পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রথম দিকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করা হয় লকডাউন। থমকে যায় মানুষের জীবন-জীবিকা। কাজ হারিয়ে ঘরে ফিরেন শ্রমিকরা। ধসে পড়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। দুর্ভিক্ষসহ কঠিন বাস্তবতার দিকে এগিয়ে চলছিল বিশ্ব। আর তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ব অর্থনীতি সচল রাখতে ও মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন দেশ গত এপ্রিল থেকে ধীরে ধীরে শিথিল করে লকডাউন। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে থাকা ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, পর্তুগালসহ ইউরোপের দেশগুলো বর্তমানে ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে। অবশ্য পিছিয়ে নেই সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচের দেশগুলোও।
করোনার প্রকোপে মৃত্যুহারের শীর্ষস্থানে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাগরিকদের চাপে এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে লকডাউন শিথিল করেছে অনেক আগেই। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও গত জুন মাসের শুরু থেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে মানুষ। সবারই প্রত্যাশা করোনা থেকে বাঁচতে খুব শিগগিরই ওষুধ-ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে যাবে। মহামারি থেকে পরিত্রাণ পাবে বিশ্ব। বিশ্বের বাঘা বাঘা গবেষকেরাও প্রতিদিন আশার আলো দেখাচ্ছেন। তারা আশবাদী এ মাসেই যে কোনো কোম্পানির একটি ভ্যাকসিন বাজারে চলে আসবে। কারণ এর আগেও ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, রুবেলা, মিসেলস, মামস, চিকুনগুনিয়াসহ অজানা রোগকে জয় করেছে মানুষ। আর তাই করোনার ভয়াবহতাকে পেছনে ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে ইউরোপ-আমেরিকা।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জনজীবনে ফিরছে স্বাভাবিকতা। মানুষও জীবিকার প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর তাই আস্তে আস্তে উত্তোরণ হচ্ছে দেশের মন্দা পরিস্থিতির। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও করোনা থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী দুই কোটি মানুষকে ক্যাশ টাকা প্রণোদনা দিচ্ছেন। ঋণের সুদও দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। এমনকি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেউ যদি সুদ না দিতে পারেন তাহলে তাকে খেলাপি না করার কথা বলেছেন।
দেশের ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা এনজিওর মাধ্যমে প্রদান করাসহ নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। অত্যাবশ্যকীয় নয় এ রকম উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ করোনা মোকাবিলায় ব্যয় করার কথা বলেছেন। বিভিন্ন শিল্পকে চাঙ্গা করতে ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। ব্যাপকভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। করোনার মধ্যেও রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে, রিজার্ভ সর্বোচ্চ চ‚ড়ায়। করোনার দুর্যোগের মধ্যেও সমন্বিত পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ ধীরে ধীরে বাড়ছে, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে প্রচেষ্টা চলছে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞরাও আশা প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, সামনে কোরবানির ঈদ। ঈদের আগে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে একটি বড় অঙ্কের অর্থের প্রবাহ হবে। আবারও গতি পাবে দেশের অর্থনীতি। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শুধু লকডাউন কোনো কার্যকর সমাধান নয় বলেও মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তবে মানতে হবে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অর্থনীতিকে আগের পর্যায়ে নিতে হলে জনগণের স্বার্থে আরও বহুমুখী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। এদিকে ভয়াবহতার মধ্যে আশার কথা বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের হার বাড়লেও সুস্থতার হার প্রতিদিনই বাড়ছে। কমছে মৃত্যুর হার।
সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের মতো দেশে দীর্ঘদিন লকডাউন সম্ভব নয়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেই হবে। সামনে কোরবানির ঈদ। আর তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধির উপর গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। তা অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হবে। তবে খুব দ্রুতই ভ্যাকসিন পেয়ে যেতে পারি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এএসএম আলমগীর।
ভারতের প্রখ্যাত মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. জয়প্রকাশ মুলিয়িল বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে লকডাউন কোনো সমাধান হতে পারে না। কেননা এটা একটি সাময়িক ব্যবস্থা। তিনি মনে করেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
সূত্র মতে, দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে হলে, উৎপাদনমুখী কর্মকান্ড ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। না হলে এক অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে চলে যাবে দেশের আর্থিক খাত। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে বিভিন্ন দোকান-পাট, কলকারখানা স্বাভাবিক রাখার পরিকল্পনা নিতে হবে বলে মনে করেন আর্থিক খাতের অনেক বিশেষজ্ঞই।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মহামারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও জীবন ও জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অফিস-আদালত ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান আগের মতো স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। প্রতিদিনই রাস্তাঘাটে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে নগরজীবন।
গত মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পরবর্তী দুই মাস সাধারণ ছুটি শেষে ১ জুন সীমিত পরিসরে প্রায় সবকিছু খুলে দেয়া হয়। এরপরও জুন মাসে ভীতির কারণে রাস্তাঘাটে সীমিতসংখ্যক মানুষ ও যানবাহন দেখা যেত। প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ঘরে বসে থাকায় আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় শপিংমল ও মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশপথে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রসহ জীবাণুমুক্তকরণ মেশিন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রেখে করোনা প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। যারা বাইরে বের হচ্ছেন তারা মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, ফেসশিল্ডসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে তবেই বের হচ্ছেন।
রাজধানীর গুলিস্তানে থান কাপড়ের বিক্রেতা পলাশ সরদার ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘদিনের চেষ্টায় একটা রোজগারে থিতু হয়েছিলেন। করোনার শুরুর দিকে লকডাউনের জেরে ফিরে আসেন ঘরে। কয়েকমাস ঘরে থেকে পরিবারের খরচ মিটিয়ে টিকে থাকা খুবই কষ্টসাধ্য হচ্ছিল। ধার-দেনা করে কোনভাবে চলেছেন। তবে জুন মাসে কিছু সময়ের জন্য ব্যবসা চালু করেন। কিন্তু খুব একটা বিক্রি হচ্ছিল না। এখন আস্তে আস্তে বিক্রি বাড়ছে। কিছুটা হলেও স্বাভাবিকতা ফিরছে। তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকে উপেক্ষা করেই কাজ শুরু করছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন দেখা গেছে, কাকডাকা ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি বাজারে রীতিমতো মানুষের হাট বসে। সকাল ৮টার পর থেকে বিভিন্ন গার্মেন্টকর্মীসহ মার্কেটের কর্মচারীরা তাদের গন্তব্যে ছুটতে থাকেন। সবার মুখে এক কথা, করোনার ভয়ে ঘরে বসে থাকলে খেয়ে না খেয়ে মরতে হবে। আয়-রোজগার না থাকলেও গত দু-তিন মাস বাসাভাড়া ও সংসার খরচ চালিয়ে নগর বাসিন্দাদের সিংহভাগেরই হাতে টাকা নেই। তবে সবাই চেষ্টা করছেন ভয় না পেয়ে সচেতনতার মাধ্যমে করোনাকে জয় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা। রাজধানীর জিরো পয়েন্টের সামনের চৌরাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্ট ও দুজন কনস্টেবল যানবাহনের স্রোত সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। স্টেডিয়াম, পল্টন, গুলিস্তান এবং সচিবালয়- চারদিক থেকে অসংখ্য ছোটবড় বাস, প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্যাডেলচালিত রিকশা জমা হওয়ায় একবার একপাশে আটকে আরেক পাশে ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লম্বা লাইন পড়ছিল যানবাহনের।
কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক পুলিশ জানান, সপ্তাহখানেক আগে পর্যন্ত তাদের হাত উঁচিয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়নি। কিন্তু এ মাসের শুরু থেকেই রাস্তায় বিপুলসংখ্যক যানবাহন যাতায়াত করছে। দৃশ্যত এলাকার যানবাহনের চাপ অনেকটা করোনামুক্তকালীন স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়ে গেছে।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ফরিদ হোসেন মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র অফিসার পদে চাকরি করেন। তিনি বলেন, দুই মাস সাধারণ ছুটিতে বন্ধ থাকার পর গত মাসে যখন মিরপুর থেকে বাসে উঠতাম তখন যাত্রী সংখ্যা ছিল কম, বাসে উঠলেই ভয় করত। কিন্তু সকাল বেলা আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠতে হয়েছে।
কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা গার্মেন্টসকর্মী মর্জিনা বেগম জানান, সকাল বেলা বিডিআর সেকশনের সামনে দিয়ে এলিফ্যান্ট রোডের কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তাকে হেঁটে আসতে হয়। মানুষের ভিড় এবং রিকশা ঠেলে আসা যায় না বলে তিনি জানান।
করোনা ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও কেন কর্মস্থলে যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মর্জিনা বেগম বলেন, দুই মাস ঘরে বসা ছিলাম। রিকশাচালক স্বামীর একার আয় দিয়ে কোনোভাবে বাঁচলেও বাসাভাড়া বাকি পড়েছে। এ কারণে অনেকটা নিরূপায় হয়েই জীবিকার তাগিদে কাজে যোগদান করতে হয়েছে।
রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের দোকান মালিক ফরহাদ হোসেন জানান, ব্যবসায়ীরা সারা বছর টুকটাক ব্যবসা করলেও রমজানের ঈদের জন্য তারা অপেক্ষা করেন। এবারও অগ্রিম টাকা দিয়ে জামা-কাপড় তুলে রেখেছিলেন কিন্তু করোনার কারণে বেচাকেনা হয়নি। গত মাস থেকে দোকান খুললেও বেচাকেনা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এই মাস থেকে ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়ছে।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, অর্থনীতির ভাষায় দুটো বিষয় একটি কৃচ্ছতা সাধন। অন্যটি হলো- অর্থনীতির মধ্যে টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল করার চেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুর্যোগের সময়ে টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল করার চেষ্টা করছেন। দেশের স্বার্থে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুবই দুরদর্শীতা দেখিয়ে লকডাউন তুলে নিয়ে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন। তিনি চাচ্ছেন দেশের অর্থনীতি আবার ঘুড়ে দাঁড়াক। আবার তার নেতৃত্বে দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলো দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করা যায় সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।