কর্মচারীদের সান্ত¦না দেয়া যাবে। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আজহার পর হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া হবে বলে তিনি আশা করেছেন।
পাঁচ তারকা হোটেল সীগালের সিইও ইমরুল হাসান রুমী বলেন, দীর্ঘ লকডাউনে কক্সবাজারের পর্যটনে ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। এসময় শুধু সীগালের ক্ষতি হয়েছে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা। তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আজহার পর হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দিলে ভালো হবে বলে মনে করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের পর্যটন খাতে হোটেল মোটেলসহ প্রতিষ্ঠান মালিক ও বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগ আছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজার ভ্রমণ করে থাকেন ৫০ লক্ষাধিক দেশি-বিদেশী পর্যটক। আর এই সময়ে কক্সবাজারের ব্যবসায়ীদের হাতে টার্নওভার হয়ে থাকে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে কক্সবাজারের পর্যটন নির্ভর সাড়ে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে করোনাকালীন লকডাউনে স্থবির হয়ে আছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিশাল বিনিয়োগ।
এ প্রসঙ্গে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার এমপি আশেকুল্লাহ রফিক বলেন, করোনা সংক্রমণে লকডাউনের উপকারিতা কিছুটা হলেও পাওয়া গেছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়েছে, তা বলা যায় না। এখনো বিভিন্ন জায়গায় সংক্রমণ আছে। তাই হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ঈদুল আজহার পর সব পক্ষের সাথে কথা বলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে পর্যটন ব্যবসায় পাইওনিয়র কক্সবাজার সদরের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, গত সাড়ে তিন মাসে পর্যটন সেক্টরে লকডাউনে জনগণের ক্ষতির পরিমাণ বলা না গেলেও প্রতিমাসে ২-৩ শত কোটি টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সব সেক্টরে কাজ চলছে। আর কম হলেও কক্সবাজারের পর্যটন খাতে দশ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এটি সরকারের বড় রাজস্ব খাত। বিনোদন কেন্দ্রগুলো এভাবে বন্ধ রাখা ভুল পলিসি বলে মনে করি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া দরকার।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় কক্সবাজারের সকল হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ, রেস্টুরেন্টসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ