পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার বর্তমান পেক্ষাপটে স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষ করে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতের চ্যালেঞ্জ অনেকগুনে বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু দু’টিই উর্ধ্বোমুখী হওয়ায় স্বাস্থ্য এবং ওয়াশ খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দের বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেয়েছে। বর্তমান অবস্থায় দেশের পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন পরিস্থিতির উন্নয়নের বিষয়টিও আরো জরুরিভাবে সামনে এসেছে। তবে, প্রস্তাবিত বাজেটে এ চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়গুলো বিবেচিত হয় নি।
করোনা মোকাবিলায় এবং টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) অর্জনের পথ সুগম করতে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যবিধি আচরণের উন্নয়ন বা হাইজিন খাতের উপ-খাতগুলোর বরাদ্দ অপর্যাপ্ত বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়াটারএইড, ইউনিসেফ, পিপিআরসি, ফানসা-বিডি, ডব্লিউএসএসসিসি-বি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্সের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে আলোচকরা এ কথা জানান। তারা বলেন, এ খাতে যথাযথ অর্থ বরাদ্দ করা না হলে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।
করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি প্রতিরোধে বর্তমানে বাংলাদেশ এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। এ প্রতিকূল সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব, বৈদেশিক বাণিজ্য ও প্রবাসী আয়ের হার হ্রাস হওয়ার বিষয়টি বাজেট প্রণয়নসহ করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাত ও হাইজিন বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মকা-ের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং এ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। বৈশ্বিক মহামারির এ সময়ে বাজেটে মহামারি নিয়ে যথাযথ আর্থিক বরাদ্দসহ বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন জরুরি হলেও ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি জীবন ও জীবিকার ক্ষতির বিষয়ে সরকারের কৌশলগত বিষয়গুলো সেভাবে উঠে আসেনি। ২০২০-২০২১ সালের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রেও অপ্রতুল। পিপিআরসি পরিচালিত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ওয়াশ খাতের বরাদ্দের বিশ্লেষণে বিষয়গুলি উঠে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে পিপিআরসি পরিচালিত গবেষণায় ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ও উর্ধ্বমুখী প্রবণতা প্রতিফলিত হলেও স্বাস্থ্যবিধি আচরণের উন্নয়ন বা হাইজিন খাত গুরুত্ব পায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়াশ খাতে বরাদ্দ গত বছর ১০৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন টাকা থেকে বেড়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১২২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন টাকায় উন্নিত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। তবে, বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে হাইজিন খাতে কম অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টিও লক্ষণীয়। প্রস্তাবিত ওয়াশ বাজেটে হাইজিন খাতের উপ-খাতে ৫ শতাংশেরও কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে; এবারও এ খাতে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শহরকেন্দ্রিকতার বিষয়টি অপরিবর্তিত রয়েছে।
নগর ও গ্রামীণ এলাকার মধ্যকার বরাদ্দের ক্ষেত্রে অসমতা বিরাজমান আছে। চারটি ওয়াসা এবং ১১টি সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শহর ও এলাকাগুলো ধারাবাহিকভাবে এ খাতের জন্য অধিকাংশ বরাদ্দ পাচ্ছে; যদিও গ্রামীণ এলাকা, চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে এর প্রয়োজনীয়তা অধিক। বিশ্লেষণে বিগত বছরগুলোতে নগর ও গ্রামীণ এলাকায় এ খাতের বরাদ্দ সংক্রান্ত তফাতের বিষয়টিও উঠে এসেছে। গত পাঁচ বছরের সময়কালে এ খাতে শহর (৮০ শতাংশ-৮৩ শতাংশ) ও গ্রামীণ (২০ শতাংশ-১৭ শতাংশ) এলাকার বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সুপারিশে বলেন, চলতি মাসের শুরুতে এ নেটওয়ার্ক থেকে সুপারিশকৃত বিষয়গুলো তাৎক্ষণিকভাবে আমলে নেয়া জরুরি এবং এর পাশাপাশি হাইজিনকে জনস্বাস্থ্য ও বৈশ্বিক মহামারি প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন এবং দেশজুড়ে হাইজিন ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন এবং জনপরিসরে হাত ধোয়ার স্থাপনা বসানোও জরুরি, যেখানে সাবান ও পানির ব্যবস্থা থাকবে।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে রাখা ১০০ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা শহর ও বস্তি এলাকাগুলোতে হাত ধোয়ার স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দরিদ্র জনগণকে হাইজিন সুবিধা প্রদান করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।