Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

 বিধি সমূহের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় কৃষি বিপনন আইন জোরদার হচ্ছে না

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২০, ৩:০৯ পিএম

সর্বশেষ কৃষি বিপনন আইনটি জোরদার করা যাচ্ছে না বিধির প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায়। প্রজ্ঞাপন জারির ফাইলটি মন্ত্রণালয়ে এখনো অনুমোদন হয়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যা অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং শক্তিশালী। কিন্তু কার্যকর করা যাচ্ছে না বিধি জারি না হওয়ায়।

কৃষি বিপনন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অতীতে ১৯৫৩ সালের মজুদবিরোধী আইন ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনের কার্যত কোন প্রয়োগ হয়নি। ১৯৬৪ সালের এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেটস রেগুলেশন এ্যাক্ট ও ১৯৮৫ সালের সংশোধিত বাজার নিয়ন্ত্রণ আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনগুলোও জোরদারভাবে কার্যকর হয়নি কখনোই। বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ওইসব আইন অকার্যকর হওয়ায় সর্বশেষ সরকার কৃষি বিপনন আইন ২০১৮ প্রণয়ন করে। এটি সবচেয়ে শক্তিশালী। এই আইনের লক্ষ্য ছিল বাজারের পুরোপুরি শৃঙ্খলা এবং কৃষক, উৎপাদক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ। একইসাথে জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করা। অথচ আইন প্রণয়নের পর সারাদেশের কোথাও জোরদারভাবে প্রয়োগ হয়নি। এমনকি আইনের সফল বাস্তবায়ন ও স্বার্থক করতে আইনের অনুকুলে বর্ণিত বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি দীর্ঘদিনেও।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিধিতে কৃষক ও উৎপাদক খরচের কত পারসেন্ট লাভে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন এবং পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরাইবা কত পারসেন্ট লাভ পাবেন তা সুনির্দ্দিষ্ট আছে। বাজারের ইজারাদারদের মণপ্রতি খাজনা আদায়েরও নির্দেশনা রয়েছে বিধিতে। এর ফলে বাজারে কোনরূপ পণ্য টানাহেচড়া বা বাজার বিশৃঙ্খলা থাকার কথা নয়। সূত্রমতে, বাজারে শৃঙ্খলা থাকলে সরকারী রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে।


কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সর্বশেষ কৃষি বিপনন আইনটির জোরদার প্রয়োগ ও বিধিটির প্রজ্ঞাপন জারি এবং কার্যকর হলে কৃষি ও শিল্প পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে মনোপলি ব্যবসা বা সিন্ডিকেটের দাপট থাকতো না। তাছাড়া পণ্যের সংকট সৃষ্টি, অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন, মজুদ, ক্রয়কৃত পণ্যের মূল রশীদ বিপননকেন্দ্রে টাঙানোসহ সংশ্লিষ্ট আইনের বাস্তবায়ন হলে বাজার ব্যবস্থা এলোমেলো কিংবা অযৌক্তিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হত না।

সূত্র জানায়, ওই আইনে সরাসরি জুডিশিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি জেলা বাদে দেশের অধিকাংশ জেলাতেই আইন প্রয়োগ জোরদার হচ্ছে না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নোটিশ ইস্যুর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

আইনের বিধিসমূহ জোরদার কার্যকর হলে কৃষি ও শিল্প পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে মনোপলি ব্যবসা বা সিন্ডিকেটের দাপট থাকতো না।নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকারের জোরদার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কার্যকর হচ্ছে না বললেই চলে। সবখানে সমানতালে চলছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দাপট ও মনোপলি ব্যবসা। এতে সংরক্ষিত হচ্ছে না উৎপাদক চাষি, সাধারণ ব্যবসায়ী ও ভোক্তা স্বার্থ। বাড়ছে না সরকারের রাজস্ব আয়ও। উপরন্ত ঘটছে বাজার বিশৃঙ্খলা, কৃষি বিপনন আইন বাস্তবায়নের অভাবে ফিরছে না শৃঙ্খলা।

উদাহরণ হিসেবে সূত্র জানায়, সারাদেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ সবজি সরবরাহ হয় যশোর থেকে। সবজির বড় পাইকারী বাজার বারীনগরে যশোর ৫৫পদাতিক সেনাবাহিনীর একজন মেজরের নেতৃত্বের টিম ও জেলা বাজার কর্মকর্তা অতিসম্প্রতি ব্যবসায়ী ও সবজি চাষিদের নিয়ে বৈঠক করেন। নির্দেশ দেওয়া হয় কোন সবজি কত মূল্যে বিক্রি, ইজারাদাররা মণপ্রতি কত খাজনা নিচ্ছে তার একটা রেটচার্ট টাঙানোর। উদ্দেশ্য মনোপলি ব্যবসা ও সিন্ডিকেট বন্ধ। সেখানকার সবজি চাষি আব্দুল গফুর বললেন, এতোকিছু লাগতো না যদি করোনার ভয় ঢুকতো সিন্ডিকেটের।

মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাটবাজারে কৃষি বিপনন আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাজারে শৃঙ্খলা ফিরছে না। এর আগেও জেলায় জেলায় বাজার নিয়ন্ত্রণ কমিটি ও মনিটরিং সেল ছিল। খাদ্য অধিদপ্তর, বাজার কর্মকর্তা ও মনিটরিং সেল সুত্র জানায়, মাঝেমধ্যেই বাজার কমিটির বৈঠক হয়। দাবি করা হয় মাঠেও নামেন কর্মকর্তারা। কিন্তু বাস্তবে এসব বেশিরভাগই কাগজ কলমে। শহরাঞ্চলে যেনতেন, গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার কেউ নেই।



 

Show all comments
  • কৃষি বিপণন আইন,২০১৮ একটি পূর্ণাঙ্গ ও সময়োপযোগী আইন। আগামী ৫০ বছরে কোন সংশোধন বা নতুন অন্য কোন আইন প্রণয়ন ব্যতিরেকে চাষী,উৎপাদক,সাধু ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সকলের অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব। এটি বাস্তবায়নে জোর তৎপরতা চলছে। তিবে বিধিটিও সত্বর পাওয়া যাবে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ