পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে কোরবানির গরুর হাটকে হটস্পট মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। করোনা মহামারীর এই সময়ে ভীড় এড়িয়ে কোরবানীর পশু কেনাবেচার জন্য তাই এবার বড় ভরসা হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। করোনাভাইরাস মহামারী সময়ে খামারি ও ক্রেতাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য ডিজিটাল হাট (www.digitalhaat.net) চালু করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশন ও ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। প্রায় দুই হাজার পশু কোরবানি এবং মাংস প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকায় হোম ডেলিভারি দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে ‘ডিজিটাল হাট’। প্রচলিত হাটে পশু কেনায় হাসিল দিতে হলেও এখানে কোনো হাসিল দিতে হবে না ক্রেতাদের।
এই হাটে ক্রেতারা ঘরে বসেই গরুর ছবি ও ভিডিও দেখার এবং ওজন জানার সুযোগ পাবেন। গরু চাষী, খামারি বা ব্যাপারিদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার সুযোগও থাকবে। এরপর নির্দিষ্ট স্থান থেকে অথবা হোম ডেলিভারির ভিত্তিতে টাকার বিনিময়ে পশু সংগ্রহ করতে পারবেন ক্রেতারা। গতকাল শনিবার সরকারি উদ্যোগে এই ডিজিটাল হাটের যাত্রা শুরু হয়েছে। হাটের উদ্বোধনের পর সরকারের তিন মন্ত্রী- স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ডিজিটাল পশুর হাট থেকে কোরবানির গরু কিনেছেন।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে ‘ডিজিটাল হাট’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা দামে গরু কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল ওয়েব পেইজ থেকে ওই দামের মধ্যে গরু দেখানো শুরু করেন। এসময় বেশ কয়েকটি গরু দেখাার পর তাজুল ইসলাম সাদাকালো একটি দেশি ষাঁড় পছন্দ করেন। এক লাখ ২৮ হাজার ৬০০ টাকার গরুর ভিডিও দেখে পছন্দ করে কেনার পর তাজুল ইসলাম মাংসের ২০ শতাংশ বাসায় দিয়ে বাকি মাংস ও চামড়া দান করে দিতে বলেন। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, পশুর দামের হাজারে ২৩০ টাকা কোরবানি খরচ। ২৩ শতাংশ যে চার্জ কসাইসহ অন্যান্য খরচ হবে এখানে সিটি কোর্পোরেশন কোনো খরচ নেবে না, হোম ডিলিভারিসহ। তাতেও রাজি হয়ে যান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।
এরপর আজকের ডিল ওয়েব পোর্টাল থেকে এক লাখ টাকা দামের একটি গরু পছন্দ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কোনবানির গরুর মাংসের তিন ভাগের একভাগ ও চামড়া দান করার ইচ্ছা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। ফুড ফর নেশন একশপ থেকে লাখ টাকায় গরু কেনেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সাদাকালো রংয়ের গরু কিনে পলক বলেন, তিনি ঈদে নিজ এলাকা সিংড়ায় চলে যাবেন। এজন্য ঢাকায় কোরবানির গরু দান করে দিতে চাই। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গরু কেনার আগ্রহ দেখালেও যে সাইট থেকে তিনি গরু কিনতে চেয়েছিলেন তা আপডেট না থাকায় আর কেনা হয়নি।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন খামারি ও অনলাইন প্লাটফর্ম নিজ উদ্যোগে ভার্চুয়াল জগতে ডিজিটাল পশুর হাট বসিয়েছেন। যেখানে ক্রেতারা সরাসরি কৃষক এবং খামারিদের কাছ থেকে পছন্দের গরু-ছাগল কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে ক্রেতা চাইলে গরু তার নির্দেশিত স্থানে পৌঁছে দেয়া হবে, এমনকি পশু কোরবানি করে মাংস পৌঁছে দেয়ার সুযোগও দিচ্ছে বিক্রেতারা। এবার সরকারি উদ্যোগে শুরু হয়েছে ডিজিটাল হাটের।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, কিছুদিনের মধ্যে এ সাইটে বিক্রির জন্য পাঁচ হাজার গরুর তথ্য আপলোড হয়ে যাবে। যেহেতু মাত্র দুই হাজার পশু প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা রয়েছে তাই আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে এখানে অর্ডার নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তমাল বলেন, পশু প্রক্রিয়াজাত করতে মূল দামের ২৩ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে ক্রেতাদের। এখান থেকেই সব ধরনের খরচ যেমন পশু পরিবহন, প্রক্রিয়াজাত থেকে শুরু করে প্যাকেট করে বাসায় পৌঁছানো খরচ বহন করা হবে।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, অনলাইনে পশু কেনায় আস্থার জায়গা তৈরি করতে চাই। এ প্ল্যাটফর্মে ৫০টি পেমেন্ট গেইটওয়ে সংযুক্ত রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, চামড়ার দাম নিয়ে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল হাট থেকে গরু কেনার পর প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় পশুর স্বাস্থ্য নিয়ে একটি সনদ দেবে। মাংস দান করার বিষয়ে সহযোগিতা চাইলেও সে ব্যবস্থা করা হবে। এ হাটে পশু কিনলে কোনো হাসিল লাগবে না। পশু কেনায় নগদ প্ল্যাটফর্মে কম চার্জে মূল্যে পরিশোধ করা যাবে। ঈদের প্রথম দিন ৪০০, পরের দিন এক হাজার এবং তৃতীয় দিন ৬০০ কোরবানির পশু প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা রয়েছে বলে জানান উত্তর মেয়র।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মহামারীকালে অনলাইনে মানুষের কেনাবেচা বাড়ছে। আগামী কয়েক বছরে এ খাতে আরো কয়েক লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কোরবানির হাটে না গিয়ে অনলাইনে পশু কেনায় সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সবাইকে ঘরে থাকতে হচ্ছে, উপায় নেই। কোরবানি দিতে হবে এই বিবেচনায় এই ব্যবস্থা। আগামী দিনগুলোতে এসব প্ল্যাটফর্মে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। আমিও এভাবে কোরবানি দিতে চেষ্টা করব।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, যে পরিমাণ পশু দেশে রয়েছে তা যথেষ্ট বরং আরও বেশি পশু রয়েছে। গতবারও ভারত থেকে দেশে পশু আসেনি। এবারও ভারত থেকে কোনো পশু দেশে প্রবেশ করবে না। সকল প্রক্রিয়ায় আমরা সাথে থাকব।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল বাজারে এবার কোরবানির পশু ক্রয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরাসরি হাটে না যেয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে এ ব্যবস্থাপনায় নতুন যাত্রা যোগ হবে। কষ্ট করে যে হাটে যাই, এটা আর করতে হবে না এটা নির্ভরশীল জায়গা হবে। আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণে ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষির ব্যবস্থা থাকা উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।