পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ধরা হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তিকে। সে লক্ষ্যে এগুচ্ছে গোটাবিশ^। বাংলাদেশও বিগত কয়েকবছর ধরে তথ্য-প্রযুক্তির মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আমূল পাল্টে দিয়েছে দেশের তথ্য-প্রযুক্তির দুনিয়া। আরও কিছুদিন পরে যেসব পরিবর্তন আশা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা করোনার ধাক্কায় সেটি হয়ে গেছে অনেক আগেই।
অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগযোগ সবকিছুতেই লেগেছে প্রযুক্তি নির্ভরতার ছোঁয়া। ঘরে বসেই চলছে অফিসের কাজ। প্রধানমন্ত্রীর মিটিং, ব্যাংক-বিমা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট কোম্পানিসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করছেন বাসা থেকে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা, ভর্তি, চাল-ডাল-সবজীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা, অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা কোনকিছুর জন্যই বের হতে হচ্ছে না ঘর থেকে। অনলাইনে চলছে আদালতের বিচারকার্য। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিই বদলে দিয়েছে সবকিছু। আকস্মিক এক পরিস্থিতিতে বিপ্লব ঘটে গেছে প্রযুক্তির। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে হঠাৎ করেই প্রযুক্তি নির্ভরতা বেড়ে গেছে, তাতে প্রচলিত প্রযুক্তির পরিবর্তে উচ্চগতির ফাইবার ভিত্তিক কানেকটিভিটি বৃদ্ধি করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও টেলিমেডিসিন সেবা, দূরশিক্ষণ, অনলাইন প্রশিক্ষণ, বাণিজ্যিক সভা-সম্মেলন প্রভৃতি খাতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ও বিগডাটা প্রয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও ই-কমার্স, আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং, ভিডিও স্ট্রিমিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বর্ধিত চাহিদা পূরণ করতে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের ধারণ ক্ষমতা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ৫-জি নেটওয়ার্ক এখন সময়ের দাবি। ৫জি এর জন্য টেলিকম কর্মকর্তাদের দক্ষ ও সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে।
গত মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, সাধারণ ছুটি ঘোষণা, সরকারি-বেসরকারি সকল অফিস, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়াতে মাথায় হাত পড়েছিল অনেকেরই। শারীরিক উপস্থিতি বা ভিড় এড়িয়ে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ, বিভিন্ন বেসরকারি অফিসে পূর্বনির্ধারিত কাজ শেষ করা, কার্যক্রম সচল রাখা, সরকারি কাজকর্ম চালিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। তবে করোনা সঙ্কটই রাতারাতি পাল্টে দেয় কাজের পদ্ধতি। রাজধানী কিংবা বড় শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কর্মীরা বাড়ির থেকেই শুরু করেন নিজের নিজের কাজ। শারীরিক উপস্থিতি না থেকেও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সচল রাখেন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান এবং দেশের অর্থনীতি। মানুষ ঘরবন্দি থাকায় যেভাবে স্থবিরতা নেমে আসার কথা ছিল তা থেকে উত্তোরণ সম্ভব হয়েছে এই প্রযুক্তির কল্যাণেই।
দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও বৈঠক করছেন, একনেক, কেবিনেটসহ প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন এই মাধ্যমেই। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বাসা থেকেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন। সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলো সীমিত সংখ্যক কর্মী দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছেন কাজ, বাকিরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকছেন বাসা থেকেই। করোনাকালে চিকিৎসা সেবা চলছে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে। রোগীরা চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করছেন মোবাইল ফোনে, প্রয়োজন হলে ভিডিও মাধ্যমে হচ্ছে যোগাযোগ। প্রেসক্রিপশন প্রদান, রিপোর্ট দেখা সবই হচ্ছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে টেলিভিশন ও অনলাইনের মাধ্যমে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যন্ত ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আগেই অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে, ভর্তি ও পরীক্ষাও নেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোও যাচ্ছে এই প্রক্রিয়ায়। কেনাকাটা, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ঘরে বসে অর্ডার করলেই ই-কমার্স কোম্পানিগুলো পৌঁছে দিচ্ছে যে কোন পণ্য।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা চালুর মধ্যেই সীমিত থাকবে না। প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন ও অধিকতর উন্নত প্রযুক্তি আসবে। পুরনো পণ্যসেবাগুলোর জায়গায় হালনাগাদ পণ্যসেবা দ্রুত চালু হবে। এরই ধারাবাহিকতায় স্মার্টফোনের সক্ষমতা, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ক্লাউড কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, রিয়েল-টাইম স্পিচ রিকগনিশন, ন্যানো কম্পিউটার, ওয়্যারেবল ডিভাইস ও নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন, সাইবার সিকিউরিটি, স্মার্ট সিটিজ, ইন্টারনেট সেবা আরো উন্নত হবে। ক্লাউড কম্পিউটিং ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের বিকাশ এ দশকে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তির দিশা পুরোদমে পাল্টে দেবে। অনলাইন কার্যক্রমে এখন যেভাবে নতুন নতুন ডিভাইস, কৌশল ও প্রবণতা ব্যাপক হারে চালু ও বিকশিত হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের লাইফস্টাইলকে আমূল পাল্টে দেবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সাবেক সভাপতি মাহবুব জামান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের লাইফস্টাইলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এটা আরও পরিবর্তন হবে। মানুষ এখন ঘরে বসেই কাজ করছে, কেনাকাটা করছে। অনলাইনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। করোনার কারণে অনেক বিষয়ে যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি দেশে প্রযুক্তিখাতে নতুন একটা সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এটা ধরতে হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১১ বছর ধরে তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুপরামর্শে তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির কারণে করোনাভাইরাসের এই মহাদুর্যোগের সময় তার সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এবং মানুষকে সংযুক্ত রাখতে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের হোম ডেলিভারি , স্বাস্থ্য পরামর্শের জন্য টেলিমেডিসিনসেবা, ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম, ভিডিওকনফারেন্স, অনলাইন প্রশিক্ষণ, দূর-প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, ভিডিও স্ট্রিমিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে ই-কমার্স, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাখাত ও আবাসিক ব্যবহারকারীদের জন্য পারস্পরিক সংযুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এ কারণে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছ। সরকার সফলভাবে এ চাহিদা পূরণ করছে।
দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাস্তব সম্মত উদ্যোগের ফলে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশের প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে দেশের প্রায় চার হাজার ইউনিয়নে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে এমন কোনো ইউনিয়ন থাকবে না যেখানে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা থাকেব না। ব্যান্ডউইডথের সর্বনিম্ন মূল্য ১৮০ টাকায় নির্ধারণ, ১৫০ টাকায় বিটিসিএল ল্যান্ড ফোনে যতখুশি তত কথা বলা, লাইনরেন্ট মওকুফ এবং ৫২ পয়সা মিনিটে অন্য অপারেটরে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের কেউ পিছিয়ে থাকবে না- আমাদের কেউ অফলাইন থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।