Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গতি বাড়াতে একমত এডিবি

দেশে করোনার প্রভাব ৪০ প্রকল্পে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

মহামারী করোনার প্রভাবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত ৪৯টি প্রকল্পের মধ্যে কমপক্ষে ৪০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি হ্রাস পেয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে এবছর চুক্তির বাস্তবায়ন ২০ ভাগ কমে যেতে পারে এবং এডিবি থেকে বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ তহবিল প্রাপ্যতা কমতে পারে।

এডিবি’র একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এডিবি’র সঙ্গে বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ চুক্তি সম্পাদন হয়েছে এবং অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে বিঘিœত হওয়ায় এগুলো বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এডিবি’র ওই প্রতিবেদনে। প্রকল্প বাস্তবায়নের এই অবস্থার প্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণে গতকাল বুধবার অনলাইনে ভার্চুয়াল ত্রিপক্ষীয় দাফতরিক পর্যালোচনা সভা বা টিপিআরএম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি চলতি বছরে এ ধরনের প্রথম সভা।
বৈঠকে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে একমত হয়েছে বাংলাদেশ, এডিবি ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণ যাতে করে এর সুফল ভোগ করতে পারে- সে বিষয়ে একমত হয়েছে সংস্থাগুলো। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভার্চুয়াল টিপিআরএম-এ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং এডিবির পক্ষে কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ নেতৃত্ব দেন। সভায় প্রায় ২৫০ জন সিনিয়র সরকারী কর্মকর্তা, প্রকল্প পরিচালক এবং এডিবি কর্মীরা অংশ নেন। সভায় মনমোহন প্রকাশ বলেছেন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করে দ্রুত জনগণকে এর সুফল পৌঁছে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। মহামারি-সামাজিক-অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাকে আমরা সমর্থন করছি।

কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রকল্প পরিচালকদের মনমোহন প্রকাশ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হবে। সমস্যা সমাধানের মনোভাব, সৃজনশীলতা, নতুন প্রতিশ্রুতি এবং নতুন প্রযুক্তি দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে করোনার ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা বিশেষভাবে মেনে চলার কথা বলেছেন এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর। তিনি বলেন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাড়াতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বড় চুক্তিগুলোর অনুমোদনের প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা। বড় চুক্তিগুলোর বিপরীতে দ্রুত অর্থ ছাড়, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধিনিষেধ মেনে চলা, প্রকল্পের জনবল এবং সুবিধাভোগীদের ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

বৈঠকে প্রকল্পগুলোর ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব মূল্যায়ণ করা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা হয়ে উঠতে পারে এমন প্রধান ইস্যুগুলি নিয়ে আলোচনা হয়, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয় এবং অননুমোদিত প্রস্তাবিত পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়। গত ৩০ জুনের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের ছয়টি খাতের ৪৯টি প্রকল্পে ঋণ এবং অনুদান হিসেবে এডিবি’র মোট অর্থায়ন দাড়ায় ১ হাজার ৮১ কোটি ডলার। এর মধ্যে চলতি বছরের অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর জন্যও ৭৪ কোটি ২০ লাখ ডলার রয়েছে। এডিবি’র অর্থায়নকৃত প্রকল্পগুলির মধ্যে ১২টি পরিবহণ খাতে; শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নয়টি; বিদ্যুৎ খাতে আটটি; পানি, নগর অবকাঠামো ও সেবা খাতে আটটি; কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পল্লী উন্নয়ন খাতে সাতটি এবং আর্থিক খাতে রয়েছে পাঁচটি। এগুলোর মধ্যে ৫৫ ভাগই অর্থায়ন রয়েছে পরিবহণ ও জ্বালানি খাতে।
গতকালের বৈঠকের পূর্বে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছিল এডিবি। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ মার্চ পর্যন্ত ভাল করছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হলে লকডাউন দেওয়ার পর কর্মী ও প্রকৌশলীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায় সবগুলো প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় থাকা চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন হয়নি, তহবিল ছাড় হয়নি, এবং সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর।

সরকার লকডাউন তুলে দেওয়ার পর বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সীমিত পরিসরে শ্রমিকরাও তাদের কাজের জায়গায় ফিরতে শুরু করেছে। গতকালের বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়, বিশেষ উদ্যোগ কার্যকর হলে যথাসময়ে প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ