পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মানহানি মামলায় বাদীর পক্ষে রায় হয়েছে- এমন নজির নেই বললেই চলে। ‘মানহানি’ বাবদ দাবিকৃত অর্থ হাতে পেয়ে বাদী কখনো খরচ করতে পেরেছে- এমন ঘটনাও নেই। তবুও দায়ের হয় মানহানির মামলা। বছরের পর বছর ধরে চলে কথিত এ মামলার বিচার। আসামিকে হাজিরা দিতে হচ্ছে তারিখে তারিখে। বিবাদীকে ঢালতে হচ্ছে কাড়ি কাড়ি অর্থ।
এভাবে দশ-বিশ বছর চলার পর হয় আসামির মৃত্যু না হয় বাদীর। আর এভাবেই ইতি ঘটে ‘মানহানি মামলা’র। যে মামলার ফলাফল নেই- সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া টানতে আদালত হচ্ছে ভারাক্রান্ত। বাড়াচ্ছে মামলা জট। আইনজ্ঞরা বলছেন, হয়রানিমূলক একটি আইন যুগের পর যুগ টিকে থাকতে পারে না। এর বিহিত হওয়া জরুরি।
এক অপরাধ দুই শাস্তি : আইনজীবীরা জানান, দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী মানহানি মামলা হয়। মানহানি একই সঙ্গে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি অপরাধ। এ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমনভাবে কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকা করে, তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি হয়েছে- মর্মে গণ্য হবে। এমনকি মৃতব্যক্তি সম্পর্কে বললেও তা মানহানি হবে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন মানহানির অভিযোগ আনতে পারবেন।
মানহানি মামলায় একই অপরাধে দুই ধরনের শাস্তি রয়েছে। যদি কেউ পত্রিকা কিংবা বইয়ে লিখে কারোর মানহানি করেন তাহলে দন্ডবিধির ৫০০ ধারা অনুযায়ী ২ বছরের কারাদন্ড। আবার অনলাইনে লেখালেখির কারণে একই অপরাধ সংঘটিত হলে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ১৪ বছরের কারাদন্ড। মানহানি মামলায় অনেক সময় ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়।
ক্ষতিপূরণ দাবির মামলায় ক্ষতিপূরণের টাকার মূল্যমানের ওপর কোর্ট ফি ধার্য রয়েছে। যা গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। মামলায় বাদী জয় লাভ করলে আসামিকে বাদীর দাবিকৃত অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে কোর্ট ফি নির্ধারণের পর মানহানি এবং অর্থ দাবির মামলা হ্রাস পেয়েছে।
উদ্দেশ্য শুধু হয়রানি : চালু রয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি আইন। তবে ইদানিং বেড়েছে নতুন যুক্ত হওয়া ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’। তথ্য-প্রযুক্তি আইনে কেউ ‘অনুভ‚তিতে আঘাত’ অনুভব করলেই মামলা ঠুকে দিতে পারবেন। যদিও ‘অনুভ‚তিতে আঘাত’ লাগার কোনো সংজ্ঞা নির্ধারণ করা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানের মতে, যে কোনো ঘটনায় মিথ্যা মামলা করার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে মামলাবাজ একটি শ্রেণী।
দেখা গেলো, হয়তো কোনো মন্তব্যে একজনের মানহানি হলো। কিন্তু বাদী হিসেবে মামলা করছেন অন্যজন। আবার একই ঘটনায় দায়ের হচ্ছে একাধিক মামলাও। ফলে আইনটির অপপ্রয়োগের ইতিহাসই বেশি। আইনজ্ঞরা এক বাক্যেই স্বীকার করেন, মানহানি মামলার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে হয়রানি। কারণ মানহানি মামলায় নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে কিংবা চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে গেছে- এমন দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে।
২০০৩ সালে দায়েরকৃত একটি মামলা ২০১৩ সালে নিষ্পত্তি হয়। মামলাটির বাদী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস। ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার তৎকালিন সম্পাদক মরহুম গোলাম সারওয়ার এবং পত্রিকাটির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। তবে ২০১৪ সালে মামলাটি প্রত্যাহারও করা হয়। ঢাকা বারের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, সব মানহানি মামলার পরিণত মোটামুটি এরকমই। মানহানির দায়ে মামলা হলেও নিষ্পত্তির হার নগণ্য। অভিযোগ প্রমাণ করাও কঠিন।
বাদীর মানের দাম কত? : মানুষের ‘মান’র মূল্যের নির্দিষ্ট হার নেই। বাদী তার নিজ ইচ্ছে মতো তার মানের মূল্য নির্ধারণ করছেন। যার বাস্তবিক ভিত্তি নেই। আলোচিত কিছু ‘মানহানি মামলা’ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দাবিকৃত অর্থ নিছক কোনো সংখ্যা ছাড়া কিছুই নয়। এ অর্থের মুখ বাদী কোনোদিন দেখেন না। আসামিকেও গুণতে হয়নি কোনো অর্থ।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে অন্তত: ২০টি মানহানি মামলা হয়। এসব মামলায় তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয় ২৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ৭৭টি মামলা হয় ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে। বাদীগণ তাদের ‘হানি হওয়া’ মানের দাম হেঁকেছেন তার কাছ ৭১ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে ‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয় ৩টি। তার কাছ থেকে দাবি করা হয় ৩১শ’ কোটি টাকা।
ফৌজদারি আইনে দায়েরকৃত এসব মামলায় হয়তো দাবিকৃত অর্থ এখনও কাউকে শোধ করতে হয়নি। কিন্তু ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার হয়েছেন। কারাভোগ করেছেন। একই বিষয়ে একাধিক মামলা না করার বিষয়ে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা বলে আসামিগণ হয়তো আর হাজিরা দিচ্ছেন না। কিন্তু মামলাগুলো ‘বিচারাধীন অবস্থায়’ এখনও ঝুলছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকর কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেন, মানহানির মামলা কোনো ক্রিমিনাল কেস হওয়া ঠিক নয়। এখানে ফৌজদারি ধারা প্রয়োজ্যও নয়। শুধুমাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যেই মামলাগুলো হচ্ছে। সামাজিকভাবে হয়রানি করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মানহানি মামলা। দুই দশকের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, মানহানি কিংবা ক্ষতিপূরণ দাবির কোনো মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে- এমন ঘটনা আমার জানা নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।