পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, অর্থ আত্মসাতসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গত ৬ জুলাই থেকে প্রকাশ্যে আসে রিজেন্ট হাসপাতালের একের পর এক অনিয়ম। তার বিচরণ ছিল প্রতারণার প্রতিটি স্তরেই। এরই মধ্যে র্যার সংগ্রহ করেছেন প্রতারণার নানা তথ্য। তদন্ত করছে একাধিক টিম। খবর সংশ্লিস্ট সূত্রের।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সাহেদ মহাপ্রতারক। দেশে মহামারি করোনাকালে যিনি চিকিৎসাসেবা নিয়ে প্রতারণা করতে পারেন সে নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারেন। তার এমন প্রতারণার কারণে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাহেদ করিম একজন উঁচুমানের প্রতারক। তার বাড়ি সাতক্ষীরা হলেও তিনি বাড়ি না গিয়ে বিভিন্ন গাড়ি পরিবর্তন করে আশপাশে ঘুরছিলেন। অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশেও তিনি অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। সাহেদকে গ্রেফতারের জন্য আগে থেকেই সীমান্ত এলাকাগুলোতে র্যাবের নজরদারি ছিল।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, রিজেন্ট গ্রুপ ও ঢাকা রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিম ওরফে সাহেদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকায়। সাহেদ ১৯৯৮ সালে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার দাদার বাসায় থাকতেন তিনি। পিলখানায় রাইফেলস স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। এরপর আর লেখাপড়া করেননি সাহেদ। সাহেদের বাবার নাম সিরাজুল করিম। মা সাফিয়া করিম ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সাহেদের যত প্রতারণা :
বিএনপির নেতা পরিচয়ে ২০০৭ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের অনুমোদন নেন সাহেদ করিম। তবে তিনি ওই সময় হাসপাতাল করেননি। চালাতেন ক্লিনিক। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি আবার ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। গত পাঁচ বছর ধরে সেন্টার ফর পলিটিক্যাল রিসার্চ (রাজনীতি গবেষণা কেন্দ্র) নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালাতেন সাহেদ। নিজেকে কথিত বুদ্ধিজীবী বা রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি।
এমএলএম ব্যবসা প্রতারণা : ২০০৯ সালের জুলাই মাসে প্রতারণার মামলায় সাহেদ গ্রেফতার হয়েছিল। তখন কয়েক মাস জেলে খেটেছেন তিনি। তবে প্রতারণা থামেনি, বরং মাত্রা বেড়ে যায় তার। ২০১০ সালের দিকে সাহেদ ধানমন্ডি এলাকায় বিডিএস কিক ওয়ান এবং কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি (কেকেএস) নামে দুটি এমএলএম কোম্পানি খুলেন। ২০১১ সালে শত শত গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫শ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সাহেদ করিম। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দেন প্রতারক সাহেদ। ওই সময় এমএলএম কোম্পানির সব গ্রাহক তাকে মেজর ইফতেখার করিম নামে জানতেন।
এরপর ‘বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিসে’ চাকরির নামে অনেক আবেদনকারীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারক সাহেদ করিম। ২০১১ সালে তাকে প্রতারণা মামলায় আবারও গ্র্রেফতার হয়েছিল। টাকার বিনিময়ে দ্রুত জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর এমএলএম প্রতারণায় আত্মসাৎ করা টাকা দিয়ে রিজেন্ট গ্রুপের নামে ব্যবসা শুরু করেন। চালু করেন ঢাকা রিজেন্ট হাসপাতাল।
বাটপারিতে সাহেদের পটুতা : নিজের বিএনপির নেতা পরিচয়ে দিলেও সরকার পরিবর্তন হলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় ব্যবহার করতে তিনি। এছাড়াও তিনি নিজেকে কখনও অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, কখনও গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ, আবার কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বলে পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন। ‘নতুন কাগজ’ নামে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা খুলে নিজেকে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জাহির করে অর্থের বিনিময়ে টক শো’তে অংশ নিতেন সাহেদ। এরপর থেকে নিজেকে বড় সাংবাদিক বলে পরিচয়ও দিতেন অনেকের কাছে। কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্পন্সর করে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতেন। এরপর তার হাসপাতাল, অফিস, ও বাসার দেওয়ালে সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তোলা ছবি বাঁধাই করে টাঙিয়ে রাখতেন। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবিকে পুঁজি করেই রিজেন্ট গ্রæপের মালিক সাহেদ অপকর্ম করে বেড়াতেন।
রোগী থেকে টাকা নিয়েছে, ক্ষতিপূরণ চেয়েছে সরকার থেকেও : করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে করোনা রোগীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেয়ার কথা না। তবে র্যাব অভিযানে গিয়ে দেখেছে, রিজেন্ট রোগী প্রতি দেড় লাখ, দুই লাখ ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা বিল আদায় করত। পাশাপাশি ‘রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে’ এই বাবদ সরকারের কাছে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ বিল জমা দিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল। অধিদফতর হয়ে সেই বিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রায় অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় ছিল। তবে এখনও কোনও অর্থ ছাড় হয়নি।
যত প্রতারণার মামলা : সাহেদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি, উত্তরাসহ বিভিন্ন থানায় ৩২টি মামলা রয়েছে। মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড থেকে ছয় কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার নথিতে নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মুহাম্মদ শহীদ বলে পরিচয় লেখা রয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে দুটি মামলা চলছে রয়েছে, যা এখনও চলমান। ব্যাংকিং সেক্টরেও তার প্রতারণার চাল ছিল। কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এখন পর্যন্ত একটি টাকাও পরিশোধ করেননি এই প্রতারক। সারাদেশ প্রতারক সাহেদের নামে অর্ধশত মামলা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।