Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোনভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়- ডা. মোশতাক হোসেন

করোনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করলো সরকার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা আর বিনামূল্যে করা যাবে না। বুথে নমুনা দিলে ২০০ টাকা আর বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে হলে ফি লাগবে ৫০০ টাকা। সরকার বলছে, বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার সুযোগ থাকায় উপসর্গহীন ব্যক্তিরা এ পরীক্ষার সুযোগ নিচ্ছেন বলেই সরকার এ পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণ করেছে। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ অধিশাখা থেকে গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। উপ সচিব ড. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, এখন থেকে বুথে গিয়ে করোনা শনাক্তের পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলে ফি দিতে হবে ২০০ টাকা। আর বাসায় গিয়ে কারও নমুনা সংগ্রহ করতে হলে সেক্ষেত্রে ৫০০ টাকা ফি লাগবে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর নমুনা পরীক্ষাতেও খরচ হবে ২০০ টাকা। সরকারি সব হাসপাতালের জন্য এ ফি প্রযোজ্য হবে।
‘কোভিড-১৯ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ইউজার ফি’র হার নির্ধারণ’ শিরোনামের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আরটি-পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নির্ণয় করা হয়। বর্তমানে এ পরীক্ষা সরকার বিনামূল্যে করার সুযোগ দিচ্ছে। ফলে কোনো উপসর্গ ছাড়াই অধিকাংশ মানুষ এ পরীক্ষা করানোর সুযোগ গ্রহণ করছেন। এ অবস্থায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য অপ্রয়োজনীয় টেস্ট পরিহার করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের গত ১৫ জুনের এক স্মারকের সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ফি নির্ধারণ করা হলো। আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য আদায় করা অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে। ‘চিকিৎসা সুবিধা বিধিমালা ১৯৭৪’-এর আওতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত সব সুযোগ-সুবিধা বহাল থাকবে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, দুঃস্থ ও গরীব রোগীদের চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত সরকারি আদেশ বহাল থাকবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে^ কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে।
এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআর এর প্রাক্তন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, চিকিৎসার ব্যয় বৃদ্ধি এবং পরীক্ষার ফি নির্ধারণ মহামারি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে কোনভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। এই সময় উচিৎ সম্পূর্ণ বিনা খরচে রোগীদের সেবা দেয়া। তাছাড়া রাষ্ট্র দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এসব সিদ্ধান্তে মহামারি বিলম্বিত ও দীর্ঘায়িত হবে। তিনি বলেন, এতে বলা হয়েছে এটা অপব্যবহার রোধে করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় সেটি করা সম্ভব নয়। এতে শুধু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ন্যূনতম অধিকার খর্ব করা হলো।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপ্রয়োজনীয় টেস্ট পরিহার করতেই সরকার এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষের পরীক্ষার সুযোগ আরও সংকুচিত হলো। এমনিতে একবার পরীক্ষা করাতে তাদের দীর্ঘ লাইন ধরে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। তাছাড়া কয়েটি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষা ব্যবস্থা অনলাইনে নিয়ে আসায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠি পক্ষে সেখানে সুযোগ নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে যাদের টাকা এবং ক্ষমতা আছে তারা এখনো একাধিক বার পরীক্ষা করছে, দুশ’ টাকা ফি দিয়েও করতে পারবে। এই ফি ক্ষমতাবানদের প্রভাব কাটানোয় কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তাছাড়া একটি পরীক্ষায় সরকারের ব্যয় হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা, সেখানে মাত্র দু’শ টাকা নিয়ে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোন আয় হবে না।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, শুধুমাত্র সুব্যবস্থাপনার অভাব বাড়ছে করোনা চিকিৎসার ব্যয়। একই মানুষ একাধিকবার পরীক্ষা করছে, আবার অনেকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও পরীক্ষা করাতে পারছে না। তারা বলেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণ প্রথমেই আমাদের প্রস্তাব ছিল হাসপাতালে ট্রায়জ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কিন্তু স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সেটি করেনি। যদি ট্রায়জ নিশ্চিত হতো তাহলে, হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের মধ্য থেকেই কোভিড নন-কোভিড আলাদা করা হতো। শুধুমাত্র উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হতো এবং চিকিৎসা প্রদান করা হতো। এতে মানুষের বিড়ম্বনা এবং চিকিৎসা ব্যয় দুটোই নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
এসব বিষয়ে গণস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ডা. ফজুল হাকিম বলেন, কোভিড নমুনা পরীক্ষার ফিস নির্ধারণ একটি অমানবিক কাজ। মহামারিকালীন সময়ে এসব রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। দেশের মানুষ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। কারণ মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এখন মানুষদের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে সরকার জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন করছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ