Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতারক স্বামীর কাছে হেরে গেলো কুমারখালীর রিশিতা!

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২০, ৮:০২ পিএম

‘আপনার মেয়ে (ইশিতা) আমার ঘাড়ের বোঝা হয়ে গেছে। তাই আপনার মেয়েকে দিলে একেবারেই দিয়ে দিব’- কথাগুলো রিশিতার মা জলি খাতুনকে মৃত্যৃর ঠিক একদিন আগে মোবাইল ফোনকলে বলেছিল জামাই রাকিবুল ইসলাম রকি। অথচ সাতমাস আগেও রিশিতার প্রতি কী ভালোবাসাটাই না জমেছিল প্রতারক রাকিবুলের হৃদয়-মননে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রিশিতা। এ সময় উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা থাকলেও সহপাঠি রাকিবুল ইসলামের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কিশোরী রিশিতার। বয়:সন্ধিকালের আবেগ ধরে রাখতে না পেরে তাদের গোপন প্রেমের কথা বন্ধু ভেবে মাকে জানায় রিশিতা। তাদের বিয়ের জন্যও মাকে চাপ দেয়। প্রথমে মা বোঝানোর চেষ্টা করলেও অবুঝ রিশিতার পাথররূপী মন থেকে যেন প্রতিবিম্ব হয়ে ফিরে আসে মায়ের কথাগুলো।

এদিকে, বিয়ের জন্য রিশিতাকে একপ্রকার মানসিক চাপে ফেলে প্রেমিক কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের উত্তর মূলগ্রামের গাফ্ফার মোল্লার ছেলে রাকিবুল। অনেকটা ছেলে পক্ষের চাপাচাপিতেই রিশিতা-রাকিবুলের প্রেম পরিণত হয় শুভ পরিণয়ে। অবশেষে দুই পরিবারের মতেই দেওয়া হয় বিয়ে।

শ্বশুর-শ্বাশুরিকে নিয়ে ভালোই চলছিল রিশিতা-রাকিবুলের ছোট্ট সংসার। এর মাঝে ঘষেটি বেগম হয়ে আর্বিভূত হয় ভাসুর শরীফুল ও তার বউ সীমা! রিশিতার ওপর শ্বশুর-শ্বাশুরির অতিরিক্ত আদর সহ্য হচ্ছিল না শরীফ-সীমা দম্পতির। জের- বিয়ের একমাসের মধ্যেই অশান্তি সৃষ্টি হয় রিশিতার সংসারে।

অনুসন্ধানে এমনটিই উঠে আসে কিশোরী গৃহবধু রিশিতার রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে এক অনুসন্ধানে।

এদিকে মৃত্যুর শুরু থেকেই বলে রিশিতার পরিবার বলে আসছে- এটি আত্নহত্যা নয়- এটি পরিকল্পিত হত্যা। তাদের মেয়েকে নির্যাতন করে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের উত্তর মুলগ্রামে। নিহত কিশোরীর বাবা রিকু পারভেজ একই উপজেলার কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

রিশিতার বাবা রিকু পারভেজ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) মেয়ে আমাকে ফোন দিয়ে তার শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনের কথা বলে এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে নিয়ে আসতে বলে। পরে শুক্রবার (১৯ জুন) নববধূর মা শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়েকে আনতে গেলে মেয়ের শ্বশুর গাফফার মোল্লা ২/৩ দিন পর মেয়েকে দিয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দেন।’

রিশিতার মা জলি খাতুন বলেন, ‘ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকালে জামাই রাকিবুল রিশিতাকে মারপিট করে। মারপিটের এক পর্যায়ে কিশোরী রিশিতা আমার বাড়িতে চলে আসার জন্য পাথরবাড়িয়া কবরস্থান পর্যন্ত চলেও আসে। কিন্তু রাকিবুল ও তার ভাই শরিফুল পথের মাঝ থেকে তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। তাকে পুণরায় শারীরিক নির্যাতন করে এবং হত্যা করে ঘরের আড়ার কাঠের সাথে ঝুলিয়ে রাখে।’

তবে মৃত্যুর দিন শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসার চেষ্টাকে অস্বীকার করেন রাকিবুলের চাচাতো ভাই মিজানুর রহমান।

রিশিতার মায়ের বক্তব্যের সত্যতা জানতে রাকিবুলের বাড়িতে যাওয়ার সাথেই সাথেই এই প্রতিবেদককে দেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় রাকিবুলের বড়ভাই শরীফুল ও তার স্ত্রী সীমা খাতুন। পেছন থেকে জোরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ফিরে আসতে বললেও তারা পাশের পাটক্ষেতের মধ্য দিয়ে পালিয়ে যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ