Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা সংকট কাটিয়ে বরিশাল ও শরিয়তপুরে নদীভাঙন রোধে ১৩শ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত এগিয়ে চলছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২০, ৩:৩৫ পিএম

করোনা সংক্রমনে পদ্মা এবং কির্তনখোলার ভয়াবহ ভাঙন থেকে বরিশাল ও শরিয়তপুরের বিশাল এলাকা রক্ষা প্রকল্পের অগ্রগতি কিছুটা পিছিয়ে গেলেও পূূর্ণদ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ১ হাজার তিনশ কোটি টাকার সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে প্রকল্প দুটি বাাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর পক্ষে খুলনা শিপইয়ার্ড। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এ দুটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে বরিশাল মহানগরী ছাড়াও শরিয়তপুরের ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলো কির্তনখোলা ও পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও খুলনা শিপইয়ার্ডের দায়িত্বশীল মহল।
প্রকল্পের আওতায় প্রায় এক হাজার ৭৫ কোটি টাকা ব্যায়ে শরিয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরার প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকা পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষায় খুলনা শিপইয়ার্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ফলে গত বছরের মত চলতি বর্ষা মৌশুমেও ঐসব এলাকায় পদ্মার ভাঙনের তীব্রতা হ্রাস সহ তা প্রায় শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শরিয়াতপুরের ভাঙন রোধ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকায় ৪১ লাখ জিও ব্যাগ ডাম্পিং-এর লক্ষ অতিক্রম করে ৪২ লাখেরও বেশী ডাম্পিং সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন মাপের ৩২ লাখ সিসি ব্লক ডাম্পিং-এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ব্লক তৈরী সম্পন্ন করে জিও ব্যাগ-এর ওপর প্লসমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া নদী গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর মডেল স্ট্যাডি অনুযায়ী পদ্মার ভাঙন কবলিত এলাকার বিপরীতে জেগে ওঠা চরসমুহ পূণর্বিন্যাস করতে প্রায় ১ কোটি ৫৪ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড প্রায় ৪৭ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারন সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে ভিন্ন একটি প্রকল্পের আওতায় বরিশাল মহানগরী সংলগ্ন বেলতলা ও চরবাড়িয়ার প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে কাজ করছে খুলনা শিপইয়ার্ড। প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড ২১০ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ ৩.৩ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধসহ নদীর গতিপথ পরিবর্তনে ড্রেজিং করছে। তবে গত ৩০ এপ্রিল কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগে প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী ৩১ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শিপইয়ার্ডের দায়িত্বশীল মহল। প্রকল্পের আওতায় সিটি করপোরেশনের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টকে ভাঙন থেকে রক্ষায় প্রায় ১ হাজার ফুট স্টিল সীট পাইলিং-এর কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের আওতায় ৪টি বেসরকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরিশাল নদী বন্দরের অপর পাড়ে চরকাউয়া এলাকায় আরো দুই কিলোমিটার এলাকা ভাঙন রোধে কাজ করছে।
ইতোমধ্যে শিপইয়ার্ড প্রকল্প এলাকায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার জিও ব্যাগ-এর মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ব্যাগ ডাম্পিং সম্পন্ন করেছে। এসব জিও বাগের ওপরে বিভিন্ন সাইজের যে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ সিসি ব্লক প্লেসমেন্ট করার কথা রয়েছে। যারমধ্যে সাড়ে ৩লাখ ব্লক তৈরী ও প্লেসমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে শিপইয়ার্ড কতৃপক্ষ। অপরদিকে ভাঙন কবলিত এলাকায় কির্তনখোলা নদীর শ্রোত পরিবর্তনে জেগে ওঠা চর সমুহ পূণর্বিন্যাস করে প্রবাহ সহজ করতে প্রায় ৩৯ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কির্তনখোলা নদীর মূল প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্থ করে ভাঙনের গতি বৃদ্ধিকারী চর সমুহের প্রায় ৩৩ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
শরিয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার বিশাল এলাকার ভাঙন রোধে ২০১৭ সালের শেষভাগে ‘একনেক’ প্রায় ১২শ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। অপরদিকে বরিশাল মহানগরীর বেলতলা খেয়াঘাট থেকে চরবাড়ীয়া এলাকার বিস্তির্ণ জনপদকে কির্তনখোলার ভাঙন থেকে রক্ষায় ২০১৮-এর প্রথম ভাগে প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার অপর একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্প দুটি অনুমোদনের সময় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তা নৌ বাহিনীর মাধ্যমে ‘ডিপিএম পদ্ধতি’তে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়।
কিন্তু নানা জটিলতা আর কালক্ষেপনে শরিয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরা প্রকল্পটি একনেক-এর অনুমোদনের ১১মাস পরে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটিতে অনুমোদন লাভ করে। ইতোমধ্যে ঐ এলাকার বিশাল জনপদ পদ্মার করাল গ্রাসে বিলীন হয়। যা ছিল দেশের ইতিহাসে এ যাবতকালের একক সর্বগ্রাসী ও ভয়াবহ নদী ভাঙন। এর পরেই পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড তড়িঘড়ি করে ২০১৯-এর ১৪ জানুয়ারী খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে। বরিশালে কির্তনখোলার ভাঙন রোধে ২০১৮-এর ১৩ অক্টোবর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে ২০৯ কোটি টাকার ভিন্ন একটি চুক্তি সম্পাদন করে খুলনা শিপইয়ার্ড।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ