পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়া বাবদ এক মাসে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এমন একটি তথ্য গত শনিবার বিকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার সংসদে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে চাওয়া ব্যাখ্যার জবাব দেয় ঢামেক কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, মোট দুই হাজার ৭৬ জন জনশক্তি দরকার হয় এক মাসের জন্য। তাদের থাকা খাওয়াসহ সব খরচের বাজেট এটি।
এদিকে, বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে জানান, হাসপাতালে জনপ্রতি তিনবেলা খাবার খরচ ছিল পাঁচশ টাকা। খাবার খরচ হিসেবে ২০ কোটি টাকা বলে যা প্রচার করা হচ্ছে সেটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি গত দুই মাসে এই হাসপাতালের করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদান ও চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা খাওয়ার হিসাব দেন। তিনি বলেন, ২২৭৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীদের একমাসে হোটেলে থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ হয়েছে ভ্যাট ছাড়া ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা। আর ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ খরচ পড়ে ১৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৭ টাকা। পরিচালক জানান, চিকিৎসক-নার্স-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের দুই মাস হোটেলে থেকে থাকা খাওয়া ও পরিবহনের ব্যয় ২৬ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। এর বাইরে ২২৭৬ জন জনের যাতায়াতে একমাসে খরচ হয় ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭০ টাকা। এর আগে একমাসের খরচ হিসেব করে দুই মাসের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য ও মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিল্লাল আলম বলেন, সংবাদ মাধ্যমে চিকিৎসকেরা এক মাসে ২০ কোটি টাকার খাবার খেয়েছেন এই প্রচারে হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। এটা তাদের আহত করেছে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি হয় এবং তার সঙ্গে চিকিৎসকরা যুক্ত নন জানিয়ে তিনি বলেন, এসব দুর্নীতির তদন্ত হোক।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ার বিষয়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ইনকিলাবের হাতে এসেছে আলোচিত হিসাবসহ ব্যাখ্যার কাগজের কিছু অংশ। এতে দেখা যায় ঢামেকের করোনা চিকিৎসকদের দুই মাসের যাতায়াতে ব্যবহৃত হয়েছে ১০টি ১২ সিটের মাইক্রোবাস, ১টি ১৫ সিটের মাইক্রোবাস, একটি ২৬ সিটের এসি টুরিস্ট বাস, দুইটি ৪৫ সিটের নন এসি বাস, চার রুটের চারটি বিআরটিসির ডাবল ডেকার ৭৫ সিটের নন এসি বাস। এই বাসের ভাড়া বাবদ এক মাসে ব্যয় হয় ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭০ টাকা। দুই মাসে ব্যয় হয় ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭৪০ টাকা।
অন্যদিকে, হোটেল ভাড়া ও খাওয়া বাবদ দুই মাসের ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৭ টাকা। মোট ৩০টি আবাসিক হোটেলের দৈনিক আবাসন খরচ ৬০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এখানে অনেক হোটেলেই থাকার বিলের সঙ্গে খাওয়ার বিল যুক্ত নয়।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, চিকিৎসকদের খাওয়া খরচ বাবদ যে ২০ কোটি টাকার কথা বলা হচ্ছে, সেটা কেবল খাওয়া খরচ নয়। তাদের থাকা-খাওয়া-যাতায়াত সবকিছু মিলিয়ে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাধারণ সময়ের চেয়ে চারগুণ বেশি লোকবল লাগছে। এ হাসপাতালে এখন প্রায় সাড়ে ৬০০’র বেশি করোনা রোগী আছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের যাতায়াত, আবাসন ও খাওয়া বাবদ ১৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যখন বাজেট চাওয়া হয় তখন জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো বাজেট দেওয়া হয় এবং সেটা তারা বিবেচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর অনুমোদন পায়।
এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা অনুমোদন পেয়েছি গত পরশু (২৮ জুন) রাতে। এখন হোটেল, যানবাহনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বিল পাঠিয়েছে, আমরা সেগুলো ‘স্ক্রুটিনাইজ’ করছি, চ‚ড়ান্ত হলে সেগুলো পাঠানো হবে। ২০ কোটি টাকা দেওয়া হয়নি, এটা খুবই ‘ক্লিয়ার অ্যান্ড ক্লিন’ বিষয়।
তিনি বলেন, ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবন ও পুরাতন বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটকে করোনার চিকিৎসায় ডেডিকেটেড করা হয়েছে। নতুন ভবনে এক সপ্তাহে ১১৭ জন চিকিৎসক কাজ করেন, তিন সপ্তাহে মোট ৩৫১ জন। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এক সপ্তাহে কাজ করেন ৫৩ জন চিকিৎসক, তিন সপ্তাহে সেটা হয় ১৫৯ জন। তিন সপ্তাহে এ দুই ভবন মিলিয়ে দরকার হয় ৫১০ জন চিকিৎসক। বাকি আরেক সপ্তাহে কাজ করেন ১৭০ জন চিকিৎসক। এক মাসে কাজ করেন মোট ৬৮০ জন চিকিৎসক। ৫৪ জন নার্স বার্নে কাজ করেন এক সপ্তাহে, তিন সপ্তাহে ১৬২ জন। নতুন ভবনে কাজ করেন ১৫৮ জন, তিন সপ্তাহে কাজ করেন ৪৭৪। তিন সপ্তাহে মোট কাজ করেন ৬৩৬ জন নার্স। এক মাসে মোট ৮৪৮ জন নার্স দুই ভবনে কাজ করেন। বাকি টেকনেশিয়ান, আল্ট্রাসাউন্ড, ল্যাবরেটরিসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী দরকার হয় এক সপ্তাহে ১৯ জন করে। তিন সপ্তাহে দরকার হয় ৫৭ জন। এক মাসে দরকার হয় ৭৬ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অর্থাৎ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজ করতে হয় ১৪ দিন করে। ১৫ দিনে কাজ করেন ১২০ জন, এক মাসে দরকার হয় ২৪০ জন। আবার বার্ন ইনস্টিটিউটে ১৫ দিনে ৫৮ জন করে কাজ করে। এক মাসে কাজ করেন ১১৬ জন। এক মাসে দুই ভবন মিলিয়ে কাজ করেন ৪৫৬ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। নতুন ভবনে ১৫ দিনে ৮৮ জন নিরাপত্তারক্ষী কাজ করেন, সে হিসেবে এক মাসে কাজ করেন ১৭৬ জন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ১৫ দিনে কাজ করেন ২০ জন করে, সে হিসেবে একমাসে কাজ করেন ৪০ জন। দুই ভবন মিলিয়ে এক মাসে কাজ করেন ২১৬ জন। সে হিসেবে তিন সপ্তাহে কোয়ারেন্টিনে হোটেলে থেকেছেন ৫১০ জন চিকিৎসক, ৬৩৬ জন নার্স, ৪৫৬ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনোলজিস্ট ৭৬, আর নিরাপত্তারক্ষী ২১৬ জন। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা এক হাজার ৮৯৪ জন। আর ৩৯২ জনের মতো ‘রেস্টে’ থাকেন, যারা চতুর্থ সপ্তাহে কাজ করেন। মোট দুই হাজার ৭৬ জন জনশক্তি দরকার হয় এক মাসের জন্য।
এ বাজেটে দুই মাসের জন্য এবং প্রতিদিনকার খাবারের জন্য নির্ধারিত মাত্র ৫০০ টাকা বলে নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক। তিনি বলেন, সংসদে দাড়িয়ে যেসব সংসদ সদস্য সমালোচনা করেছেন, তারা না বুঝেই করেছেন। ডাক্তারদের খাবারের বিষয়টি নিয়ে সংসদে অতিরঞ্জিত ও ব্যঙ্গ করে বলা মানানসই নয়। প্রকৃত কথা না জেনে বলাটা রুচিশীল হয়নি। অবশ্যই সংসদে এসে জাতির সামনে প্রকৃত তথ্য জেনে সমালোচনা করা উচিত বলে উল্লেখ করেন জাহিদ মালেক।
অন্যদিকে ঢামেক পরিচালক জানিয়েছেন প্রতি মাসে চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনোলজিস্ট আর নিরাপত্তারক্ষীসহ মোট দুই হাজার ৭৬ জন জনশক্তি দরকার হয়। এই দুই হাজার ৭৬ জনের প্রতিদিন খাবার বাবদ প্রয়োজন হয় ১০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। দুই মাস অর্থাৎ ৬০ দিনে এই ২০৭৬ জনের খাবার বাবদ ব্যয় ৬ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউনেডশনের (বিডিএফ) চেয়ারম্যান ডা. মো. শাহেদ রাফি পাভেল ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারির সময়েও একটি গ্রুপ স্বাস্থ্যখাতের পেছনে লেগে ষড়যন্ত্র করছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী দিনরাত পরিশ্রম করে গত কয়েক মাস থেকে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। যা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। অথচ দৈনিক চিকিৎসকদের জন্য তিন বেলা খাবারে মাত্র ৫০০ টাকার বাজেট নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। যা অনেক মানুষই এক বেলায় ব্যয় করেন। তাই করোনার সময়ে চিকিৎসক-নার্সসহ দায়িত্বপালনকারীদের খাবারের মান বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। এছাড়া দায়িত্ব পালন শেষে হোটেল থেকে হাসপাতালে যাওয়া-আসার ট্রান্সপোর্টে গাদাগাদি করে যেতে হয়। যা খুবই অমানবিক। এক্ষেত্রে ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা বাড়ানোরও কথা বলেন ডা. মো. শাহেদ রাফি পাভেল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইনকিলাবকে বলেন, একটি মহল স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক জাতির সামনে সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। চিকিৎসক ও বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে মিথ্যাচার করছে একটি মহল। তারা দেশের এই ক্রান্তিকালে যার প্রজ্ঞা, মেধা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে করোনা সঙ্কটেও দেশ স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভুল বুঝিয়েছে। পাশাপাশি সংসদে একাধিক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীর মুখ থেকে জাতি যা আশা করেনি সংসদে তা উপস্থাপন করেছে। যা মহান সংসদের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করেছে বলে অভিমত দেন এই বিশেষজ্ঞ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।