পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার টক-শো কার্যত বুদ্ধিজীবী হওয়ার ‘বিজ্ঞাপন’ হয়ে গেছে। পণ্যের কাটতি বাড়ানোর জন্য যেমন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়; তেমনি টিভির টক-শো’য় চেহারা দেখাতে পারলেই পরিচিতি পাওয়া যায়। গাঁটের টাকা খরচ করে দু’চারটি টক-শোতে অংশ নিতে পারলেই চেনামুখ ‘বুদ্ধিজীবী’। বুদ্ধিজীবীরা এলিট শ্রেণির হওয়ায় সমাজের ওপর তলায় অবাধ যাতায়াত। সরকারের স্তুতি গাইতে পারলে নানা সুযোগ সুবিধাও মেলে। ফলে এক শ্রেণির মানুষ টক-শোতে অংশ নিতে মরিয়া। আবার কিছু অসৎ উপস্থাপক-সঞ্চালক টাকার বিনিময়ে তাদের সুযোগ দিয়ে টিভির টক-শোকে বিতর্কের মুখে ফেলে দিয়েছেন।
দেশের কতিপয় বেসরকারি টেলিভিশন যেন বুদ্ধিজীবী তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। টক-শোর নাম করে নানান কিসিমের বুদ্ধিজীবী (!) জন্ম দিচ্ছেন। এক শ্রেণির সঞ্চালক টাকার বিনিময়ে টক-শোতে লুটেরা, নারীর দালাল, লম্পট-প্রতারকদের টিভিতে এনে জাতিকে জ্ঞানদানের সুযোগ করে দিয়ে ‘বুদ্ধিজীবী ক্যারিয়ার’ গড়ে দিচ্ছেন। বেসরকারি কতিপয় টেলিভিশন সাহেদ করিমের মতো এমন শত শত বুদ্ধিজীবী তৈরি করেছে। হঠাৎ বুদ্ধিজীবীরা টক-শো পুঁজি করে রাতারাতি হয়ে যাচ্ছেন রাঘব-বোয়াল। কেউ সমাজের ওপর তলায় গিয়ে দেশ-জাতির সর্বনাশ করছেন। টক শো’র মাধ্যমে পরিচিত ভিআইপি প্রতারক সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার ভুয়া পরীক্ষা, ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করলো। এ দায় কার?
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ যথার্থ উক্তিই করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সাহেদকে যারা টক-শোতে সুযোগ দিয়েছিলেন তাদেরও দায় রয়েছে। কারণ তিনি টক-শোকে প্রতারণার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন’। সত্যিই তাই। সাহেদের মতো অসংখ্য প্রতারক টক-শোতে অংশ নেয়ার সুবাদে নিজেদের প্রতারণার ফাঁদের বিস্তার ঘটিয়েছেন। টক-শোর মাধ্যমে গত কয়েক বছর শত শত সাহেদ তৈরি হয়েছে। ভিআইপি প্রতারক সাহেদের টিভি টকশোর একটি উক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এক টক-শোতে সাহেদ বলেছে, ‘দুর্নীতি-অপরাধ যারা করবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। রাজনৈতিক তকমা গায়ে দিয়ে কেউ রেহাই পাবে না’। একজন ভয়ঙ্কর প্রতারকের মুখে এমন কথা শুনতে হয়েছে দেশের মানুষকে শুধু টক-শোর জন্যই।
দেশে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিপ্লব ঘটে গেছে। গত দুই দশকে টেলিভিশনের সংখ্যা নজীরবিহীনভাবে বেড়েছে। সরকারের হিসেব মতে ৪৪টি টিভি চালু রয়েছে। টিভির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপুল সংখ্যক সাংবাদিকদের কর্মসংস্থান হয়েছে; কিন্তু দেশ-জাতি কী পাচ্ছে? দেশের টিভিগুলো ছাড়াও হালে অনলাইনে টিভি খুলে টক-শো করা হচ্ছে। হায়রে টক-শো! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে মুরগির ব্যাপারী সবাই টক-শো’র বিশেষজ্ঞ অতিথি।
টিভি চ্যানেলে টক-শোর প্রয়োজন নেই এটা বলা যাবে না। টিভি মিডিয়ায় দেশ-বিদেশের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, জীবন সচেতন, সমাজ সচেতন, ধর্ম, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সামাজিক নানা সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা হওয়া জরুরি। মানুষের যাপিত জীবনে প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বই-পুস্তক পড়া, যুক্তিতর্ক সব বিষয়ে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিয়ে টিভিতে আলোচনায় আগ্রহী মানুষ উপকৃত হতে পারেন। টক-শো জ্ঞানমুখী, সমাজ, শিক্ষা ও সংস্কৃতিমুখী করা যেতে পারে। বিভিন্ন বিষয়ে মেধাবী, স্কলার, পন্ডিতদের টক-শোতে এনে আলোচনা করা হলে দর্শক উপকৃত হয়। কিন্তু দেশের টেলিভিশনগুলোর কয়টি টকশোতে সেটা দেখা যায়?
দেশের অধিকাংশ টিভি চ্যানেল প্রতিদিন হরেক রকমের ৩ থেকে ৫টি পর্যন্ত টক-শো প্রচার করছে। যুক্তি তথ্য-উপাত্তের বালাইহীন এসব আলোচনা থেকে শিক্ষণীয় কিছু কী আছে? কয়েক বছর আগে দেখা যেত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা অথবা বিপরীত রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসীদের টক শোতে মুখিমুখি করা হতো। কোনো যুক্তি নেই দুই পক্ষে তর্কযুদ্ধ লেগে যেত। হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো ছাড়াও টক-শোতে চোখ তুলে নেয়ার হুমকি, মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হতো। টক-শোগুলো যদি বিশেষজ্ঞের আলোচনায় সমৃদ্ধ করা যেত, আলোচনা সমালোচনায় যথার্থ যুক্তি, তথ্য-উপাত্তের ব্যবহারের মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠতা থাকতো তাহলে টকশো থেকে অনেকেই শিখতে পারেন, নিজের বিশ্বাস ও ধারণা পুনর্মূল্যায়ন করতে পারেন। স্বয়ং রাজনীতিবিদরাও নিজেদের ভুল ত্রুটি, সবলতা ও দুর্বলতা বুঝতে পারেন, জানতে পারেন, সংশোধনের সুযোগ পান। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে টক-শোকে পয়সা কামানো, সরকারের স্তুতিমঞ্চ, বুদ্ধিজীবী বানানোর মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। প্রতারক, ধুরন্ধররা টিভির এক দরজা দিয়ে টক শোতে ঢুকছেন আর অন্য দরজা দিয়ে বুদ্ধিজীবী হয়ে বের হয়ে আসছেন।
জন্মলগ্ন থেকে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা বিশেষজ্ঞদের তেমন আনা হতো না। তারপরও টিভি টক-শোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ধরা হয়। মাঠের রাজনীতি না থাকায় টক-শোতে রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। কিন্তু গঠনমূলক আলোচনার বদলে ‘স্তুতি’কে প্রধান্য দেয়া হয়। যাদের আলোচনায় জাতি উপকৃত হতো তাদের নানাভাবে বাঁধার মুখে পড়তে হয়। যারা অপ্রিয় সত্য কথা বলেন, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা এবং বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজনৈতিক কারণে তাদের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এমনকি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। মামলা মোকদ্দমায় পড়তে হয়। এতে কেউ কেউ বিদেশ চলে যেতে বাধ্য হন।
কিছু চ্যানেলে কোন টক-শোয় অতিথি কারা হবেন, কার মুখোমুখি কে থাকবেন তাও ঠিক করে দেয়া হয়। ফলে বেশির ভাগ জ্ঞানী-মেধাবী বিশেষজ্ঞ টক-শো থেকে সরে যান। অন্যদিকে দর্শকবিহীন টক-শোগুলোতে সরকারের স্তবক সৃষ্টির কারখানায় পরিণত হয়। সঞ্চালকদের অনেকেই যেমন উপস্থাপনের নিরপেক্ষতা ভেঙে পক্ষপাতিত্ব এবং সরকারের তোষামোদী করেন; তেমনি সরকারি স্তুতি করেন এমন লোকদের বেছে বেছে আনেন। এই সুযোগে সাহেদের মতো শত শত হোয়াইট ক্রিমিনাল গাঁটের টাকা খরচ করে টক-শোতে আলোচক হয়ে যান। টক-শোর পরিচিতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রশাসন ও সমাজের ওপর তলায় অবাধ বিচরণের মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেন; একের পর এক অপরাধ করেন। হালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর টিভির টক-শোর অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, যিনি প্যারাসিটামল ওষুধের কাজ কি জানেন না; তিনিও টক-শোতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ করোনা চিকিৎসার পরামর্শ দেন।
হোয়াইট ক্রিমিনাল সাহেদ করোনা ভুয়া পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়ায় সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। সেই প্রতারক ‘সরকারের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’ জাতিকে ছবক দিয়ে নিজেই এখন পলাতক। কিন্তু সাহেদের মতো শত শত বিতর্কিত ব্যক্তিকে টক-শোর মাধ্যমে যারা বুদ্ধিজীবী বানিয়ে সমাজের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন তারা নিজেদের কাজ চালিয়েই যাচ্ছেন। গণমাধ্যমে টক শো’র নামে আবোল তাবোল লোকজনের ‘বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করাই যেন তাদের কাজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।