পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণে স্থবির হয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্ব। সংক্রমণ কমে আসায় অনেক দেশই এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। খুলে দেয়া হচ্ছে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা ছুটি কাটিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরাও সেসব দেশে ছুটছেন শিক্ষাকার্যক্রমে যোগ দেয়ার জন্য। তবে বিপাকে পড়েছেন বিদেশে শিক্ষা লাভের জন্য সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনো ঊর্ধ্বমুখী থাকা এবং ভুয়া সার্টিফিকেটের জেরে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, বন্ধ করে দিয়েছে বিমান চলাচল। ফলে ছুটি নিয়ে দেশে আসা বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবং নতুন করে ভর্তির সুযোগ যারা পেয়েছেন তারা শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের পর পাওয়া বৃত্তি কাজে লাগানো নিয়েও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অনেকে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুটি কয়েক স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ও বাটপারের (তাদের মতে) কারণে আজকে বহির্বিশে^ বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে, তাদের অপকর্মের কারণে আজকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের।
বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির এখনো তেমন উন্নতি হয়নি। অনেক দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর সীমান্ত খুলে দেয়ায় ৫৪টি দেশের নাগরিকেরা শেনজেন ভিসার সুবিধা ভোগ করবেন। তবে ওই তালিকায় নেই বাংলাদেশ। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। করোনার কারণে দূতাবাসগুলো বন্ধ। কত দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, টিউশন ফি বেড়ে যাবে কি না, সব নিয়ে ভাবতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষার্থী দেশের বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সবচেয়ে বেশি যান মালয়েশিয়ায়। এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, ভারত, চীন ও জাপান। এ ছাড়া অন্য দেশেও বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিক্ষামূলক পরামর্শক সংগঠন ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের কনসালটেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফ্যাকড-ক্যাব) জানিয়েছে, বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখের মতো শিক্ষার্থী তাদের বিভিন্ন এজেন্সিতে পরামর্শের জন্য যান।
গত বছরের শেষ দিকে করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করে। এ বছরে এসে তা মহামারি আকার ধারণ করেছে। যেসব দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যান, সেসব দেশেও করোনা ছড়িয়েছে। যেখানে প্রকোপ সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, ক্লাস চলে অনলাইনে। বাংলাদেশেও প্রতিদিন করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যেসব শিক্ষার্থী বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে নানা কারণে দেশে এসেছিলেন এবং যারা গ্রীষ্মের সেশনে যাওয়ার কথা ছিল, তারা এখন আটকা পড়েছেন।
ইউনিভার্সিটি অব মিলানের শিক্ষার্থী কাওছার মাহমুদ ইতালিতে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করলে সেসময় দেশে ফিরে আসেন। তবে এতো দীর্ঘ সময় তাকে আটকা পড়তে হবে ভাবেননি। এর মধ্যে ইতালির জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে গেছে, সামার সেমিস্টারও শুরু হয়েছে। কাওছারও ইতালি ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট কান্ডে অক্টোবর পর্যন্ত ইতালিতে বাংলাদেশি নাগরিক প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন শিক্ষা কার্যক্রম কিভাবে সচল রাখবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। একই অবস্থা রোমের সাপিয়েঞ্জা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান হাসানের।
জাপান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে টোকিও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির (টিএমইউ) ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স (ইইসিএস) বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তৌহিদা তাবাসসুম জানান, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কাজে দেশে আসেন গত ২ মার্চ। কাজ শেষে প্রথমে ১৭ মার্চ এয়ারএশিয়া বিমান সংস্থায় টিকিট কাটা ছিল জাপানে ফেরার জন্য। কিন্তু অনিবার্য কারণে এয়ারএশিয়া তাদের যাত্রা বাতিল করে। পরবর্তীতে ২৮ মার্চ শ্রীলংকান এয়ারলাইন্সে করে জাপানে ফেরার কথা ছিল। সেই যাত্রাও বাতিল হয়েছে।
তারিন আহসান যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামায় এমবিএ পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। কথা ছিল জুনে যাবেন। কিন্তু সেটা পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়ার কথা। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি জমা দিতে বলা হয়েছে। ভর্তি ফিসহ আনুষঙ্গিক কাজে লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু তারিন বুঝতে পারছেন না, তিনি যেতে পারবেন কি না বা কীভাবে কী করবেন।
রাজু আহমেদ জনি মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াশুনা করছেন। ছুটিতে দেশে এসে এখন তিনি আটকা পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যাওয়ার কথা ধীমানের। তিনি বলেন, আগস্টে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। কানাডার মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব নিউফাউন্ডল্যান্ডে স্নাতক স্তরে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তানভীর ইসলাম। সেপ্টেম্বরে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। ভিসা করাতে পারছেন না।
বাংলাদেশের ছাত্রী মেহের আফরোজ টোকিও’র হিতোৎসবাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী। ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসেন। তিন মাসের বেশি সময় থাকতে হবে তা চিন্তা করেননি। কিন্তু করোনার কারণে এখনো আটকে পড়ে আছেন। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের প্রভাষক ফওজিয়া আহমেদ কানাডার ম্যানিটোবায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কানাডার ভিসা অফিস বন্ধ। এখানে ডিসেম্বরের মধ্যে আমাকে যেতেই হবে। আর সেপ্টেম্বরে অনলাইনে ক্লাস করতে হবে।
অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের কনসালটেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফ্যাকড-ক্যাব) সভাপতি কাজী ফরিদুল হক বলেন, ইউরোপসহ অনেক জায়গাতেই এখনো বিদেশি নাগরিকদের ঢোকার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি নিতে রাজি আছে। কিন্তু ওই সব দেশের সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। দূতাবাসগুলো নতুন করে ভিসা ইস্যু করছে না। এ জন্য শিক্ষার্থীরা অনেক চিন্তায় আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।