পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের কারণে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা টালমাটাল অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যথাযথ সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব ও করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংক্রমণ সংবাদ লুকিয়ে রাখায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় দুই হাজার চিকিৎসক। মৃত্যুবরণ করেছেন ৭০ জনেরও বেশি। অন্যদিকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় রোগীর মৃত্যু ও আহাজারি। এই অবস্থায় বেশ বিপাকেই পড়েছিলেন করোনা ব্যতিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা। আর তখনই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টেলিফোন বা ভিডিও কলে চিকিৎসা সেবা টেলিমেডিসিন। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে সরাসরি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সেবা নিতে না পারলেও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সেবা নিতে পারছেন রোগীরা। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা এখন সেবা নিতে পারছেন রাজধানীসহ সারাদেশের সেরা চিকিৎসকদের। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন রোগীদের ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে অন্যদিকে বাঁচছে সময় এবং সেবা পাচ্ছেন নামিদামি সব চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞদের।
এমনকি করোনা আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় থেকে এই টেলিমেডিসিন সেবা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছেন, এখনো নিচ্ছেন হাজারো রোগী। তবে, স্বাস্থ্য সমস্যার সবটাই অবশ্য টেলিমেডিসিনে সমাধান করা সম্ভব হয় না বলে মনে করেন চিকিৎসা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির সময় চিকিৎসার সেরা বিকল্প টেলিমেডিসিন। করোনা রোগীরাও হাসপাতালের চেয়ে বেশি সেবা পাচ্ছেন এই বিকল্প পন্থায়।
ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি প্রফেসর ড. হারুন আল রশিদ বলেন, করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর চিকিৎসকদের চেম্বার করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এসময় অনেক রোগী আক্রান্তের কথা না জেনে, অনেকে আবার তথ্য গোপন করে চিকিৎসকের চেম্বারে এসেছেন। এভাবে এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা উপকরণের অভাবে অনেক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি বলেন, টেলিমেডিসিন অনেক আগে থেকেই চালু ছিল। আগে পরিচিতরা জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নিতেন, এখন করোনার কারনে এটি জনপ্রিয় হয়েছে। চিকিৎসক এবং রোগী উভয়ই নিরাপদে থেকে জরুরি প্রয়োজনে একে অপরের সাথে কথা বলতে পারছেন।
মহামারীর সময়ে করোনার সংক্রমণ ভীতি বিরাজ করছে চিকিৎসক-রোগী উভয়ের মধ্যেই। বিশেষ করে অনেক রোগী তাদের সংক্রমণ না জেনে কিংবা জানার পরও তথ্য গোপন করে চিকিৎসা গ্রহণ করার কারণে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন বলে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনগুলো জানায়। আবার বিভিন্ন চিকিৎসকের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে গিয়েও অনেক রোগী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে মহামারির সময় চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সংক্রমণভীতি। কিন্তু রোগীদের চিকিৎসা দরকার। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে সবার সামনে জনপ্রিয় হতে থাকে টেলিমেডিসিন সেবা।
রোগীরা তাদের পরিচিতি চিকিৎসক কিংবা আগে যেসব চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন সেসব চিকিৎসকের কাছে ফোন করে চিকিৎসা পরামর্শ নিচ্ছেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকদের সাথে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ অ্যাপস ব্যবহার করে ভিডিও ফোনের মাধ্যমে দেখাচ্ছেন নিজের সমস্যা। চিকিৎসকরাও ভার্চুয়াল মাধ্যমেই দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশন, পরীক্ষার পরামর্শ, দেখছেন পরীক্ষার রিপোর্টও।
শুধু সাধারণ রোগীরাই নয়, করোনাকালে বিভিন্ন হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর করোনা আক্রান্ত রোগীরাও হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসময় তারা হাসপাতালের কল সেন্টার, বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের হটলাইন নাম্বার, পরিচিত চিকিৎসকের ফোন নাম্বারে, বিভিন্ন চিকিৎসকের তৈরি ফেসবুক পেজেসহ নানা মাধ্যমে চিকিৎসা পরামর্শ নিচ্ছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন তাদের দেয়া পরমার্শেও অনেকে করোনা চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।
অন্যদিকে করোনা ব্যতিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার এসব ব্যবহার করে চিকিৎসা পরামর্শ নিচ্ছেন। কলসেন্টারে, হাসপাতালে, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে অথবা সরাসরি চিকিৎসকের কাছে ফোন করছেন। চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন, কখনো এক্সরে বা পরীক্ষার সুপারিশ করছেন। রোগী পরীক্ষার ফলাফল ম্যাসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে বা ই-মেইলে পাঠাচ্ছেন। চিকিৎসকও সেই মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যবস্থাপত্র পাঠাচ্ছেন। কোন পরীক্ষা কোথায় করা যাবে, কোন ওষুধ কোথায় পাওয়া যাবে, তারও পরামর্শ থাকে কিছু ব্যবস্থাপত্রে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, প্রযুক্তি আমাদের সবকিছু সহজ করে দিয়েছে। প্রযুক্তির ছোয়ায় বর্তমানে গ্রামের একজন সাধারণ মানুষও টেলিফোনে রাজধানীর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাচ্ছেন। এটা বর্তমান সময়ে বড় একটি সেবা। যা চিকিৎসা সেবাকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। প্রত্যেকটা দুর্যোগে ক্ষতির পাশাপাশি সম্ভাবনাও দেখা দেয়। আর করোনা আমাদেরকে টেলিমেডিসিনের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে এটা আমাদের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য খুবই উপকারি হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপি বিপাকে পড়েছে করোনার উপসর্গ থাকা রোগী থেকে সাধারণ ডায়াবেটিস, কিডনী, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন অসুখে ভোগা রোগীরা। এসব রোগীরা স্বাভাবিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। এছাড়া শুধু করোনার সময়েই নয়; মফস্বল শহর বা পল্লী অঞ্চলের একজন দরিদ্র অসহায় রোগী যার ঢাকা শহরে এসে পয়সা খরচ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর সামর্থ নেই অথবা কোন জটিল রোগী যাকে অনেক দূর থেকে চিকিৎসকরে কাছে আনেত দেরি হয়ে যাবে- এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসার স্বার্থে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইলে ঘরে বসেই দূর-দুরান্তের রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন। এসব রোগীরা যাতে করোনার সময়েও স্বাভাবিক সেবা পেতে পারেন সে ব্যবস্থা করে দিয়েছে প্রযুক্তি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।