Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

রিজেন্ট চেয়ারম্যান শাহেদকে খুঁজছে র‌্যাব

হাসপাতালের ৭ কর্মকর্তা রিমান্ডে উত্তরার পর মিরপুর শাখাও সিলগালা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ঘিরে রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. শাহেদকে খুঁজছে র‌্যাব। শিগগিরই তাকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। গতকাল র‌্যাব সদর দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম।

অন্যদিকে রিজেন্ট হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই করোনা সংক্রান্ত জাল সনদ প্রদানসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ওই হাসপাতালের সাত কর্মকর্তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো নয় জনকে আসামি করে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ পলাতক রয়েছেন। তাকে আমরা এখনো খুঁজছি। যখন আমরা অভিযান শুরু করেছি তখন থেকেই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতেও আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। তিনি তার মোবাইলগুলো বন্ধ করে রেখেছেন। প্রথমদিন দেখেছিলাম ফেসবুকে ছিলো কিন্তু এখন তিনি সবকিছু থেকেই নিস্ক্রিয়। আশা করছি দ্রুত তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অচিরেই শাহেদকে গ্রেফতারের সুখবর দিতে পারবেন আশা-প্রকাশ করে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গত দুই রাত ধরেই তাকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করছি। বলে রাখতে চাই, তিনি অবশ্যই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে না। যারাই আইনের ঊর্ধ্বে যাওয়ার চেষ্টা করবে আর সেই সাহস দেখাবে অবশ্যই তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম। তার বিষয়ে অন্যান্য সংস্থাও সতর্ক রয়েছে। আশা করছি তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হবে না।

অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন ভুক্তভোগীর মাধ্যমে জানতে পারি, কিছু হাসপাতাল করোনা টেস্টকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য শুরু করেছে। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেই অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছিলাম। রিজেন্ট হাসপাতাল হোম ডেলিভারির মতো বাসায় গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুততার সঙ্গে রিপোর্ট সরবরাহ করছিলো। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াই। এরপর কেঁচো খুড়তে আসলে সাপ নয়, এনাকোন্ডা বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই। গত দু’দিন ধরে রিজেন্টের বিরুদ্ধে আমরা ধারাবাহিক একটি অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তারা নমুনা নিয়ে টেস্টের সঠিক রিপোর্ট পাঠায় না। প্রায় সাড়ে চার হাজার নমুনার টেস্ট না করেই কম্পিউটার অপারেটর মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছে। এর ফলে বুঝে না বুঝে অনেকেই ভুয়া পজিটিভ হয়ে কোয়ারেন্টিনে চলে গেছেন। তারা প্রথমবার টেস্টে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা নিতেন পরবর্তী টেস্টের জন্য আবার এক থেকে দেড় হাজার টাকা আদায় করতেন।

রিজেন্টের চেয়ারম্যান শাহেদের বিষয়ে সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে তার নানা অপকর্মের কথা জানতে পেরেছি। বিভিন্ন সময় তিনি প্রতারণার দায়ে আটক হয়েছিলেন, জেল খেটেছেন। মিথ্যাকে কেন্দ্র করেই তার উত্থান। ভুয়া পরিচয় দিয়ে নানাভাবে প্রতারণা করেছে মানুষের সঙ্গে। তিনি একটা এমএলএম কোম্পানি খুলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন, যার জন্য জেলও খেটেছেন। আমরা জানতে পেরেছি তার আরো অনেক নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক লাইসেন্সও নেয়া হয়নি। উল্লেখ করতে চাই, প্রতিদিন নানা জায়গা থেকে অসংখ্য ফোন রিসিভ করছি, তারা সাহেদের অপকর্ম-অরাজকতার বিষয়ে জানাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করেই তিনি প্রতারণা করতেন। প্রতারণার জন্যই ছবিগুলো তুলেছে বলে তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। প্রতারকদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। সাহেদ সবসময়ই মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছিলো, আসলে তার কোনো পরিচয় নেই। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানুষের সঙ্গে যে অপকর্ম করেছেন, হঠকারিতা করেছেন তাতে জনগণই তাকে খুঁজে বের করে নিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এসআই শেখ রকিবুর রহমান জানান, গতকাল উত্তরা পশ্চিম থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর গাজী আসামিদের আদালতে হাজির করেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে ৭ আসামির ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের প্রত্যেককে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। গত মঙ্গলবার ৭ জুলাই রাতে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করে র‌্যাব।

উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা বলেন, করোনা টেস্ট না করে রোগীদের জাল রিপোর্ট দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে র‌্যাব মামলা করেছে। প্রতারণা ও অর্থ-আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. শাহেদ (৪৩), হাসপাতালের অ্যাডমিন অফিসার আহসান হাবীব (৪৫)সহ অন্যরা।

এদিকে, উত্তরার পর রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখাও সিলগালা করা হয়েছে। চুক্তি ভঙ্গ করে করোনা রোগীদের থেকে বিল আদায়, ভুয়া প্রতিবেদন তৈরিসহ নানা অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখাটি গতকাল সিলগালা করে দিয়েছে র‌্যাব। এর আগে গত মঙ্গলবার একই অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয় র‌্যাব। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মিরপুর ১২ নম্বরে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালটি র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে একটি দল সিলগালা করে দেয়। এ হাসপাতালটি করোনা রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্টের মিরপুর শাখার হাসপাতালটি করোনা রোগীর চিকিৎসায় নানা প্রতারণা করেছে। তারা রোগীদের স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা না করে ফেলে দিত, অথচ প্রতিটি পরীক্ষার জন্য ৩৫০০ টাকা নেয়া হতো। ২০১৮ সালে মিরপুরের এই হাসপাতালে আমি অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে সতর্ক করে দিয়েছিলাম।



 

Show all comments
  • Fatama ৯ জুলাই, ২০২০, ১:৫০ পিএম says : 0
    র‌্যাব ওকে পাবে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ