পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। ভয়াবহতার মধ্যে আশার কথা বিশ্বব্যাপী সুস্থতার হার প্রতিদিনই বাড়ছে। কমছে মৃত্যুর হার। শুরু থেকেই দেশে দেশে চলছে ওষুধ-টিকা ও ভ্যাকসিন আবিস্কার নিয়ে দিন-রাত বিজ্ঞানীদের যুদ্ধ। এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটির সরাসরি কোনো কার্যকরী প্রতিষেধক বের হয়নি। গোটা বিশ্বের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে কার্যকর ভ্যাকসিনের দিকে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ফেব্রুয়ারি থেকেই টিকা নিয়ে কাজ করছে। গবেষকেরা আশার আলোও দেখাচ্ছেন। তারা আশবাদী এ মাসেই ভ্যাকসিন বাজারে চলে আসেব। কারণ এর আগেও ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, রুবেলা, মিসেলস, মামস, চিকুনগুনিয়াসহ অজানা রোগকে জয় করেছে মানুষ। আর তাই করোনার ভয়াবহতাকে পেছনে ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে বাংলাদেশসহ বিশ্ব। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনার মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করেছে। আরও আগেই তুলে দিয়েছে লকডাউন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করেছে। সেগুলো ট্রায়ালেও আছে। আবার দিন দিন ভ্যাকসিন ট্রায়ালে সফলতা পাওয়া দেশের সংখ্যাও বাড়ছে। আর তাই গবেষকরাও আশাবাদী এ মাসের শেষের দিকেই আসছে ভ্যাকসিন। এদিকে গতকাল নতুন করে সুখবর দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। তাদের মতে ২ সপ্তাহের মধ্যেই মিলতে পারে করোনার ওষুধের ট্রায়ালের ফলাফল। ট্রায়াল রিপোর্ট সফল হলে করোনাভাইরাসের বহুল প্রতিক্ষিত ওষুধ শিগগিরই পাবে বিশ্ববাসী। ভ্যাকসিনের পাশাপাশি করোনার ওষুধ নিয়েও জোর কদমে গবেষণা চালাচ্ছে তামাম বিশ্ব।
বিজ্ঞানীরা আশবাদী খুব শিগগিরই অন্তত যে কোনো কোম্পানির একটি ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বাজারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সরকারি বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি এক মাস আগেই বলেছিলেন, আমি আশাবাদী যে খুব দ্রুত বিশ্ব একটি ভ্যাকসিন পাবে। যা মহামারির অবসান ঘটাবে। ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক।
এরই ধারাবাহিকতায় চীন ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনটির দ্বিতীয় ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। এ মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশে তৃতীয় ট্রায়াল হতে পারে। ট্রায়ালের সূত্র ধরে বাংলাদেশেও এর উৎপাদন শুরু হতে পারে। এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য করোনা মোকাবিলায় আরেক ধাপ সাফল্য বয়ে আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চীন ভ্যাকসিন আবিস্কার করলেও বাংলাদেশই যাতে প্রথম পায় সে বিষয়েও ইতোমধ্যে কথা বলে রেখেছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। যদিও ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশেতো সীমিত পর্যায়ে ভ্যাকসিনের প্রয়োগও শুরু করেছে।
এদিকে ভারতের শীর্ষ চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) তাদের স্বাধীনতা দিবসে আগামী ১৫ আগস্ট করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। ভ্যাকসিন আবিষ্কার করার দাবি করেছে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটি গত ৮ মার্চ এই টিকা আবিষ্কারে কাজ শুরু করে। টিকা তৈরির সকল ধাপ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারলে আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে এটি বাজারে আনবে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তৈরি হতে থাকা ভ্যাকসিনটি দুই বছরের বেশি সময় মানুষকে করোনা থেকে সুরক্ষা দেবে বলে প্রমাণ মিলেছে। রাশিয়ার জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান আলেক্সান্দর গিন্সবার্গ বলেছেন, আমাদের ভ্যাকসিনটি শুধু অ্যান্টিবডি তৈরি করছে না, পাশাপাশি দীর্ঘ সময়ের জন্য মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। রাশিয়ায় টিকাদান কর্মসূচির জন্য প্রাথমিকভাবে ৭০ মিলিয়ন ডোজ তৈরি করা হবে। রাশিয়া এই ভ্যাকসিনটির নাম এখনও জানায়নি। তবে দেশটি আশা করছে, জুলাইয়ের মধ্যে হিউম্যান ট্রায়াল শেষ হবে। ইতোমধ্যে নাইজেরিয়া দাবি করেছে, তাদের দেশের গবেষকরা শতভাগ কার্যকরী ভ্যাকসিন পেয়ে গেছেন। ইসরায়েলও জানিয়েছে, তাদের ভ্যাকসিন প্রাণির শরীরে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্রমতে, তরতর করে এগিয়ে চলেছে ভ্যাকসিনের গবেষণা। কয়েকটি ভ্যাকসিন সফলতার প্রায় দ্বার প্রান্তে। একটি ভ্যাকসিন ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের অনুমোদনও পেয়ে গেছে। গবেষকেরা বলছেন, ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টায় এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনার ভ্যাকসিনের মানবদেহে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য একাধিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিও করেছে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ভ্যাকসিন পরীক্ষা সফল হলেই তা বাজারে আসবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ ২৪ জুনের খসড়া তালিকা অনুযায়ী এখন বিশ্বে টিকা বানাতে ১৪৩টি উদ্যোগ চালু আছে। ২ জুন এমন উদ্যোগের সংখ্যা ছিল ১৩৩। অর্থাৎ তিন সপ্তাহের মধ্যে আরও ১০টি টিকার উদ্যোগ যুক্ত হয়েছে। এখন ১৪৩টি উদ্যোগের মধ্যে ১৬টির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা মানবদেহে পরীক্ষা চলছে। বাকি ১২৫টি টিকা প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপে আছে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন বলেছেন, অগ্রগতি কতটা, কোন ধাপে রয়েছে, সেই বিচারে আমি মনে করি তারা (অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা) এগিয়ে রয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের করোনা ট্র্যাকার অনুযায়ী, বিশ্বে এ মুহ‚র্তে ১৪০টি ভ্যাকসিনের মধ্যে ১২৫টির বেশি প্রি-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে। ১১টি প্রথম ধাপে, ৮টি দ্বিতীয় ধাপে, ৩টি তৃতীয় ধাপে এবং একটি পরীক্ষামূলক ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। মার্কিন সংস্থা ‘মডার্না আইএনসি’র তৈরি এমআরএনএ-১২৭৩ ভ্যাকিসনও এ দৌড়ে রয়েছে। এই টিকারও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হচ্ছে চলতি মাসে। সৌম্য স্বামীনাথন যেমন অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকাকেই এগিয়ে রাখছেন। তিনি বলেছেন, আমরা জানি মডার্নার ভ্যাকসিনও তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হচ্ছে জুলাইয়ের মাঝামাঝি। ফলে তারাও খুব একটা পিছিয়ে নেই। কিন্তু অগ্রগতি ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রক্রিয়ার দিক থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ রয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার। প্রযুক্তিবিষয়ক মার্কিন ওয়েবসাইট সিনেট বলছে, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত চলে আসতে পারে ভ্যাকসিন।
এদিকে ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, সার্বক্ষনিক তথ্য আপডেট করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনা নিয়ে গবেষণাও চলছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশই করোনার নানা বিষয় নিয়ে গবেষণায় মেডিকেল সাইবার আর্মি বা টিম গঠন করেছে। যারা কারিগরিভাবে অত্যন্ত দক্ষ হবে। কিন্তু বাংলাদেশের সে রকম কোন চিন্তা এখনও নেই বলে সূত্র জানিয়েছে। মেডিকেল সাইবার আর্মি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা পরবর্তীতে বিশ্লেষণ করে ভাইরাস থেকে উত্তোরণে কার্যকর পরামর্শ প্রদান করবে। করণীয় ঠিক করবে।
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ) চেয়ারম্যান ডা. মো. শাহেদ রাফি পাভেল ইনকিলাবকে বলেন, মেডিকেল সাইবার আর্মি দেশে সরকারিভাবে নেই। আমরা কিছুটা চেষ্টা করছি। বাংলাদেশে কোথায় কি ঘটছে। কি করা যায়। পাশাপাশি করণীয় কি হবে সে পরামর্শ দিচ্ছি। তবে সরাসরি মেডিকেল সাইবার আর্মি নামে নয়। তিনি বলেন, এখনও আমরা বিষয়টি চিন্তা করতে পারিনি। অথচ বিশ্ব এক্ষেত্রে অনেকটা সফল। তারা আগে থেকেই এই টিম গঠন করেছে। যারা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে করণীয় ঠিক করছে। সঠিক পরামর্শ দিচ্ছে। সার্বক্ষণিক বিশ্ব এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি মূল্যায়ণ করছে।
সিনোভ্যাক বাংলাদেশে পরীক্ষা চালাবে
জুলাই মাসে চীনের করোনার টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাংলাদেশে শুরু হতে পারে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের অংশীদার হিসেবে এই পরীক্ষা চালাবে। ১৩ জুন তারা ৭৪৩ জনের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা চালিয়েছিল, যাতে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি এবং প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বার্ষিক ১০ কোটি ডোজ তৈরির জন্য কারখানা তৈরি করছে তারা। গত মাসে সিনোভ্যাক একাডেমিক জার্নাল সায়েন্সে তাদের গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করে, যাতে করোনাভ্যাক নামে তাদের ভ্যাকসিনটি বানরের ওপর পরীক্ষায় সফল বলে জানানো হয়। এটি বানরের শরীরে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেছেন, ভ্যাকসিনের ট্রায়ালটি যাতে দ্রুত করা যায়, সে বিষয়ে সরকার সব ধরনের সাহায্য করবে। তিনি জানিয়েছেন, শুধু সিনোভ্যাক-ই নয়, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কেও জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে বাংলাদেশের করোনা-রোগীদের উপর তারা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে পারে।
অনুমোদন পেল ক্যানসিনোর ভ্যাকসিন
চীনে মোট আটটি ভ্যাকসিন মানবপরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। চীন ও চীনের বাইরে ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে পরীক্ষা চালানোর পর অ্যাড৫-এনকোভ নামের এ ভ্যাকসিন নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে। এই একই ভ্যাকসিন এরই মধ্যে কানাডাতেও মানবপরীক্ষার জন্য অনুমতি পেয়েছে। এখন অ্যাড৫-এনকোভ নামের এই পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে চীনের সেনাবাহিনী। বিস্তৃত পরিসরে ভ্যাকসিনটির ব্যবহারের আগে আরও কিছু অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে উৎপাদনকারী ক্যানসিনো।
তৃতীয় ধাপে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন
অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। এতে আরও ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে যুক্ত করার কাজ চলছে। ব্রাজিলে স্বেচ্ছাসেবকেরা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ প্রতিরোধী পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে শুরু করেছেন। এতে দেশটির পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিচ্ছেন। অক্সফোর্ড জেনার ইনস্টিটিউটের তৈরি ভ্যাকসিনটি বর্তমানে যুক্তরাজ্যেও পরীক্ষা চলছে। সেখানে চার হাজার স্বেচ্ছাসেবী ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনটি নিয়েছেন এবং আরও ১০ হাজার জনকে পরীক্ষায় যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দুটি ধাপে সফল হওয়ার পর এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে মানবদেহে। যদিও তার ফলাফল নিয়ে কোনো দাবি এখনো সংস্থার পক্ষ থেকে করা হয়নি; তবে ইতোমধ্যেই বিশ্বের অন্তত ১০টি সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার চুক্তি সই হয়েছে। শেষ তথা দশম চুক্তি হয়েছে ব্রাজিলের সঙ্গে। ব্রাজিলে স্থানীয়ভাবে এই ভ্যাকসিন তৈরি হবে।
চূড়ান্ত ধাপে মডার্নার ভ্যাকসিন
যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার তৈরি পৃথক আরেকটি ভ্যাকসিন ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে দেয়ার মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করবে এ মাসেই। মডার্নার এমআরএনএ-১২৩৩ ভ্যাকসিন তৈরিতে অক্সফোর্ডের পর দৌড়ে এগিয়ে এই ভ্যাকসিন। স¤প্রতি মডার্নার সিইও স্টিফেন বানসেল বলেছেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল আগামী নভেম্বরের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
দ্রুত শেষ টানতে চাইছে সিনোফার্ম
চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিনোফার্ম বড় আকারের তৃতীয় ধাপের ভ্যাকসিন পরীক্ষা শুরু করছে। গত মাসের শুরুতে সিনোফার্ম প্রাণিদেহে তাদের ভ্যাকসিন পরীক্ষা থেকে ইতিবাচক ফলের খবর প্রকাশ করে। তারা বেইজিংয়ে বছরে ২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির কারখানা করছেন।
সম্ভাবনাময় সিঙ্গাপুরের ভ্যাকসিন
সিঙ্গাপুরের ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের গবেষকেদের একটি ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার পাশাপাশি এটি রোগ নিরাময়েও ব্যবহার করা যাবে। স¤প্রতি গবেষকেরা এ দাবি করেছেন। আগস্ট মাসে এর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।
এগোচ্ছে সানোফির ভ্যাকসিন
অক্সফোর্ড বা মডার্নার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ফরাসি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা সানোফির তৈরি এই ভ্যাকসিনের অগ্রগতিও আশানুরূপ। একাধিক টিকা প্রস্তুত করেছে তারা।
ভ্যাকসিন আনছে গ্ল্যাক্সোস্মিথ
মানুষের দেহে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে গ্ল্যাক্সোস্মিথ। গ্ল্যাক্সোস্মিথের প্রধান মেডিকেল অফিসার থমাস ব্রিউয়ার বলেছেন, সংস্থাটি ধীরে কাজ করে একটি সঠিক ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে বেশি বিশ্বাসী। ব্রিটেনের এই সংস্থা একটি প্রজেক্টে তারা ইতোমধ্যেই ক্লিনিকাল ট্রায়াল করেছে তাদের ভ্যাকসিনের।
কাজে লাগতে পারে বর্তমান ভ্যাকসিন
চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত সাময়িকী এমবায়োতে স¤প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মিজলস, মামস ও রুবেলা বা এমএমআর প্রতিরোধে যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, সেটা করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও কার্যকর হতে পারে। এদিকে আমেরিকার ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক এই দুই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তৈরি বিএনটি-১৬২ ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষ হয়েছে। ফাইজার আশা করছে, ট্রায়ালে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শরতে জরুরি ব্যবহারের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।
মাঠে নামছে জনসন অ্যান্ড জনসন
জুলাই মাসে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা একসঙ্গে শুরু করবে জনসন অ্যান্ড জনসন। প্রতিষ্ঠানটি অ্যাড ২৬ প্ল্যাটফর্মে তাদের ভ্যাকসিন তৈরি করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে বেথ ইসরায়েল ডিকনেস মেডিকেল সেন্টার।
ইম্পেরিয়ালের ভ্যাকসিনে অগ্রগতি
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা আত্মপরিবর্ধনকারী আরএনএ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরি করছেন। ১৫ জুন থেকে ৩০০ মানুষকে নিয়ে ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। পরীক্ষা সফল হলে ছয় হাজার মানুষকে নিয়ে আগামী অক্টোবরে পরের ধাপের পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা আশা করছেন, আগামী বছরের শুরুতেই যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন দিতে পারবেন তারা।
এদিকে করোনা প্রতিনিয়তই রুপ পরিবর্তন করছে। এতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে আশার কথা সুস্থতার হারও দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে সুস্থতার হার ৪৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। যদিও গত ১ মাসে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ১ লাখ। গত ১৪ দিনে ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার। তাই আগামী কয়েকদিনে এই আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থতার হার অনেক বেড়ে যাবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপিই বাড়ছে সুস্থতার হার। ভারতে ৬০ শতাংশের ওপরে। পাকিস্তানেও ৫০ শতাংশের ওপরে সুস্থতার হার। পাশাপাশি মৃত্যুর হারও কমছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে। মৃত্যুর ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কমেছে ভয়াবহতা।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের বুলেটিনে প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, করোনায় দেশে মোট শনাক্ত হয়েছেন এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬৭৩ জন। আগের দিন সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৬০৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭০ হাজার ৭২১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯ জন। এ পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৯৯৭ জন। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেছেন, চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ব্যাপারে বিভিন্ন গ্রুপ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনা করছে। আমরাও চীনের বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনা করছি। আলোচনা হচ্ছে কিন্তু কবে নাগাদ হবে তার সঠিক সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা একটি ভ্যাকসিন যদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে পারি সেটি যদি কার্যকরী হয় তাহলে আমাদের জন্য অনেক লাভ। দেশে যদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে পারি তাহলে আমাদের একটি অধিকার থাকে। দ্রুততার সঙ্গে আমরা বেশি অগ্রাধিকার পেতে পারি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।