পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মামলার ধারা জামিন এবং আপসযোগ্য। অথচ আসামি আগাম জামিন নিতে পারছেন না। হয়তো মামলার বাদী-বিবাদীর মধ্যে আপসও হয়ে গেছে। বাদী নিজেই মামলা তুলে নেয়ার আবেদন দিতে চান আদালতে। আসামিও আত্মসমর্পণ করে নিতে চান জামিন। কিন্তু কোনোটাই সম্ভব হচ্ছে না। ভার্চুয়াল আদালতে সেই সুযোগ নেই। করোনা কালেও যাপন করতে হচ্ছে পলাতক জীবন।
আবার এমন ঘটনাও রয়েছে- হাইকোর্ট হয়তো আগাম জামিন দিয়েছেন। জামিনের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আসামি বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের মেয়াদ বাড়াতে চান। সেই সুযোগও নেই। হ্যান্ডকাফ নিয়ে ঘুরছে পুলিশ, দেখামাত্রই গ্রেফতার। কথিত আসামি করোনা আক্রান্ত হলেও গ্রেফতার এড়াতে থাকতে পারছেন না ঘরে। এমন নানামুখী জটিলতায় হাবুডুবু খাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
আদালত, আইনজীবী সমিতি এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বেরিয়ে এসেছে এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতি। তবে করোনা-উত্তর ভয়াবহ মামলা জটের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন আইনাঙ্গনের মানুষ। প্রাপ্ত তথ্যমতে, আপসযোগ্য ধারার মামলায় শত শত আসামি এখন ফেরার। তারা আপস-মীমাংসা করেও স্থির জীবন যাপন করতে পারছেন না। আত্মসমর্পণ করে জামিন নেবেন সেই ব্যবস্থাও নেই। ভার্চুয়াল আদালতে আত্মসমর্পণের সুযোগ নেই। পুলিশের তাড়া খেয়ে রাত যাপন করছেন ঘরের বাইরে। বিশেষ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ), গ/৩০ ধারায় শত শত আসামি এখন ফেরার। যৌতুক আইনের ৩ ধারা, দন্ডবিধির ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫ ধারায় আসামি হয়ে শত শত মানুষ যাপন করছেন পলাতক জীবন। অথচ এসব ধারায় দায়েরকৃত মামলার ৯৫ ভাগ আসামিই বিচারে নিরপরাধ প্রমাণিত হন।
সুপ্রিম কোর্টের একাধিক আইনজীবী জানান, হাইকোর্টে এখন আর আগাম জামিন শুনানি হয় না। ভার্চুয়াল আদালতে সেই ব্যবস্থা নেই। করোনা শুরুর আগে অনেকে হয়তো হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন আগাম জামিন নিয়েছেন। আগাম জামিনের একটি সময়সীমা রয়েছে। সেই সময়সীমা হয়তো অনেক আগেই শেষ। নিয়মিত আদালত থাকলে তারা বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের মেয়াদ বাড়াতে পারতেন। ভার্চুয়াল আদালতে সেই ব্যবস্থা নেই। তাই তাদের অনেকেই এখন পলাতক জীবন যাপন করছেন। যদিও তাদের গ্রেফতার না করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেটি ভঙ্গ করে অনেক থানা-পুলিশ আসামি পাকড়াওয়ে রাত-বিরাতে হানা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। অথচ আদালতের সাধারণ আদেশ ভঙ্গেও এই নালিশটি জানানোর উপায়ও ভার্চুয়াল আদালতে নেই।
আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টের ভার্চুয়াল আদালতে এখন মামলা ফাইল হচ্ছে। কিন্তু শুনানি হচ্ছে না। রিট হচ্ছে। রিটের রুল জারি হচ্ছে না। অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ হচ্ছে। কিন্তু কোনো পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান বন্ধ রয়েছে। ভার্চুয়াল আদালতগুলো চলছে ‘একক বেঞ্চ’ হিসেবে। তাই পূর্ণাঙ্গ কোনো আদেশ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রিটের রুল জারিও বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে রুলের চূড়ান্ত শুনানি।
সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল দফতর জানায়, হাইকোর্টে ১১টি ভার্চুয়াল আদালত চলমান। এসব আদালতে আবেদন গ্রহণ চলছে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের। ভ্যাট সংক্রান্ত অতি জরুরি বিষয়, কাস্টমস ও ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত রিট মোশন এবং এ সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। অতি জরুরি সব ধরণের ফৌজদারি মোশন এবং এ সংক্রান্ত জামিন আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে ভ্যাট, কাস্টমস, ইনকাম ট্যাক্স, অর্থঋণ আদালত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মামলার শুনানি হচ্ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার শুনানি নেই। আগাম জামিনও হয় না। রিট মোশন এবং এ সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করা হয় মাত্র। দুদক আইন, মানি লন্ডারিং আইন সংক্রান্ত সব ধরণের ফৌজদারি ও রিট মোশনের আবেদন গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দ্বৈত বেঞ্চের শুনানি হয় না। আদিম অধিক্ষেত্রাধীন অতি জরুরি বিষয়, সাকশেসন আইন, বিবাহবিচ্ছেদ আইনের মাকদ্দমা, প্রাইজ কোর্ট বিষয়সহ অ্যাডমিরালিটি কোর্ট আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও সালিশ আইনসহ কয়েকটি আইনের অধীনে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়। অতি জরুরি অর্থঋণ আইন সংক্রান্ত রিট, দেউলিয়া বিষয়াদি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থঋণ আইন থেকে উদ্ভূত রিট মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয় না।
এদিকে বিচারিক আদালতের ভার্চুয়াল আদালত দিয়েও মিটছে না চাহিদা। নতুন কোনো সিআর (নালিশি) মামলা দায়ের করা যাচ্ছে না। নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট’র মামলার শুনানি বন্ধ। উক্ত আইনে দায়েরকৃত সাড়ে ৫ লাখ পুরনো মামলা বিচারাধীন। গত ৪ মাসে আরও অনেক মামলা অপেক্ষমান। নতুন কোনো মামলায়ই জামিন শুনানি নেই। মামলার সাক্ষ্য, যুক্তি-তর্ক গ্রহণ বন্ধ। এ কারণে মামলা নিষ্পত্তির হার এখন শূন্য। এ অবস্থা করোনা-উত্তর বিচার বিভাগে ভয়াবহ মামলা জটকেই অনিবার্য করে তুলবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিকল্প খোঁজা জরুরি বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
ঢাকা বারের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা সীমিত পরিসরে আদালত চালুর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলাম। তবে এখন আর এটি অব্যাহত রাখা যায় না। ভার্চুয়াল আদালতের কারণে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ২৫ হাজারেরও বেশি সদস্য খুবই দুরবস্থার মধ্যে আছেন। তার চেয়েও বড় কথা আদালত বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থীরা সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিয়মিত আদালত চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কবে অবসান হয় বলা যাচ্ছে না। তাই মামলা জট পরিহারে নিয়মিত আদালত চালু করা জরুরি। বিচারপ্রার্থী মানুষ অনেক ভোগান্তিতে রয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।