Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় রাজশাহীর অর্থনীতিতে ধস

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনার বৈশ্বিক এ মন্দা বাতাস বয়ে যাচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়েও। দীর্ঘ সময় ধরে চলা করোনার কারণে রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস নেমেছে। যদিও গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি বিশেষ করে ধান, আম শাকসবজি অর্থনীতির চাকা খানিকটা সামলে রেখেছে। ঘরবন্দি ব্যবসা কোন ভাবেই যেন জমে উঠতে পারছে না। প্রভাব পড়েছে সবকিছুর উপর। এতে রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন।

কৃষি ছাড়া মৎস্য, পোল্ট্রি, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, হোটেল রেস্তোরা সর্বত্রই মন্দাভাব। ব্যবসায়ী নেতাদের তথ্য অনুযায়ী রাজশাহী অঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দেড় লাখের বেশী বিভিন্ন দোকানী আছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই ব্যবসার মূলধন হারিয়েছে। আবার অনেকেই ধুকে ধুকে কোনভাবে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম ব্যবসা ফাস্টফুড, চাইনীজ রেস্টুরেন্ট। রেস্তোরা মালিক সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার আওতায় ১৫৪টি রেস্তোরা আছে। ১৫৪টি রেস্তোরা দীর্ঘ তিন মাস ধরে বন্ধ আছে। এতে যেমন মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেমনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন রেস্তোরার পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিক কর্মচারী।

রেস্তোরা মালিক সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান রিংকু জানান, সব মিলিয়ে বাজে অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন পার হচ্ছে। রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, রাজশাহীর ৫০ হাজার ব্যবসায়ীর যা ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাবে।

রাজশাহীর আরো একটি বড় অর্থনীতির খাত মাছ চাষ। তাতেও নেমেছে ধ্বস। জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী জেলায় সরকারি জলাশয় রয়েছে চার হাজার ৯১৫টি। বাণিজ্যিক খামার রয়েছে সাত হাজারের মতো। জেলায় মোট ৪৪ হাজার ৫২৩ হেক্টরের বেশী জলাশয়ে মাছ চাষ হয়ে থাকে। বছরে মাছের উৎপাদন হয় ৮০ হাজার টন। করোনাকালীন সময়ে এ ব্যবসাতেও ধস দেখা দিযেছে। বিশেষ করে বড় মাছ চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন গড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ ট্রাক মাছ গেলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক।
রাজশাহী পবা উপজেলার নওহাটা মহানন্দখালি এলাকার মাছ চাষি জিয়া জানান, তার ৫০ বিঘার মতো পুকুর রয়েছে। মাছ বিক্রির উপযোগি হলেও পারছেন না বিক্রি করতে। একদিকে পরিবহন খরচ বেড়েছে অন্যদিকে মাছের দামও আগের মত নেই। এ অবস্থায় মাছ বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

রাজশাহীর পোল্ট্রি শিল্পেও নেমেছে ধ্বস। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন রাজশাহীর পোল্ট্রি খামারিরা। করোনায় বেশীরভাগ হোটেল ও রেস্তোরা বন্ধ থাকায় কমেছে পোল্ট্রি ও ডিমের চাহিদা। এছাড়া পরিবহনে সমস্যার কারণে মুরগি ও ডিম পরিবহনে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ফলে লাভ করা তো দূরের কথা মূলধন নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছেন খামারিরা। রাজশাহী পোল্ট্রি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনমুল হক জানান, ছোট বড় সব মিলিয়ে রাজশাহী জেলায় দুই হাজার পোল্ট্রি খামার আছে। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার ও পরোক্ষভাবে দেড় হাজার মানুষ জড়িত আছে। করোনাকালিন সময়ে কমেছে ডিম ও গোশতের দাম। এতে রীতিমতো লোকসানের মধ্যদিয়েই কোনভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, রাজশাহীতে বড় কোন ইন্ডাস্ট্রিজ নেই। তারপরও ছোট বড় মাঝারি সবমিলিয়ে জেলায় ৫০ হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। এর মধ্যে মুদিখানার ব্যবসা চললেও অন্য ব্যবসায় গত তিনমাসে প্রচুর লোকসান হয়েছে ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, পোল্ট্রি খাত, ডেইরি খাত, মৎস্য খাত ও গার্মেন্টস ব্যবসায় ও রেস্তোরা ব্যবসায় ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। এছাড়া কৃষি পণ্যেও ব্যবসায়ও চাষিদের লোকসান হয়েছে। সবমিলিয়ে গত তিনমাসের লকডাউনে জেলায় আনুমানিক আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

শিক্ষানগরী হওয়ায় রাজশাহী নগরীর অর্থনীতিতে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখে এখানে পড়ালেখা করতে আসা লাখ দেড়েক শিক্ষার্থী। এদের পদচারণায় মুখরিত থাকে নগরী। এদের কারণে গড়ে উঠেছে অনেক মেস ছাত্রাবাস। এরাই এখানকার অর্থনীতিকে সচল রাখতে ভ‚মিকা রাখে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ঘরে ফিরেছে। আর একে একে বন্ধ হয়েছে ফাস্টফুডের দোকান থেকে বাজারের বড় বড় শো-রুমগুলো। এখন বাজার খোলা হলেও তেমন ক্রেতা নেই। বিনোদন কেন্দ্রগুলো খা খা করছে। এসব বিনোদন কেন্দ্রে ফুচকা, চানাচুর মুড়ি, পেয়ারা বিক্রি করা ফেরিওয়ালারা বেকার। তাদের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে। বিভিন্ন মেসে ছাত্রাবাসে কাজ করা কাজের বুয়াদের চলছে দুর্দিন। এসব মানুষের খবর কেউ নেয় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ