পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা সংক্রমণের মধ্যেও ঈদুল ফিতরের দুদিন আগে বাড়ি ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল- যারা বাড়ি যেতে চান, ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তারা যেতে পারবেন। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এই ঘোষণার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঈদুল ফিতরে বাড়িফেরা মানুষের আরও বেশি ঢল নামে। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। ঈদুল ফিতরের তুলনায় করোনার সংক্রমণ বেড়েছে কয়েক গুণ। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৭ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৪৮৯ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জনে।
কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সাধারণ মানুষের করণীয় বিষয়ে গত ১ জুলাই একটি সভা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটি। কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, গত ঈদের পরপরই সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল। এবারও আশঙ্কা আছে। সেই আশঙ্কা থেকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চলাচল সীমিত করার জন্য কমিটি মানুষের চলাচল সীমিত করার পরামর্শ দিয়েছে। কমিটি বলেছে, শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করার জন্য ঈদের আগের ও পরের তিন দিন চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও ভিড় কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দ যাত্রা যেন বিষাদ যাত্রায় রূপ না নেয়, সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কোনো প্রয়াসই কাজ দেবে না, ফল দেবে না লকডাউন কিংবা রেডজোন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, প্রতি বছর ঈদের সময় ৯০ লাখ থেকে ১ কোটির মতো মানুষ ঢাকা ছাড়ে। আর সারা দেশে সব মিলে সাড়ে ৩ কোটির বেশি মানুষ যাতায়াত করে। তবে এবার ঠিক কী পরিমাণ মানুষ ঈদযাত্রা করবে, সে ব্যাপারে কোনো পরিসংখ্যান নেই তাদের কাছে। এবার ভিন্ন রকম এক ঈদ ছিল ঈদুল ফিতর। ছিল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা। ছিল না গণপরিবহন। এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সীমিত পরিসরে চলছে সবই। গত ঈদে নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও ভয় তুচ্ছ করে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরেছেন অজস্র মানুষ। এইবার চলছে পরিবহন। আসন্ন ঈদুল আযহায় তবে কি নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরতে পারবেন সবাই? জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, এখনও পরিকল্পনা আমাদের তৈরি হয়নি। সময় আছে। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী আমাদের আগে জানাবেন। এই ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ঈদে পরিবহন ব্যবস্থা কেমন থাকবে, এ বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত এখনও না হলেও পরিবহন মালিক সংগঠনগুলো বলছে যাত্রী পরিবহনে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। বাস মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, এখন যে নির্দেশনা আছে, পঞ্চাশ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করার জন্য তখনও এই নির্দেশনা থাকলে আমরা পঞ্চাশ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবো। আমাদের পর্যাপ্ত গাড়ি মজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, ঈদে তো বেশি ভিড় হবেই। সরকার যদি বলে ঈদের মধ্যে এই পঞ্চাশ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। আমরা সেটা করবো না। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, ঈদে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে না। ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করতে বর্তমানে যে ১৭টি ট্রেন চলছে ঈদে সেই সংখ্যা একটিও বাড়ানো হবেনা। তিনি বলেন, ঈদে আমরা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবো না। সাধারণ মানুষকে নিরুৎসাহিত করছি, যাতে ঈদকে সামনে রেখে মানুষের মুভমন্টে কম হয়। অন্যদিকে, লঞ্চ মালিকরা বলেছেন, ইতোমধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলের বহু মানুষ ঢাকা ছাড়ায় ঈদ মৌসুমেও তারা পাবেন না কাঙ্খিত যাত্রী। আর লঞ্চের সংখ্যা যত বাড়বে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও তত বেশী হবে। লঞ্চ মালিক সমিতির উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, এবার ঈদের লোক কম হবে। ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস ট্র্যাকার। তাদের সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে কমছে করোনা সংক্রমণের হার। দুদিন আগে ৫ দিনের হিসেবে সংক্রমণ হার নিম্নগামী বলেই রিপোর্ট দিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলেছে, বাংলাদেশে সংক্রমণের ১৮তম সপ্তাহে এসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার দুটি কমছে। এমতবস্থায় ঈদ যাত্রায় হাজার হাজার মানুষ এক সাথে গ্রামের পথে রওনা করলে করোনা সংক্রমণের হার আবার বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। তাদের মতে, ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন আরও লাখো মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। এতে সংক্রমণের মেয়াদ বাড়বে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় চাপ পড়বে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়বে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমি আগেও বলেছি ঢাকা থেকে যারা যাবে, তাদের অনেকে করোনাভাইরাস বহন করেই যাবে। এতে অন্যান্য বিভাগে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। এসব লোকজন যেতে যেতে একজন অন্যজনের মধ্যে ছড়াবে। আবার তারা যে বাসায় যাবে, সেখানে তারা বাড়ির লোকজনদের মাঝে ছড়াবে। এর ফলে যেটা হবে, সারা বাংলাদেশে করোনা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়বে। ঢাকার বাইরে যে সব এলাকায় করোনা কম ছিল। সেখানে বাড়বে। অর্থাৎ মোট প্রাদুর্ভাব বাড়বে। এমনিতেই রোগীর চিকিৎসার ভালো অবস্থা নেই। ভালো মতো চিকিৎসা না হলে মৃত্যুর হারও বাড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।