পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমি কেবিনে ছিলাম। ভেতরে দুই মামা ছিলেন। তারা তো বের হতে পারেন নি। তাদের খোঁজ করছি।’ বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রী মো. মাসুদ গতকাল কান্না জড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন। শুধু মাসুদই নয়, রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে স্বজনদের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবার কেউ কেউ নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে নিহত স্বজনদের লাশ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। নিহতদের স্বজনের কান্নার রোলে ভারী হয়ে উঠে বুড়িগঙ্গার আকাশ-বাতাস। গতকাল শ্যামবাজার এলাকা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
এর আগে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে শ্যামবাজার এলাকা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ রুটের মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় গতকাল বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে আর কত জনের লাশ নিখোঁজ রয়েছে তা এখনো অজানা। লাশ উদ্ধারের পর কেউ কেউ প্রিয়জনের লাশ শনাক্ত করেন। তবে বেশিরভাগই এখন পর্যন্ত স্বজনদের লাশ খুঁজে পাননি।
যেভাবে ডুবে যায় লঞ্চটি : মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা দুইতলা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাট কাঠপট্টি ঘাটে ভেড়ানোর আগ মুহূর্তে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চটি ধাক্কা দেয়। এ সময় সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলক ছোট মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। তবে ডুবে যাওয়া লঞ্চে কতজন যাত্রী ছিলেন তা জানা যায়নি। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি থেকে কয়েকজন যাত্রী সাঁতরে পাড়ে উঠলেও বাকিরা নিখোঁজ ছিলেন।
জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রীর বর্ণনা : বুড়িগঙ্গা নদীতে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রী মো. মাসুদ। তিনি বলেন, ঘাটে ভেড়ার জন্য আমাদের লঞ্চ (মর্নিং বার্ড) সোজা আসছিল। অন্য একটা লঞ্চ ত্যাছড়াভাবে (বাঁকা) রওনা দিয়েছে। ত্যাছড়াভাবে রওনা দেয়াতে ওই লঞ্চটা ধাক্কা দিয়েছে আমাদের লঞ্চের মাঝে। ধাক্কা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটা কাইত হয়ে ডুবে গেছে। তলায় যেতে ১০ সেকেন্ডও সময় নেয়নি। আমি কেবিনে ছিলাম। গ্লাস খুলে আমি বের হইছি। ভেতরে আমার আপন দুই মামা ছিলেন। তারা তো বের হতে পারেন নি। তাদের খোঁজ করছি। তার নিখোঁজ থাকা দুই মামা হলেন- আফজাল শেখ ও বাচ্চু শেখ। দুর্ঘটনার পর লঞ্চে থাকা ৫০ জনের মত যাত্রী সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারছি। বাকি যাত্রী কেউ উঠতে পারেনি। প্রায় ১৫০ জনের মতো লোক ছিলাম।
জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, র্যাব সদস্যরা যৌথভাবে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৩১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। বাকিদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার। তিনি জানান, উদ্ধার হওযা লাশগুলোর মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, আট জন নারী ও তিনটি শিশু রয়েছেন। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়াতে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর বা পরিচয় প্রকাশ করেনি বলে জানান তিনি।
লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা : উদ্ধার কাজ সমাপ্তি হওয়াতে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। তাই প্রিয়জনের লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। আবার অনেকেই বুঝতে পারছেন না তাদের স্বজন উদ্ধার হয়েছে কি না। মুন্সীগঞ্জের শাকিল নামের একজন জানান, ইতোমধ্যে ভাগিনার লাশ শনাক্ত করেছি। ভাগিনা নিয়মিত মুন্সীগঞ্জ থেকে ইসলামপুরে আসত। আরো অনেকেই তাদের স্বজনদের লাশ শনাক্ত করেছেন। পরশ আলী নামের এক ব্যক্তি জানান, দুর্ঘটনায় তার ভাই নিখোঁজ ছিলেন। পরে উদ্ধারকৃত লাশগুলো থেকে তার ভাই সুমন তালুকদারকে শনাক্ত করেন তিনি।
মো. সেলিম নামের এক ব্যক্তি জানান, তার ভগ্নিপতির নাম মনির হোসেন। বয়স ৫০ বছরের মতো হবে। লঞ্চে করে তিনি ঢাকায় আসছিলেন। লঞ্চ ডুবির পর থেকে তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। সকাল থেকে তার ফোন বন্ধ।
উদ্ধার কাজে যোগ দিতে পারেনি জাহাজ প্রত্যয় : বুড়িগঙ্গা নদীতে যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় উদ্ধার কাজে যোগ দেয়ার কথা ছিল উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজটি ঘটনাস্থলে আসার পথে পোস্তগোলা ব্রিজের নিচে আটকে যায়। নদীর পানির উচ্চতা বেশি হওয়ায় জাহাজটি আসতে পারেনি। তবে উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে না আসায় সনাতন পদ্ধতিতে উদ্ধার কার্যক্রম চলানো হয়।
তদন্তে কমিটি গঠন : লঞ্চডুবির ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গতকাল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) মো. রফিকুল ইসলাম খানকে আহবায়ক এবং বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌনিরাপত্তা) মো. রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। একই ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
ঘটনাস্থলে র্যাবের হেলিকপ্টার : গতকাল লঞ্চডুবির ঘটনাস্থলে র্যাব হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার জানান, উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করার জন্য র্যাবের হেলিকপ্টর ঘটনাস্থলে আনা হয়। এ সময় উদ্ধার কাজে র্যাব সদস্যরাও সহযোগিতা করেন।
লাশবাহী নৌকার চারপাশে ছোট নৌকার ভিড় : ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রীদের লাশ উদ্ধার করে মাঝ নদীতে ফায়ার সার্ভিসের একটি বড় নৌকায় রাখা হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের সেই বড় নৌকার চারপাশে ছোট ছোট নৌকা ভিড় করে। লঞ্চে নিখোঁজদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের লাশ শনাক্ত করতে বা খুঁজে পেতে এখানে অবস্থান করেন। ফায়ার সার্ভিসের মাইকিং না শুনে নৌকার চারদিকে কান্নাকাটি করতে দেখা যায় স্বজনদের।
উদ্ধার তৎপরতার খোঁজখবর নিলেন প্রধানমন্ত্রী : যাত্রীবাহী লঞ্চডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন তিনি। একইসঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি। এছাড়াও উদ্ধার তৎপরতার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
লঞ্চটি উল্টে আছে নদীর তলদেশে : বুড়িগঙ্গা নদীর তল দেশে লঞ্চটি উল্টে আছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া ডুবুরিরা। তবে সেখানে কত জনের লাশ আছে তা বলতে পারেনি তারা। গতকাল বিকেলে ডুবুুরি জাহাঙ্গীর আলম শিকদার জানান, সকাল ১০টা থেকে তিনি উদ্ধার কাজ শুরু করেন। বিকেল পর্যন্ত তিনি ওই লঞ্চ থেকে ৯টি লাশ উদ্ধার করেন। তিনি আরো জানান, লঞ্চটি ৬০-৭০ ফুট পানির নিচে উল্টে হয়ে আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।